অনুশীলনে জাহিরা খাতুন (বাঁ দিকে) ও ইত্তেশমা খাতুন। —নিজস্ব চিত্র।
মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও ছোট থেকেই দুই মেয়ের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ প্রবল। নানা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সাফল্য পেয়েছে। এ বার তারা দেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে খেলতে নামছে। ফলে, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভাসছে উলুবেড়িয়ার বহিরা গ্রামের জাহিরা খাতুনের পরিবার এবং উদয়নারায়ণপুরের ইত্তেশমা খাতুনের পরিবার।
আগামী ২৮ জুলাই থেকে ৭ অগস্ট আমেরিকার মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে স্পেশ্যাল অলিম্পিক্স ইউনিফায়েড ফুটবল কাপ। তাতে ভারতীয় দলের ১৫ জনের মধ্যে বাংলার তিন জন মেয়ে সুযোগ পেয়েছে। দু’জনই উলুবেড়িয়া মহকুমার। বছর ষোলোর জাহিরা খেলে রাইট ব্যাকে। বছর আঠেরোর ইত্তেশমা গোলকিপার।
দু’জনেই উলুবেড়িয়া কাঠিলার একটি বেসরকারি প্রতিবন্ধী স্কুলের দশম শ্রেণির আবাসিক ছাত্রী। ছেলেবেলাতেই বাবাকে হারায় জাহিরা। মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে কী করবেন, তা ভেবে প্রথম দিকে দিশাহারা ছিলেন জাহিরার মা আকলিমা বেগম। পরে কাঠিলার ওই স্কুলের খোঁজ পেয়ে মেয়েকে ভর্তি করে দেন। মেয়ে সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলতে শেখে।
আকলিমা বলেন, ‘‘আজ মেয়ে দেশের হয়ে বিদেশে খেলতে যাচ্ছে, এটা শুনে আনন্দ হচ্ছে। আজ মনে কোনও দুঃখ বা আক্ষেপ নেই। একদিন মেয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে, এটা ভেবেই আনন্দ হচ্ছে।’’ একই বক্তব্য ইত্তেসমার বাবা নুরুল ইসলামের।
ওই স্কুলের অধিকর্তা জন মেরি বারুই বলেন, ‘‘ছোট থেকেই জাহিরা ও ইত্তেসমার মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করি। নানা প্রতিযোগিতায় ওরা এই প্রতিষ্ঠানকে প্রচুর পুরস্কার এনে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের দুই আবাসিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে যে ভাবে একের পর এক বাধা অতিক্রম করে ভারতীয় দলে খেলার জায়গা করে নিয়েছে, তা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত। এরা জেলা স্তর থেকে খেলতে খেলতে আজ স্পেশ্যাল অলিম্পিক্সে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এর জন্য প্রতিষ্ঠান গর্বিত।’’
উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক শমীককুমার ঘোষও দুই কন্যার কাহিনি শুনেছেন। তিনি দু’জনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।