সৌরভের বায়োপিকের কর্ণধারেরা ইডেনে, শুটিং শুরু শীঘ্রই
Sourav Ganguly- Rajkummar Rao

রাজকুমার হয়তো পর্দার মহারাজ

সৌরভের বায়োপিকের নির্মাতা-প্রযোজক ‘লাভ ফিল্মস’-এর কর্ণধার অঙ্কুর গর্গ এবং লাভ রঞ্জন বেশ কয়েকবার কলকাতা ঘুরে গিয়েছেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে সৌরভ বায়োপিকের মশলা জোগাড় করছেন তাঁরা।

Advertisement
সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৭
অপেক্ষা: সৌরভের বায়োপিকে কি দেখা যাবে রাজকুমারকে?

অপেক্ষা: সৌরভের বায়োপিকে কি দেখা যাবে রাজকুমারকে? —ফাইল চিত্র।

নানা জল্পনার পরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিকে সৌরভের ভূমিকায় কে অভিনয় করবেন, তা প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার দিকে। তিনি— হালফিলে বেশ কিছু সুপারহিট উপহার দেওয়া এবং ‘স্ত্রী টু’-এ শ্রদ্ধা কপূরের সঙ্গে বিপুল জনপ্রিয় গানে ঝড় তোলা রাজকুমার রাও। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এর পরে নতুন করে আবার কোনও পটপরিবর্তন না হলে রাজকুমারই সম্ভবত পর্দার ‘মহারাজ’
হতে চলেছেন।

Advertisement

সৌরভের বায়োপিকের নির্মাতা-প্রযোজক ‘লাভ ফিল্মস’-এর কর্ণধার অঙ্কুর গর্গ এবং লাভ রঞ্জন বেশ কয়েকবার কলকাতা ঘুরে গিয়েছেন। প্রায় আড়াই বছর ধরে সৌরভ বায়োপিকের মশলা জোগাড় করছেন তাঁরা। ছবি গুছিয়ে আনার কাজ শেষের দিকে। দ্রুতই শুটিং শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু শুটিং শুরু করতে গেলে আগে তো ঠিক করতে হবে, পর্দায় ‘দাদা’ কে হবেন? বায়োপিক করার উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে নির্মাতাদের সব চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে প্রধান নামটি চূড়ান্ত করতে গিয়ে। সৌরভের নিজের খুব পছন্দের অভিনেতা রণবীর কপূর। অনেক চেষ্টাও করা হয়েছিল রণবীরকে রাজি করানোর। কিন্তু ‘ডেট’ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ভিকি কৌশলকে বাছা হোক। কিন্তু তাঁকেও পাওয়া যায়নি। এর পরে আরও কয়েক জনের নাম এলেও কিছুতেই আর সহমত হওয়া যাচ্ছিল না।

শেষ পর্যন্ত রাজকুমার রাওয়ের কথা ভাবা হয়েছে এবং যা ইঙ্গিত, সৌরভ-সহ সকলেরই পছন্দের নাম তিনি। বায়োপিকের পরিচালকের নাম ঠিক হয়ে গিয়েছে। বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে। যাঁর সব চেয়ে বিখ্যাত ছবি ‘উড়ান’ সাতটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিল। এ ছাড়াও ‘লুটেরা’-ও বক্স অফিসে ভাল সাড়া ফেলেছিল। তাঁর নির্দেশনায় তৈরি ‘ট্র্যাপ্‌ড’-এ অভিনয় করেছিলেন রাজকুমার রাও। বুধবার ইডেনে ভারত বনাম ইংল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন ‘লাভ ফিল্মস’-এর কর্ণধারেরা, অঙ্কুর গর্গ ও লাভ রঞ্জন। সঙ্গে এসেছিলেন পরিচালক বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে। তিন তলার প্রেসিডেন্ট্‌স
বক্সে বসে ম্যাচ দেখতে দেখতে তাঁরা সৌরভের সঙ্গে বায়োপিক নিয়ে আলোচনা সেরে নেন। বৃহস্পতিবারও তাঁরা কলকাতায় ছিলেন এবং ছবি নির্মাণের জন‌্য আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিলেন।

বায়োপিক নির্মাণে বড় ভূমিকা রয়েছে সৌরভের বাল্যবন্ধু ও প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয় দাসের। তিনিও ইডেনের আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। রাজকুমার রাওয়ের নাম যে চূড়ান্ত হওয়ার দিকে, তা অবশ্য স্বীকার করতে চাননি সঞ্জয়। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁর কাছে জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘‘বায়োপিকের কাজ এগোচ্ছে। যথাসময়ে সব কিছু জানতে পারবেন। সৌরভের ভূমিকায় কে অভিনয় করবেন, সময় হলেই লাভ ফিল্মসের পক্ষ থেকে তা ঘোষণা করা হবে।’’ তবে তিনি ভাঙতে না চাইলেও আনন্দবাজারের কাছে জোরালো ইঙ্গিত পৌঁছেছে, পর্দার সৌরভ হওয়ার ব্যাপারে রাজকুমার রাও-ই সব চেয়ে এগিয়ে।

সম্প্রতি ‘স্ত্রী টু’-এর অভিনব সাফল্যের জেরে রাজকুমার এই মুহূর্তে বলিউডের সব চেয়ে সফল নায়কদের তালিকাতেও স্থান করে নিতে পেরেছেন। তাই তাঁর জনপ্রিয়তা নিয়েও কারও কোনও সংশয় নেই। তা ছাড়া রাজকুমার খেলাধুলোর উপরে কয়েকটি ফিল্মে প্রধান চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। ক্রিকেট সম্পর্কে অবহিত। কাকতালীয় হতে পারে, কিন্তু মনে করিয়ে দেওয়া যাক রাজকুমার রাও-এর স্ত্রীও বাঙালি, অভিনেত্রী পত্রলেখা পাল। দু’চারটে বাংলা শব্দও হয়তো তাঁর জানা থাকবে। সব মিলিয়ে সৌরভ চরিত্রের জন্য তিনি বেশ মানানসই নাম বলে মনে করা হচ্ছে।

ক্রিকেট বা খেলাধুলো নিয়ে যখনই কোনও ফিল্ম হয়েছে, আলাদা করে নায়ক বা নায়িকাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেই চরিত্রের সঙ্গে সময় কাটানোর ব্যাপারও থাকে যাতে তাঁর চালচলন, স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যগুলি ঠিক মতো পর্দায় ফুটিয়ে তোলা যায়। প্রয়াত সুশান্ত সিংহ রাজপুত যেমন অনেকদিন সময় কাটিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে তাঁর বায়োপিক করার আগে। ‘লগান’ বায়োপিক না হলেও আমির খান বিশেষ ক্রিকেট পাঠ নিতে ছুটেছিলেন সচিন তেন্ডুলকরের কাছে। এ ক্ষেত্রে রাজকুমার রাওয়ের সঙ্গে লিখিত চুক্তি সারা হয়ে গেলে নিশ্চয়ই তাঁকেও সৌরভের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে হবে। রাহুল দ্রাবিড়ের সেই অমর উক্তি ‘‘অফসাইডে ঈশ্বর, তার পরেই সৌরভ।’’ সেই অফসাইডের জাদু পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সহজ ব্যাপার নয়। নেটে ব্যাট হাতে অনেক তালিম নিতে হবে অভিনেতাকে।

সৌরভের অনেক সতীর্থ ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলা হয়ে গিয়েছে। সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, ভি ভি এস লক্ষ্ণণরা তো আছেনই। অধিনায়ক সৌরভের সব চেয়ে বড় অবদান, তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে আনা। নানা ঝড়-ঝাপ্টার মধ্যেও তাঁদের পাশে দাঁড়ানো। তাই বীরেন্দ্র সহবাগ, যুবরাজ সিংহ, হরভজন সিংহ বা মহন্মদ কাইফের মতো সেই সময়কার তরুণ তুর্কিদের সঙ্গে বিশদে কথা বলা হয়েছে। তাঁরা প্রিয় অধিনায়ককে নিয়ে কতটা অজানা কাহিনির সন্ধান দিতে পারলেন, সেটাও দেখার। স্টিভ ওয়কে টসের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখার নেপথ্যে আর কোনও মশলা ছিল? বা গুরু গ্রেগের সঙ্গে এত ঝামেলার সূত্রপাত আসলে কোথায়? আশা করা হচ্ছে, বায়োপিকে নানা রুদ্ধশ্বাস মোচড় থাকবে।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মানেই তো এক রুদ্ধশ্বাস ক্রিকেট যাত্রার কাহিনি!

Advertisement
আরও পড়ুন