ইগর স্তিমাচ। —ফাইল চিত্র।
ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে পাঁচ বছর কাজ করেছেন ইগর স্তিমাচ। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিতেই চাকরি যায় তাঁর। এর পর থেকেই ভারতীয় ফুটবল নিয়ে মুখ খুলছেন স্তিমাচ। শুক্রবার দুপুরে সব কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকিও দিলেন বরখাস্ত কোচ।
স্তিমাচ ফুটবলারদের কোনও দোষ দেননি। সুনীল ছেত্রীরা মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটাই দেন বলে দাবি সদ্য বরখাস্ত কোচের। সমাজমাধ্যমে বার বার নিজেকে ভারতীয় বলে দাবি করা স্তিমাচের অভিযোগ ফুটবল কর্তাদের দিকে। যাঁদের তিনি ‘অফিসের চেয়ারে বসে থাকা লোক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১.২৪ মিনিটে একটি পোস্ট করেন স্তিমাচ। সেখানে তিনি লেখেন, “নমস্কার ভারতের সাংবাদিক বন্ধুরা, আমি জানি আপনারাও আমার মতো ভারতীয় ফুটবল নিয়ে চিন্তিত, বিরক্ত এবং উদ্বিগ্ন। গত কয়েক মাসে যা দেখেছেন, তাতে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। আপনাদের জানা উচিত কী কী কারণে ভারতীয় ফুটবলের এই অবস্থা। আমিও ভারতীয়। যে ভাবে ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি করা সম্ভব, সে ভাবে করব। শেষ বারের মতো একটা আড্ডায় বসা যাক। শুক্রবার দুপুর ২টোর সময় সব ফাঁস হয়ে যাক। জয় হিন্দ।”
এই প্রথম নয়, স্তিমাচ বুধবারও ভারতীয় ফুটবল নিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “ভারতীয় ফুটবলের সকল সমর্থক এবং ফুটবলার, পাঁচ বছর ধরে আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে গর্বিত। কোনও দেশের সঙ্গে এত ভাল সম্পর্ক হবে ভাবিনি। যখন প্রথম বার এখানে এসেছিলাম, ভাবিনি এত ভাল যোগাযোগ তৈরি হবে। এই দেশের ফুটবলারদের নিয়ে আমি গর্বিত। সকলকে নিয়ে আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে পারি যা শারীরিক এবং মানসিক ভাবে আমাদের বিশ্বাস তৈরি করতে পারবে। এটা করার জন্য সাহস এবং পরিশ্রম লাগে। শুধু আমি নই, গোটা দেশ জানে মাঠে নেমে তোমরা কেমন ফুটবল খেলতে পারো এবং তোমাদের মধ্যে কতটা ক্ষমতা আছে। পরের ধাপে ওঠার থেকে আমরা এক পা দূরে রয়েছি। কিন্তু সেই ধাপ ওঠার জন্য সকলকে এক রকম ভাবে চিন্তা করতে হবে। শুধু ফুটবলারেরা নয়, সাপোর্ট স্টাফ এবং অফিসে বসে থাকা লোকদেরও একই ভাবে ভাবতে হবে।”
২০২২ সালে ভারতীয় ফুটবলকে নির্বাসিত করেছিল ফিফা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। সেই কথাও উল্লেখ করেছেন স্তিমাচ। তিনি বলেন, “আমরা ফিফার নির্বাসন থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। অতিমারির পর আমরা দু’বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছি, ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ এবং ত্রিদেশীয় প্রতিযোগিতায় জিতেছি। ভারতকে আবার ক্রমতালিকায় ১০০-র মধ্যে ফিরিয়ে এনেছি। শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পেরেছি। খেলায় হারজিত থাকে। কিন্তু তোমরা সকলে আমার হৃদয়ে থাকবে। পাঁচ বছরে অনেক ভাল সময় কাটিয়েছি।”
২০১৯ সালে ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন স্তিমাচ। গত অক্টোবরে তাঁর সঙ্গে ২০২৬ সালের মে মাস পর্যন্ত চুক্তি বৃদ্ধি করেছিল এআইএফএফ। মাঝপথে বরখাস্ত করার জন্য ফেডারেশন স্তিমাচকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৭৫ লাখ টাকা (তিন মাসের বেতন) দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু এই প্রস্তাবে রাজি নন স্তিমাচ। সূত্রের খবর, চুক্তি অনুযায়ী মাঝপথে ছাঁটাই করা হলে ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। ক্ষতিপূরণের অঙ্কের পার্থক্য নিয়েই বিদায়বেলায় ফেডারেশনের সঙ্গে আইনি সংঘাতে যেতে পারেন স্তিমাচ।
ভারত-কাতার ম্যাচের পর স্তিমাচ ফিরে গিয়েছেন নিজের দেশে। সেখান থেকে তিনি সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ‘‘বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমার আইনজীবী মুখ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ভাবে কিছু বলব না। আমাকে ভারতে সাংবাদিক বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলে নিজের কথা বলতে পারি।’’