মোহনবাগান মাঠে সবুজ-মেরুন জার্সিতে এমিলিয়ানো মার্তিনেস। ছবি: ফেসবুক।
মাত্র কয়েক ঘণ্টায় কলকাতাবাসীর মন জয় করে নিলেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। মিলনমেলা প্রাঙ্গণ থেকে মোহনবাগান মাঠ, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষককে দেখতে ভিড় উপচে পড়েছিল। দর্শকদের নিরাশ করেননি মার্তিনেস। নিজের জীবনের লড়াইয়ের কথা শুনিয়েছেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন। যাওয়ার সময় মোহনবাগান মাঠে দাঁড়িয়ে বলে গিয়েছেন, এটাই তাঁর শেষ কলকাতা আসা নয়। আগামী দিনেও তিনি কলকাতায় আসবেন। শুধু আসবেন নয়, আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলবেন। তা-ও আবার লিয়োনেল মেসির সঙ্গে।
মিলনমেলার অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা
মঙ্গলবার প্রথমে মিলনমেলা প্রাঙ্গণে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মার্তিনেস। তাঁর আসার অনেক আগেই ভিড় জমেছিল সেখানে। মার্তিনেস মঞ্চে ওঠার পরে তাঁর ছবি তোলার জন্য এগোতে থাকেন দর্শকেরা। তাতেই ব্যারিকেড ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। প্রায় ২০ মিনিট পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। মঞ্চেও বিশৃঙ্খলা হয়। অলোক মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ নন্দী, হেমন্ত ডোরার মতো প্রাক্তন ফুটবলারেরা মার্তিনেসের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য মঞ্চে উঠে পড়েন। অনেকের সঙ্গে স্ত্রী-সন্তানেরাও ছিলেন। উদ্যোক্তাদের তরফে বার বার তাঁদের নামতে অনুরোধ করা হলেও তাঁরা সেটা শোনেননি। মঞ্চের সামনে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। ব্যারিকেড টপকে অনেকে ঢুকে পড়তে থাকেন। বিশৃঙ্খলার জন্য উদ্যোক্তাদেরই দায়ী করেছেন সেখানে থাকা পুলিশকর্মীরা। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক শতদ্রু দত্তের কোনও বক্তব্য এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে উপস্থিত অন্য কর্তারা বিশৃঙ্খলার কথা মানতে চাননি। তাঁদের দাবি, পুলিশ পরিস্থিতি ভাল ভাবে সামলেছে।
দুই প্রধানের লোগো বিভ্রাট
মিলনমেলার অনুষ্ঠানে লোগো বিভ্রাট হয় মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের। প্রথমেই ইস্টবেঙ্গলের কর্তারা মার্তিনেসকে সংবর্ধনা জানান। ইস্টবেঙ্গলের জার্সি পরেন মার্তিনেস। মুখে বলেন, ‘‘জয় ইস্টবেঙ্গল।’’ পরে মোহনবাগান কর্তারাও তাঁকে সংবর্ধনা দেন। সেখানে উদ্যোক্তাদের একটি ভুল চোখে পড়ে। ইস্টবেঙ্গল জার্সির লোগোতে ‘এসসি’ ও মোহনবাগান জার্সির লোগোতে ‘এটিকে’ লেখা ছিল। শুধু জার্সিই নয়, পরে যখন মঞ্চের পিছনে পর্দায় দুই প্রধানের নাম ফুটে ওঠে সেখানেও ভুল লোগো ছিল।
‘আর মেসি হবে না’
কলকাতায় এসে মার্তিনেস জানিয়ে দিলেন ভবিষ্যতে আর কেউ মেসি হবেন না। মিলনমেলা প্রাঙ্গণে একটি আলাপচারিতায় মার্তিনেস বলেন, ‘‘মেসি বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার। মেসি এক জনই। ভবিষ্যতে আর কোনও মেসি তৈরি হবে না। আমি ভাগ্যবান যে মেসির সঙ্গে খেলি।’’ মার্তিনেসের চোখে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো শুধুই এক জন ফুটবলার। তার বেশি নয়। মেসি-রোনাল্ডোর মধ্যে মেসিকে অনেক এগিয়ে রেখেছেন তিনি। কাতারে আর্জেন্টিনার ফুটবলারদের একটিই লক্ষ্য ছিল, মেসির জন্য কাপ জেতা। সেই কারণে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরে গেলেও তাঁদের বিশ্বাস ছিল যে তাঁরা জিতবেন।
মোহনবাগানে মার্তিনেস-বরণ
বিকালে মোহনবাগান ক্লাবে আসেন মার্তিনেস। সোজা ক্লাব তাঁবুতে চলে যান তিনি। সেখানে ১০ জনের হাতে মোহনবাগানের সদস্যপদ তুলে দেন। মোহনবাগানের জার্সি পরেন তিনি। মার্তিনেসের হাতে রসগোল্লার হাঁড়ি তুলে দেওয়া হয়। তিনি কিছু ক্ষণ স্পোর্টস লাইব্রেরি ঘুরে দেখেন। ক্লাবের রেজিস্টারে সই করেন মার্তিনেস। তার পরে একটি হুডখোলা গাড়িতে করে মোহনবাগান মাঠে ঘোরানো হয় তাঁকে।
উৎসব সবুজ-মেরুনে
মার্তিনেস আসায় অনেক দিন পরে গমগম করেছে ময়দান। দুপুর থেকেই ক্লাবে ভিড় করতে থাকেন সমর্থকেরা। মার্তিনেস ক্লাবে ঢোকার পরেই সবুজ-মেরুন আবির উড়তে থাকে বাতাসে। ফুল ছেটানো হয়। মাঠে ব্যান্ড বাজতে থাকে। দর্শকেরা বরণ করে নেন মার্তিনেসকে।
মেসির সঙ্গে কলকাতায় খেলার প্রতিশ্রুতি
বিশ্বকাপ জেতার পরে কলকাতায় এসেছেন মার্তিনেস। শহরে আর্জেন্টিনার প্রতি যে সমর্থন তা দেখে অবাক হয়েছেন তিনি। তাই ঠিক করেছেন আবার ফিরবেন। মার্তিনেস বলেন, ‘‘আমি আবার আসব। মেসির সঙ্গে এসে আর্জেন্টিনার জার্সিতে কলকাতায় খেলব।’’
প্রশ্নের মুখে মার্তিনেস
মোহনবাগান ক্লাবে মার্তিনেসকে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়। তার জবাবও দিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো গোলরক্ষক। তিনি মেসির পেনাল্টি বাঁচিয়েছেন কি না সেই প্রশ্নের জবাবে মার্তিনেস বলেন, ‘‘বাঁচিয়েছি। অনুশীলনে। তবে যা বাঁচিয়েছি তার থেকে বেশি গোল দিয়েছে ও। বিশ্বের সেরা ফুটবলারের পেনাল্টি বাঁচিয়েছি বলেই তো সফল হতে পেরেছি।’’ পরের লক্ষ্য কী, তার জবাবও দিয়েছেন তিনি। মেসির সতীর্থ বলেন, ‘‘সামনেই কোপা আমেরিকা। আগে সেটা জিততে চাই। তার পরে আবার বিশ্বকাপ জিততে চাই।’’ কিন্তু পরের বিশ্বকাপে হয়তো মেসিকে পাবে না আর্জেন্টিনা। তাতে সমস্যা হবে না বলেই জানিয়েছেন মার্তিনেস। বলেন, ‘‘আমাদের দলে সবাই বাঘের বাচ্চা। তাই কোনও অসুবিধা হবে না। আমরা আবার বিশ্বকাপ জিততে তৈরি।’’