গোলের পর কাউকোর উল্লাস। নিজস্ব চিত্র
দিনের প্রথম ম্যাচে গোকুলম কেরলকে ২-১ হারিয়ে দিয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। পথের কাঁটা সরে যাওয়ায় মাজিয়া এসসি-র বিরুদ্ধে অনেকটা আত্মবিশ্বাসী হয়ে নেমেছিল এটিকে মোহনবাগান। সেই আত্মবিশ্বাসের ছাপ দেখা গেল তাদের খেলাতেও। গ্রুপের শেষ ম্যাচে মাজিয়াকে ৫-২ উড়িয়ে দিয়ে এএফসি কাপের আন্তঃআঞ্চলিক সেমিফাইনালে উঠে গেল সবুজ-মেরুন। এটিকে মোহনবাগানের হয়ে জোড়া গোল করলেন জনি কাউকো। একটি করে গোল রয় কৃষ্ণ, শুভাশিস বসু এবং কার্ল ম্যাকহিউয়ের। মঙ্গলবারের দু’টি ম্যাচের সময় নিয়ে এটিকে মোহনবাগান বাদে বাকি তিনটি দলই প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু একই মাঠে দু’টি ম্যাচ হওয়ায় একসঙ্গে তা আয়োজন করা সম্ভব ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পরে খেলার সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করলেন কৃষ্ণেরা।
গত ম্যাচের মতো মাজিয়ার বিরুদ্ধেও একই দল নামিয়েছিলেন এটিকে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। কিন্তু মাজিয়ার আক্রমণের সামনে শুরুতে কিছুটা হলেও দিশেহারা দেখাচ্ছিল সবুজ-মেরুনকে। মলদ্বীপের দলটির গতি অত্যন্ত ভাল। প্রতি আক্রমণেও সক্রিয়। ফলে তাদের থামাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল সন্দেশ জিঙ্ঘন, দীপক টাংরিদের। বিপক্ষের পেদ্রো প্লাসেরেস, আইসাম ইব্রাহিম, কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্টরা গোল করার জায়গায় চলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু এটিকে মোহনবাগানকে ম্যাচে ফেরাল সেই মাজিয়াই। বলা ভাল, তাদের গোলরক্ষক কিরণ লিম্বুর একটি ভুল। নির্বিষ একটি বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে বড্ড দেরি করে ফেললেন তিনি। সামনেই ছিলেন সুযোগসন্ধানী রয় কৃষ্ণ। বেকায়দায় নেওয়া লিম্বুর শট সরাসরি চলে গেল জনি কাউকোর পায়ে। ফাঁকায় থাকা কাউকো সময় নিয়ে বল জালে জড়ালেন। ২৫ মিনিটে এগিয়ে গেল এটিকে মোহনবাগান। কয়েক মিনিট পরে ফের সুযোগ এসে গিয়েছিল কাউকোর কাছে। কিন্তু ফাঁকায় থেকেও সহজ হেড নষ্ট করেন তিনি। তবে ভুল শোধরাতে বেশি সময় লাগালেন না। ৩৬ মিনিটেই তাঁর গোলে আবার এগিয়ে গেল এটিকে মোহনবাগান। নিজেদের অর্ধ থেকে উড়ে আসা বল ব্যাক হেড করে কাউকোকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন মনবীর সিংহ। ঠান্ডা মাথায় ফিনিশ করলেন ফিনল্যান্ডের ফুটবলার।
মাজিয়া যে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, এটা বোঝা গিয়েছিল প্রথমার্ধের শেষ দিকে। স্টুয়ার্টের একটি শট দুর্দান্ত দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন এটিকে মোহনবাগান গোলরক্ষক অর্শ আনোয়ার। প্রথমার্ধ শেষের কিছুক্ষণ আগেই একটি গোল শোধও করে মাজিয়া। স্টুয়ার্টের পাস থেকে গোল করেন পেদ্রো।
মনে করা হয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ আরও বাড়াবে মাজিয়া। কিন্তু কোথায় কী! সবুজ-মেরুনের দাপটের সামনে দাঁড়াতেই পারল না মাজিয়া। তিন মিনিটের মধ্যে দু’গোল করে ম্যাচ শেষ করে দেয় এটিকে মোহনবাগান। দু’টি ক্ষেত্রেই অবদান বাঙালি ফুটবলার শুভাশিস বসুর। প্রথমে ৫৬ মিনিটে বাঁ দিক থেকে একটি লম্বা ক্রস ভাসিয়েছিলেন রয় কৃষ্ণের উদ্দেশে। বল রিসিভ করেই চকিতে শটে গোল করেন ফিজির ফুটবলার। দু’মিনিট পরে গোলের খাতায় নাম লেখান শুভাশিস নিজেই। এ বার লিস্টনে ফ্রি-কিক থেকে বাঁ পা ছুঁইয়ে গোল করেন তিনি। ৭০ মিনিটে এল পঞ্চম গোল। ডান দিক থেকে কৃষ্ণের পাস পেলেন কার্ল ম্যাকহিউ। তাঁর নীচু শট বিপক্ষের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে জালে জড়িয়ে গেল।
৭২ মিনিটে প্লাসেরেস আরও একটি গোল দেন মাজিয়ার হয়ে। তবে ততক্ষণে ম্যাচের ভবিষ্যৎ দেওয়ালে লেখা হয়ে গিয়েছে। জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় শেষ দিকে ম্যাচ কিছুটা হালকা ভাবেই নিয়েছিলেন কৃষ্ণেরা। ফলস্বরূপ বেশ কিছু গোলের সুযোগ নষ্ট হল। না হলে ব্যবধান আরও বাড়তেই পারত।