Yusuf Pathan

বিশ্বজয়ের হ্যাটট্রিক! ক্রিকেটের পাকিস্তান বা রাজনীতির অধীর, জয়ের রাস্তা খুঁজে নিতে জানেন পাঠান ইউসুফ

তিন বার বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেল ইউসুফের। তিনি জানেন জয়ের রাস্তা খুঁজে নিতে। বহরমপুরের অধীর-দুর্গের রাস্তাও সহজ ছিল না। রাজনীতির ময়দানেও সাফল্য সঙ্গ দিয়েছে লড়াকু পাঠানকে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪ ১১:২৯
Picture of Yusuf Pathan

ইউসুফ পাঠান। (বঁদিকে) ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর এবং গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর। —ফাইল চিত্র।

পাকিস্তানকে হারিয়ে লেজেন্ডস টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন ইউসুফ পাঠান। ২০০৭, ২০১১, ২০২৪। তিন বার বিশ্বকাপ জেতা হয়ে গেল ইউসুফের। এর মাঝে জিতেছেন লোকসভা নির্বাচনে। সপ্তদশ লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীকে হারিয়ে বহরমপুরের সাংসদ হয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন ক্রিকেটার। ক্রিকেটের ২২ গজ থেকে রাজনীতির ময়দান— অলরাউন্ডার ইউসুফ যেন অপ্রতিরোধ্য।

Advertisement

গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থিতালিকায় চমক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বাংলায় প্রার্থী করেছিলেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফকে। তা-ও আবার বহরমপুরের মতো কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটিতে। অনেকে ভেবেছিলেন, বরোদা থেকে নিয়ে এসে ইউসুফকে বোধহয় রাজনীতির জলে ফেলে দিলেন তৃণমূলনেত্রী। সেই আশঙ্কা উড়িয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন ইউসুফ। খেলোয়াড় হওয়ার সুবাদে হারার আগে হার তাঁর রক্তে নেই। হাল ছাড়েননি রাজনীতির ময়দানেও। নতুন তো এক সময় ক্রিকেটের ময়দানেও ছিলেন। ভোটের লড়াইয়েও প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়েননি। বরং অধীরের মতো কংগ্রেস নেতাকে তাঁর এলাকাতেই কোণঠাসা করে দিয়েছেন।

পাঠানেরা মূলত বর্তমান পূর্ব আফগানিস্তান এবং বর্তমান উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের আদি বাসিন্দা। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বরাবর জীবনযাপন করতে হয় তাঁদের। ব্রিটিশ শাসনকালেরও আগে পাঠানদের একাংশ চলে আসেন বর্তমান ভারতের ভূখণ্ডে। পাঠানদের রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে লড়াই। ব্রিটিশ শাসনকালের সেনাবাহিনীতেও আলাদা গুরুত্ব ছিল পাঠানদের। ইউসুফও ব্যতিক্রম নন। ক্রিকেট থেকে রাজনীতি— শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন স্নায়ুকে নিয়ন্ত্রণে রেখে।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলে ছিলেন ইউসুফ। ছিলেন ধোনির নেতৃত্বাধীন ২০১১ সালের এক দিনের বিশ্বজয়ী দলেও। আবার গৌতম গম্ভীরের নেতৃত্বে কেকেআর যে দু’বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই ২০১২ এবং ২০১৪ সালেও দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। প্রথম বার আইপিএলজয়ী শেন ওয়ার্নের রাজস্থান রয়্যালস দলেও ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। প্রথম বার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে সাফল্য পেয়েছেন। আবার ৪১ বছর বয়সে লেজেন্ডস বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপেও ভারতীয় দলের সদস্য তিনি।

সাফল্য যেন যোদ্ধা পাঠানের সঙ্গ ছাড়তে চায় না। ময়দান যেমনই হোক আর যত কঠিনই হোক। দেশের হয়ে খুব বেশি খেলার সুযোগ হয়নি। ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৫৭টি এক দিনের ম্যাচ এবং ২২টি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক খেলেছেন। অর্থাৎ, ৭৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ইউসুফের ঝুলিতে রয়েছে দু’টি বিশ্বকাপ। এমন কৃতিত্ব ভারতীয় ক্রিকেটে খুব কম জনেরই আছে।

শনিবার লেজেন্ডস ক্রিকেটেও চাপের মুখে চওড়া হয়েছে তাঁর ব্যাট। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত। ইউসুফের ব্যাট থেকে এসেছে ১৬ বলে ৩০ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ১টি চার এবং ৩টি ছক্কা মেরেছেন তিনি। ১০৮ রানে ভারতের ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ব্যাট করতে নামেন ইউসুফ। তখনও জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ৪৪ বলে ৪৯ রান। বহরমপুরের সাংসদের ব্যাট পরিস্থিতি সহজ করে দেয়। ৫ বল বাকি থাকতেই পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে যুবরাজ সিংহের দল।

এই পাকিস্তানের কাছেই লিগ পর্বে হারতে হয়েছিল যুবরাজদের। সে তো ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও গ্রুপের লড়াইয়ে পাকিস্তানকে সরাসরি হারাতে পারেননি ধোনিরা। টাই হওয়ার পর সুপার ওভারে জিতেছিল ভারত। সে বার ফাইনালেও পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। ধোনিদের ৫ উইকেটে ১৫৭ রানের জবাবে শোয়েব মালিকের দলের ইনিংস শেষ হয়েছিল ১৫২ রানে। সেই ফাইনালে ওপেনার ইউসুফ ৮ বলে ১৫ রান করেছিলেন। বোলার ইউসুফ ১ ওভার বল করে খরচ করেছিলেন ৫ রান।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারানোর অভিজ্ঞতা ছিলই। তা কাজে লাগিয়ে ঠান্ডা মাথায় ইউনিস খানের দলকে হারিয়েছেন। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলা দু’দলের ১১ জন ক্রিকেটার শনিবার মাঠে ছিলেন। কম বয়সের মতো এই বয়সেও পাঠানেরা প্রমাণ করে দিয়েছেন, তাঁরাই সেরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন ভারতেরই দাপট। দু’সপ্তাহ আগে ২০ ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে রোহিত শর্মার দল। ১৪ দিন পর লেজেন্ডস ক্রিকেটে যুবরাজেরা। যে জয়ের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে ইউসুফের ব্যাট।

ইউসুফ জানেন জয়ের রাস্তা খুঁজে নিতে। তাঁর হাল না ছাড়ার মানসিকতা প্রয়োজনে রাস্তা তৈরি করে নেয়। বহরমপুরের অধীর-দুর্গের রাস্তাও সহজ ছিল না। যিনি বার বার পাকিস্তানের প্রতিরোধে ফাটল ধরাতে পারেন, তাঁর কাছে ভোটের অঙ্ক কী এমন কঠিন!

আরও পড়ুন
Advertisement