বাঘাযতীনের হেলে পড়া সেই ফ্ল্যাটবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনে হেলে পড়ল আস্ত একটি ফ্ল্যাটবাড়ি। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, ওই আবাসনে আপাতত কোনও বাসিন্দা থাকছিলেন না। তাই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে কেউ আটকে নেই। তবে কী কারণে ওই ফ্ল্যাটবাড়িটি হেলে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনাস্থলে গিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং পুরসভার আবাসন বিভাগের আধিকারিকেরা। পৌঁছেছেন যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার এবং স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ সদস্য মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই ফ্ল্যাটবাড়ির প্রতিটি তলায় দু’টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটবাড়়িটি এক দিকে হেলে যাওয়ায় গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেন প্রোমোটার। সেই কারণে কোনও বাসিন্দাই আপাতত সেখানে থাকছিলেন না। ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে যাওয়ার খবর শুনে দৌড়ে আসেন অনেকে। শিউলি বক্সী নামের ফ্ল্যাটবাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, “ফ্ল্যাট লিফ্টিংয়ের কাজ শুরু হওয়ার পরে আমরা পাশেই ভাড়াবাড়িতে ছিলেন। এক প্রতিবেশী ফোন করে বললেন, তোমাদের ফ্ল্যাট থেকে আওয়াজ হচ্ছে। ছুটে গিয়ে দেখি পুরো হেলে গিয়েছে।” পরে এলাকায় যায় কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্ত।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ‘শুভ অ্যাপার্টমেন্ট’ নামের ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল। সেই সময় পুর কর্তৃপক্ষের তরফে ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, তার পরে আবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন অনেকে। ফ্ল্যাটবাড়িটি কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর কলোনিতে অবস্থিত। স্থানীয়দের দাবি, ফ্ল্যাটটি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। ওই অঞ্চলে তিনতলা ফ্ল্যাট বানানোর অনুমতি দেয় পুরসভা। অভিযোগ, সেই নিয়ম ভেঙে চারতলা ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছিল।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে যাদবপুরের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “বাড়িটি ১০-১২ বছরের পুরনো। বাড়িটি হেলে গিয়েছিল। ফ্ল্যাটবাড়ির কর্তৃপক্ষ হরিয়ানার এক সংস্থার সাহায্য নিয়ে বাড়িটি লিফ্ট করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হয়। সেই অনুমতি নেওয়া হয়নি।” আস্ত ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ জড়ো হন। পুলিশ গার্ডরেল করে গোটা এলাকা ঘিরে দেয়।
বাঘাযতীনের ঘটনা অনেকের গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের স্মৃতি উস্কে দিচ্ছে। ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ মাঝরাতে গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মীয়মাণ বাড়ি ভেঙে পড়ে। সেই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৩ জন মানুষ। তদন্তে উঠে আসে, বাড়িটি সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছিল। অভিযোগ ওঠে যে, নির্মাণের তদারকিতে বড় ধরনের গাফিলতি ছিল। এই ঘটনাটি মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বিধানসভা কেন্দ্র কলকাতা বন্দরে ঘটায় বেজায় চাপে পড়েছিল পুরসভা। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রথমে পুরসভা তিন ইঞ্জিনিয়ারকে শো কজ় নোটিস ধরানো হয়। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি তাঁদের সাসপেন্ড করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই ইঞ্জিনিয়ারদের কাজে ফিরিয়েছে পুরসভা। কিন্তু স্থানীয়দের একাংশের বক্তব্য, গার্ডেনরিচের ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি অনেকের।