ICC World Cup 2023

সিরাজের একটা ওভারই ভারতকে দিল এশিয়া কাপ, সেই ওভারই কি ছিনিয়ে নিল অন্য মহম্মদের বিশ্বকাপ?

বিশ্বকাপের প্রথম একাদশে ঢোকার জন্য লড়াই হওয়ার কথা ছিল মহম্মদ সিরাজ এবং মহম্মদ শামির। রবিবারের পর সেই লড়াইয়ে নিজেকে অনেকটাই এগিয়ে রাখলেন সিরাজ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০২
An image of Mohammed Siraj and Mohammed Shami

(বাঁ দিকে) মহম্মদ সিরাজ এবং মহম্মদ শামি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

এশিয়া কাপের ফাইনালে চতুর্থ ওভারের প্রথম, তৃতীয়, চতুর্থ এবং শেষ বলে উইকেট। মহম্মদ সিরাজ ভারতকে ম্যাচটা জিতিয়ে দিলেন ওই ওভারেই। কিন্তু সেই ওভারই হয়তো বিশ্বকাপে প্রথম একাদশের বাইরে করে দিল আরও এক মহম্মদকে। সামনেই বিশ্বকাপ। সেখানে ভারতীয় দলের তিন পেসার যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ এবং মহম্মদ শামি। ভারতের পিচে হয়তো কখনওই এই তিন জন একসঙ্গে প্রথম একাদশে জায়গা পাবেন না। রবিবার সিরাজের ম্যাচ জেতানো বোলিংয়ের পর তাই হয়তো প্রথম একদশের বাইরেই থাকতে হবে শামিকে।

Advertisement

৫ অক্টোবর থেকে শুরু বিশ্বকাপ। ভারতের মাটিতে হবে এ বারের প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক দল ঘোষণা করে দিয়েছে ভারত। পেসার হিসাবে এই তিন জন রয়েছেন। সঙ্গে হার্দিক পাণ্ড্যও আছেন। অর্থাৎ ভারতের পেস আক্রমণ সামলানোর দায়িত্ব থাকবে দুই জোরে বোলার এবং হার্দিকের উপর। সেই দুই জোরে বোলারের মধ্যে এক জন অবশ্যই বুমরা। লড়াই অন্য জায়গাটি নিয়ে। এশিয়া কাপের শুরু থেকেই ভারতীয় দল স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, শামি নন, সিরাজকেই এগিয়ে রাখছে তারা। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলানো হয়েছে সিরাজকে। শামি খেলেছেন নেপাল এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। দুই ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ফাইনালে সিরাজ নিলেন ৬ উইকেট। তাঁর দাপটে কাপ জিতল ভারত। তাই এটা বলাই যায় বিশ্বকাপে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন সিরাজ।

রবিবার এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রথম ওভারে উইকেট নেন বুমরা। সিরাজ নিজের দ্বিতীয় ওভারে নেন ৪ উইকেট। মোট ৬ উইকেট নেন তিনি। হার্দিক নেন তিনটি। ভারত ম্যাচ জেতে ১০ উইকেটে। শুভমন গিল এবং ঈশান কিশন ওপেন করতে নেমে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

রবিবার একটি বিশেষ জিনিস করেন সিরাজ। সেটার জন্যই সাফল্য পান বলে জানান তিনি। সিরাজ বলেন, “আমি সাধারণত ক্রস সিমে বল করি। কিন্তু এই ম্যাচে সিম ধরে বল করছিলাম। তাই ইনসুইংয়ের থেকে আউটসুইং বেশি হচ্ছিল। সেটাই কাজে দিয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাটার আউটসুইংয়ে আউট হয়েছে। এই ম্যাচে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”

রবিবার এশিয়া কাপের ফাইনালে স্বপ্নের বোলিং করেন সিরাজ। এক ওভারে ৪টি উইকেট নেন। মোট ৭ ওভার বল করে ২১ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। ভারতের হয়ে এর আগে এক দিনের ক্রিকেটে কোনও বোলার এক ওভারে চার উইকেট নেননি। হ্যাটট্রিক অনেকের থাকলেও এই নজির ছিল না। সেই তালিকায় নাম তুলে ফেললেন সিরাজ। এক দিনের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এত দিন সেরা বোলিং ছিল পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনিসের। ১৯৯০ সালে শারজায় একটি ম্যাচে ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেই নজির টপকে যান সিরাজ। তিনি ২১ রানে ৬ উইকেট নেন।

এক দিনের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে সেরা বোলিং ফিগার করার সুযোগ ছিল সিরাজের সামনে। আর একটি উইকেট নিলেই সেটা সম্ভব হত। কিন্তু ৬টির বেশি উইকেট নিতে না পারায় তা সম্ভব হয়নি। ভারতের হয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও বোলারেরই ইনিংসে ৭ বা তার বেশি উইকেট নেই। ভারতের সেরা বোলিং ফিগার স্টুয়ার্ট বিনির। তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মীরপুরে ৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে অনিল কুম্বলে। তিনি ১৯৯৩ সালে কলকাতায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। ২০২২ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরা। তার পরেই রয়েছেন সিরাজ। তাঁর রান বেড়ে যাওয়ার জন্যে দায়ী বিরাট কোহলিও। কারণ একটি ওভার থ্রো থেকে অতিরিক্ত ৪ রান হয়। এশিয়া কাপে সেরা বোলিং ফিগারও অল্পের জন্যে অধরা থেকে গেল সিরাজের। ২০০৮ সালে ভারতের বিরুদ্ধে করাচিতে ১৩ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিস। তার পরেই রয়েছেন সিরাজ। এ ক্ষেত্রেও আর একটি উইকেট পেলে সেরা বোলিং ফিগার হতে পারত তাঁর।

রেকর্ড ছোঁয়ার সামনে থেকে ফিরলেও বিশ্বকাপের জন্য নিজের জায়গা পাকা করে ফেললেন সিরাজ। হৃদয় জিতে নিয়েছেন মাঠকর্মীদের হাতে নিজের পুরস্কার তুলে দিয়ে। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠে সিরাজ বলেন, “এই পুরস্কার কলম্বোর মাঠকর্মীদের প্রাপ্য। ওঁরা না থাকলে এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করাই যেত না। তাই এই টাকা ওঁদের হাতে তুলে দিতে চাই।” ৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা তুলে দেন মাঠকর্মীদের হাতে।

এশিয়া কাপের ফাইনাল হয়ে রইল সিরাজময়। এমন অবস্থায় বিশ্বকাপেও তাঁকেই দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বাংলার শামিকে হয়তো অপেক্ষা করে থাকতে হবে। তবে রোহিত শর্মা খুশিই হবেন দলে ঢোকার জন্য এমন সুস্থ লড়াই হলে। চোটের জন্য দলগঠনে অসুবিধা হওয়ার থেকে এমন লড়াই ভারতের জন্যই ভাল।

আরও পড়ুন
Advertisement