সন্তোষ ট্রফিজয়ী বাংলার ফুটবল দলকে ভবানীপুর ক্লাবের সংবর্ধনা। ছবি: সংগৃহীত।
শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামী, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, কৃশানু দে, মহম্মদ নবি থেকে এখনকার শুভাসিস বসু বা প্রীতম কোটাল। কলকাতা ময়দান জানে এমনই অসংখ্য বাঙালি ফুটবলারের সংগ্রামের কাহিনি। যাঁরা ক্লাবের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজ্যকে এবং দেশকেও গর্বিত করেছেন। অথচ এখন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের দ্বিতীয় দলেও বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা হাতে গোনা। ময়দানের অন্য ক্লাবগুলিতেও ভিন রাজ্যের ফুটবলারদের ভিড়। কলকাতা লিগে দিন দিন কমছে বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা। যা নিয়ে খানিকটা উদ্বিগ্ন রাজ্যের ক্রাড়ীমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
ভবানীপুর ক্লাব আয়োজিত সন্তোষ ট্রফিজয়ী বাংলার ফুটবল দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেললেন মন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রথম হওয়া সহজ। কিন্তু প্রথম স্থান ধরে রাখা কঠিন। গুরুত্বপূর্ণ হল, পরবর্তী পরিচর্যাটা। আমরা যদি পরের বার, তার পরের বার, তারও পরের বার চ্যাম্পিয়ন হতে চাই, তা হলে আমাদের বাঙালি ফুটবলার তুলে আনতে হবে। যত দিন না ভারতীয় টিমে বাংলার সাত জন প্লেয়ার থাকবে, তত দিন ভারতীয় ফুটবল এগোবে না। কিন্তু সমস্যা হল, কলকাতা লিগে এগারো জন ফুটবলারের মধ্যে সাত জন বাইরের খেলোয়াড় খেলে। তা হলে কী করে উন্নতি হবে? আইএফএ-কে বলব, কলকাতা লিগ আপনারা যে রকম বিদেশি মুক্ত করেছেন, তেমনই কলকাতা লিগে শুধুমাত্র বাংলার ফুটবলার খেলানোর বন্দোবস্ত করুন।’’
ক্রীড়ামন্ত্রীর এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেননি আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা আগেই এটা করার চেষ্টা করেছিলাম। তখন তীব্র বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল আমাদের। বিভিন্ন ক্লাবের আপত্তি ছিল। ক্লাবগুলোকে বাদ দিয়ে তো আইএফএ চলতে পারে না। ক্রীড়ামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, ওঁর অফিসে কলকাতা লিগের ক্লাবগুলির কর্তাদের ডেকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য। বাংলার ছেলেরা বেশি খেলার সুযোগ পাক সেটা আমরাও চাই।’’ আইএফএ সচিব আরও বলেছেন, ‘‘এক বারে হয়তো পুরোটা করা যাবে না। ধীরে ধীরে করতে হবে। কারণ কলকাতা লিগ আকর্ষণ হারালেও অন্য সমস্যা হতে পারে। স্পনসরেরা মুখ ফিরিয়ে নিলে আইএফএ আর্থিক দিক থেকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। তা ছাড়া, প্রতিযোগিতা কঠিন হলে খেলার মান বাড়ে। এটাও মাথায় রাখা দরকার।’’
এই নিয়ে ৩৩ বার সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলা। চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলারদের বুধবারই রাজ্য সরকারের তরফ থেকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। দল শহরে ফেরার পর নবান্নে ফুটবলারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখনই তিনি ক্রীড়ামন্ত্রী এবং সরকারি আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলারদের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে। সেই মতো ২২জন ফুটবলারের মধ্যে ২১জনকে কলকাতা পুলিশের এএসআই পদে নিয়োগ করা হল। এক জন রাজ্য সরকারের চাকরি নেননি। তিনি আগে থেকেই অন্য একটি চাকরি করেন।
ভবানীপুর ক্লাবের অনুষ্ঠান ছিল ছিমছাম অথচ আন্তরিক। ক্রীড়ামন্ত্রী, আইএফএ সচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভবানীপুর ক্লাবের কর্ণধার স্বপনসাধন (টুটু) বোস, প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য, শিশির ঘোষ, কম্পটন দত্ত, অতনু ভট্টাচার্য, দেবজিৎ ঘোষ, শিল্টন পাল, মোহনবাগান সহ-সভাপতি কুণাল ঘোষ, আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, মহামেডান সচিব ইস্তিয়াক আহমেদ রাজু, কার্যনির্বাহী সভাপতি কামারউদ্দিন প্রমুখ। ভবানীপুর ক্লাব কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে চ্যাম্পিয়ন বাংলা দলকে তিন লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। কোচ-ফুটবলারদের প্রত্যেককে দেওয়া হয় ঘড়িও। সন্তোষ জয়ী কোচ সঞ্জয় সেন বলেন, ‘‘আমি শুধু নিজের কাজটা সৎভাবে করেছি। আমি মনে করি, সৎভাবে কাজ করলে একদিন না একদিন ফল পাওয়া যায়। আগে বাংলার যে সব দল সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তাদের সঙ্গে এ বারের দলের তুলনা চলে না। আগে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের প্লেয়াররা রোভার্স-ডুরান্ড খেলে সন্তোষ ট্রফি খেলতে যেত। কিন্তু এখন আর মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের প্লেয়ারদের সন্তোষ ট্রফিতে পাওয়া যায় না। আইএসএল-আইলিগ খেলা প্লেয়ারদেরও পাওয়া যায় না। তাই এ বার অনেক বেশি কঠিন ছিল। এই সাফল্যের সব কৃতিত্ব ফুটবলারদের।’’
এ দিনই তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলার তুলে নেওয়ার জন্য নতুন উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেছেন টুটু। তিনি বলেছেন, ভবানীপুর ক্লাব জুনিয়র অ্যাকাডেমি তৈরি করবে।