Border-Gavaskar Trophy 2024-25

কোহলিকে রানে ফেরালেন যশস্বী! ব্যাকফুটে কী করে খেলতে হয়, হাতেকলমে ‘শিখিয়ে দিলেন’ বিরাটকে

জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার চাই ৫৩৪ রান। প্রথম দিন কোণঠাসা ভারত কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল তৃতীয় দিনের শেষে। যশস্বীর ১৬১ এবং কোহলির অপরাজিত ১০০ রানের সুবাদে চালকের আসনে বুমরার দল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:১৯
Picture of Test Cricket

ভারত-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলার নানা মুহূর্ত। ছবি: এএফপি এবং রয়টার্স।

কাছে গিয়েও ২০০ ছুঁতে পারলেন না যশস্বী জয়সওয়াল। শনিবার থেকে পার্‌থের ২২ গজে তাঁর সাবলীল ব্যাটিং আশাবাদী করে তুলেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। যশস্বীর দ্বিশতরানের অপেক্ষায় ছিল ভারতীয় সাজঘরও। কিন্তু ১৬১ রান করেই ফিরতে হল ২২ বছরের ওপেনারকে। তাঁর ইনিংসে ভর করেই জয়ের আশা দেখছে ভারত। যশস্বী ছাড়াও ভারতীয় দলকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দিল লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলিদের ব্যাট। তৃতীয় দিনের খেলার শেষে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির প্রথম টেস্ট জিততে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন আরও ৫২২ রান। ভারতের দরকার ৭ উইকেট।

Advertisement

ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে যশস্বীকে ঝকঝকে দেখালেও তাঁর শুরুটা তেমন নয়। বরং বেশ মলিন। এক সময় মুম্বইয়ের রাস্তায় বাবার সঙ্গে ফুচকা বিক্রি করতেন ছোট যশস্বী। ক্রিকেট শেখার মতো আর্থিক সঙ্গতিও ছিল না। এ হেন ব্যাটারই প্রথম টেস্ট ইনিংসে বিদেশের মাটিতে ১৭১ রানের ইনিংস খেলে নজর কেড়েছিলেন। পার্‌থে তাঁর ব্যাট থেকে এল চতুর্থ টেস্ট শতরান। বছরের শুরুতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পর পর দু’টেস্টে দ্বিশতরান করার পর ভারতের টেস্ট দলে ওপেনারের জায়গা এক রকম পাকা। শুধু লাল বলের ক্রিকেট নয়, সাদা বলের ক্রিকেটেও যশস্বী সাবলীল। এক দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও অভিষেক না হলেও দেশের হয়ে খেলেছেন ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। রয়েছে একটি শতরান, তিনটি অর্ধশতরান।

ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে ক্রমশ ভরসার নাম হয়ে উঠছেন তরুণ ওপেনার। দেশের মাটিতে যেমন সাবলীল, বিদেশের মাটিতেও তেমন স্বচ্ছন্দ। ব্যাটিং টেকনিক ভাল না হলে সম্ভব নয়। পার্‌থের দ্রুতগতির পিচে অস্ট্রেলিয়ার জোরে বোলারদের কী ভাবে সামলাতে হয়, তা হাতেকলমে দলের সিনিয়রদের দেখিয়ে দিলেন ১৬১ রানের ইনিংসে। তাঁর ২৯৭ বলের ইনিংসে ১৫টি চার এবং ৩টি ছয় রয়েছে। সুইং নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে বলের গতির মোকাবিলা করলেন ব্যাক ফুটে খেলে। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কেরা তাঁকে তেমন সমস্যাতেও ফেলতে পারলেন না। বিট অবশ্যই হয়েছেন। কিন্তু উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যাট করার জন্য ঠিক যেমন মানসিকতা প্রয়োজন, তেমন ভাবেই খেলেছেন। ব্যাট হাতে যেমন প্রতিপক্ষের আক্রমণ মোকাবিলা করেছেন, তেমন স্টার্কদের স্লেজিংয়ের জবাব মুখে দিতেও ভাবেননি।

অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলিদের অনেকটাই বেশি যশস্বীর থেকে। তবু তাঁরা ২২ বছরের তরুণকে দেখে শিখতে পারেন— পার্‌থে কী করলে রান করা যায়। ভাল বল ছেড়েছেন, খারাপ বল মেরেছেন, জোরে বোলারদের ব্যাক ফুটে সামলেছেন, আবার নাথান লায়নের বিরুদ্ধে স্টেপ আউট করতেও দ্বিধায় ভোগেননি। যেমন বল, তেমন উত্তর দিয়েছেন। বিদেশের মাটিতে ১৫০ রানে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যাওয়া একটা দলের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা নিঃসন্দেহে চাপের। যশস্বী সেই চাপ সামলাতে জানেন।

বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির অন্যতম ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকর বলেছেন, ‘‘পিছনের পায়ে কী ভাবে খেলতে হয়, তা যশস্বীর থেকে শিখতে পারে কোহলি। একটু দেরিতে স্কোয়্যার কাটগুলো মারছে। দেখতে হয়তো একদম নিখুঁত লাগছে না। তবে পিছনের পায়ে শরীরের ওজন থাকায় শটগুলো শক্তিশালী হচ্ছে। স্কোয়্যারের পিছনের অঞ্চল থেকে রান করেছে। ইনিংসের ৬৪ শতাংশ বল খেলেছে পিছনের পায়ে। কোহলির এটা দেখা উচিত। কারণ স্কোয়্যারের পিছনের অঞ্চলে কোহলি খুব শক্তিশালী নয়।’’ মঞ্জরেকরের মন্তব্যে মুম্বইসুলভ খোঁচা থাকতেই পারে। দিল্লির কোহলি তাঁর কথাকে গুরুত্ব নাই দিতে পারেন। তবু শনিবার কোহলির ব্যাটিংয়েও ভাবনাচিন্তার ছাপ পরিষ্কার। প্রথম ইনিংসের মতো সুইং ভাঙার জন্য পপিং ক্রিজ়ের অনেক বাইরে দাঁড়াননি। বল দেখে খেলার চেষ্টা করেছেন। পর্যাপ্ত সময় নিয়েছেন শট নেওয়ার আগে। বলকে ব্যাটের কাছে আসতে দিয়েছেন। অযথা বলের কাছে ব্যাট বাড়িয়ে দেননি। ফলও পেয়েছেন। চাপের মুখে দলকে নির্ভরতা দিতে পেরেছেন। ২ উইকেটে ৩১৩ থেকে ৫ উইকেটে ৩২১ হয়ে যাওয়া দলের হাল ধরেছেন। ঋষভ পন্থ (১), ধ্রুব জুরেলদের (১) ব্যর্থতার প্রভাব পড়তে দেননি। ওয়াশিংটন সুন্দরকে যতটা সম্ভব আগলে রাখার চেষ্টা করেছেন। কোহলি যখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন, তখন ভারতীয় শিবির অনেকটাই চাপমুক্ত ছিল। খোলা মনে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন কোহলি। উইকেটের অন্য প্রান্তে জমে যাওয়া যশস্বী। পাশাপাশি, দল শক্ত ভিতের উপর। শুরুটা অনুকূল পরিস্থিতিতে করতে পারায় ইনিংসের মাঝে তৈরি হওয়া চাপও সামলে দিয়েছেন অনায়াসে। কোহলি থামলেন ৪৯২ দিন পর টেস্ট শতরান করে। শেষ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে শতরান করেছিলেন ২০২৩ সালের ২১ জুলাই। এ দিন ১৪৩ বলের ইনিংস সাজালেন ৮টি চার এবং ২টি ছয় দিয়ে। কোহলিকে চেনা মেজাজে ফিরিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব কিছুটা হলেও তাই দাবি করতে পারেন তরুণ মুম্বইকর।

যশস্বীর বয়স ২২। তরুণতম ভারতীয় হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট শতরান করলেন। তাঁর এই কীর্তি আত্মবিশ্বাস দিল লোকেশ রাহুলকেও। গুরুত্বপূর্ণ ৭৭ রান এল তাঁর ব্যাট থেকেও। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে প্রথম উইকেটের জুটিতে ২০১ রান তুলল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম বার। আগে কখনও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম উইকেটের জুটিতে ভারত ২০০ রান করতে পারেনি। এই নজিরেও অবদান থাকল যশস্বীর।

প্রথম দিন ১৭ উইকেট পড়া পিচেও অস্ট্রেলিয়ার বোলারেরা যে প্রায় দু’দিন ধরে উইকেটের জন্য হা পিত্যেশ করলেন, তার জন্য দায়ী যশস্বী। নানা চেষ্টা করেও ভারতীয় তরুণের রক্ষণ টলাতে পারেননি জশ হেজ়লউডেরা। যশস্বীর রক্তে লড়াই ঢুকিয়ে দিয়েছে মুম্বইয়ের ঝুপড়ি। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বড় হওয়া খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হওয়ার তেমন কিছু থাকে না। সব কিছুই যেন তাঁদের কাছে প্রাপ্তি। যশস্বীও একই গোত্রের। তাঁর লড়াই সংক্রামিত হল দলের বাকিদের মধ্যেও। ওয়াশিংটন সুন্দর (২৯), নীতীশ কুমার রেড্ডিরা (অপরাজিত ৩৮) বড় রান না করলেও প্রয়োজনীয় জুটি তৈরিতে সাহায্য করলেন। কোহলি ৩০তম টেস্ট শতরান করতেই দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিলেন বুমরা। ৬ উইকেটে ৪৮৭ রান তুলে দান ছেড়ে দিল গৌতম গম্ভীরের দল। ঘরের মাঠে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ৫৩৪।

প্রায় দু’দিন ধরে পার্‌থের গরমে ফিল্ডিং করে ক্লান্ত অস্ট্রেলীয়দের রবিবার শেষ বেলায় কয়েক ওভার ব্যাট করিয়ে নিতে চেয়েছিলেন গম্ভীরেরা। চাপে থাকা প্যাট কামিন্সদের আরও কোণঠাসা করে দেওয়ার লক্ষ্যও ব্যর্থ হয়নি। প্রথম ওভারেই মাথান ম্যাকসুইনিকে (শূন্য) বুমরা এবং চতুর্থ ওভারে কামিন্সকে (২) মহম্মদ সিরাজ আউট করে দিয়েছেন। মার্নাস লাবুশেনকেও (৩) দিনের শেষ ওভারে আউট করে দিলেন বুমরা। অসিদের রান ৩ উইকেটে ১২। লাবুশেন আউট হওয়ার পরই দিনের খেলা শেষ করে দেন আম্পায়ারেরা।

আরও পড়ুন
Advertisement