অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে শনিবার শতরানের পর অস্ট্রেলিয়ার উসমান খোয়াজা। ছবি: আইসিসি।
আগে দু’বার অ্যাশেজ সিরিজ়ে অস্ট্রেলিয়া দলে সুযোগ পাননি। সেই খোয়াজাই বার্মিংহাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষে অপরাজিত ১২৬ রান করে। একই সঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনালে রান না পাওয়ার আক্ষেপও মিটিয়ে নিয়েছেন। শনিবার শতরান পূর্ণ করার পর তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি খোয়াজা।
ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট শতরান করে উচ্ছ্বসিত ৩৬ বছরের বাঁহাতি ব্যাটার। তা গোপন করছেন না তিনি। অথচ চার বছর আগে অ্যাশেজ সিরিজ়ের দল থেকে বাদ পড়ার পর তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তাই এই শতরানের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে খোয়াজার কাছে। তিনি বলেছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের মাটিতে আগের দু’টি অ্যাশেজ সিরিজ়ের দলে জায়গা পাইনি। এই শতরান আমার কাছে অনেকটা চূড়ান্ত পরিণতির মতো।’’
অনেকে মনে করতেন ইংল্যান্ডের পরিবেশে খোয়াজার সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার বলেছেন, ‘‘সংবাদমাধ্যমে কী লেখা বা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। শুধু অনুশীলন করি। যত বেশি সম্ভব অনুশীলন করি। অনুশীলনের পর নেট থেকে বেরিয়ে আসার সময় কখনও মনে হয়নি ইংল্যান্ডে ব্যাট করতে পারব না। আসলে এটা যতটা না বাস্তব, তার থেকে বেশি ধারণা।’’ মনের ভিতরে জমে থাকা অসন্তোষও প্রকাশ করে খোয়াজা আরও বলেছেন, ‘‘আমার তো মনে হয়, সব সময় এই কথাটাই বলার চেষ্টা করেছি। ভারত সফরের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। মনে হয় না নিজেকে প্রমাণ করার জন্য আমার কাছে একটাই উদাহরণ রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিদেশের মাটিতে রান করতে পারলে সব সময় ভাল লাগে। শুধু বলতে চাই, গত ১০ বছরে যা যা করেছি, সেগুলো অপ্রত্যাশিত বা কাকতালীয় ছিল না।’’ উল্লেখ্য, আমদাবাদ টেস্টে খোয়াজা শতরান করার পরেও বিদেশের মাটিতে তাঁর ব্যাটিং দক্ষতা আলোচনায় উঠে এসেছিল। খোয়াজার ব্যাটিং দক্ষতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠলেও অন্তত ২০টি ইনিংস খেলেছেন, এমন টেস্ট ওপেনারদের মধ্যে তাঁর গড়ই সব থেকে ভাল। টেস্টে ওপেনার হিসাবে তাঁর গড় ৬৮.৭২। তাই শনিবার শতরানে পর তাঁর উচ্ছ্বাস প্রকাশের ভঙ্গি সমালোচকদের জবাব বলে মনে করছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ।
খোয়াজার ইনিংস দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁর সতীর্থরাও। টেস্ট বিশ্বকাপ ফাইনালের শতরানকারী ট্র্যাভিস হেড করেছেন ৫০ রান। ওভালের পর বার্মিংহামেও রান পেয়ে খুশি তিনি। হেড বেশি খুশি খোয়াজার ইনিংসে। হেড বলেছেন, ‘‘খোয়াজার কাঁধে বড় দায়িত্ব রয়েছে। যে কোনও ক্রিকেটারের কাছেই বিদেশের মাটিতে শতরানের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। খোয়াজা অ্যাশেজ খেলার খুব বেশি সুযোগ পায়নি। তাই রানের খিদে একটু বেশি ছিল। খুব দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। দারুণ ভাবে নতুন বল সামলেছে খোয়াজা। দারুণ ইনিংস খেলল।’’ খোয়াজা এক বার আউট হয়েও বেঁচে গিয়েছেন এই ইনিংসে। ব্যক্তিগত ১১২ রানের মাথায় স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে আউট হয়েছিলেন। কিন্তু ব্রড নো বল করায় বেঁচে যান তিনি।
নিজের অর্ধশতরানেও তৃপ্ত হেড। তা নিয়ে বলেছেন, ‘‘টেস্টে ব্যাট করা সব সময় চ্যালেঞ্জের। সব মিলিয়ে আমরা এখানে পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ খেলব। প্রথম দু’দিন ভাল ক্রিকেট হয়েছে। সিরিজ়টা যে ভাবে শুরু করলাম, তাতে আমি খুশি। ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করছি সব সময়। রান তোলার মতো বল পেলে আমি সব সময় রান করার চেষ্টা করি। ভাল বলেও রান করার লক্ষ্য থাকে আমার। এটা একটা চ্যালেঞ্জ।’’
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৮ উইকেটে ৩৯৩ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিনের শেষে যথেষ্ট ভাল জায়গায় অস্ট্রেলিয়া। খোয়াজার শতরানের সুবাদে প্যাট কামিন্সদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩১১। ২২ গজে রয়েছেন খোয়াজা এবং অ্যালেক্স ক্যারি (অপরাজিত ৫২)।