Smriti Mandhana

বোর্ডের সিদ্ধান্ত দেখাবে নতুন দিশা

ক্রিকেটে ছেলে এবং মেয়েরা সমপরিমাণ ম্যাচ ফি পাবে। জয় শাহের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত সামনের দিকে তাকিয়ে নেওয়া বিশাল এক পদক্ষেপ।

Advertisement
স্মৃতি মন্ধানা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২২ ০৯:২৮
স্বস্তি: বোর্ডের সিদ্ধান্ত পেশাদার ক্রিকেটার গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। মনে করেন স্মৃতি। ফাইল চিত্র।

স্বস্তি: বোর্ডের সিদ্ধান্ত পেশাদার ক্রিকেটার গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। মনে করেন স্মৃতি। ফাইল চিত্র।

অক্টোবর ২৭, ২০২২। সোনার অক্ষরে লেখা একটা দিন বা যুগান্তকারী মুহূর্ত— অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। ওই দিনই ছেলে এবং মেয়ে ক্রিকেটারদের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। আমার কাছে ওই বিশেষ দিনটা ভীষণ গর্বের। আর এ কথাটা শুধু ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটারদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। দেশের সমস্ত এবং সব ক্ষেত্রের মেয়েদেরজন্যই কথাটা খাটে।

ক্রিকেটে ছেলে এবং মেয়েরা সমপরিমাণ ম্যাচ ফি পাবে। জয় শাহের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত সামনের দিকে তাকিয়ে নেওয়া বিশাল এক পদক্ষেপ। আমি এই খেলাটার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িয়ে। তাই জোর দিয়ে বলছি, এই সিদ্ধান্তটা কিন্তু অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। অনেক বাবা-মা এখন উৎসাহ পাবে তাঁদের মেয়েদের শুধু ক্রিকেটে নয়, বিভিন্ন খেলাধুলোয় দিতে। পেশাদার খেলোয়াড় বানাতে।

Advertisement

এই সমপরিমাণ অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু ভারতের মহিলা ক্রিকেটারদের জন্যই নয়, বিশ্বজুড়ে মহিলা ক্রিকেটারদেরও সাহায্য করবে। পরিবর্তনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে মেয়েদের ক্রিকেটকে। আমি খুব মন দিয়ে গোয়ায় হওয়া মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৯ টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জার সিরিজ়ের খোঁজখবর রেখেছি। তাকিয়ে আছি দক্ষিণ আফ্রিকায় মেয়েদের অনূর্ধ্ব ১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দিকেও। এই প্রথম এ রকম একটা প্রতিযোগিতা হতে চলেছে।

এক বার অতীতের দিকে তাকালে পরিষ্কার হয়ে যায়, ক্রিকেটে সিনিয়র মেয়েদের কতটা কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়েছিল একটা সময়ে। কিন্তু ২০১৭ সালের পর থেকে ছবিটা বদলাতে থাকে। দুরন্ত পারফরম্যান্স করে মেয়েদের দল খবরের শিরোনামে চলে আসতে থাকে। আর তার সঙ্গে আমাদের খ্যাতি আর মূল্যও বাড়তে থাকে।

আরও এক বার বোর্ড সচিব জয় শাহের কথা বলতেই হবে। মেয়েদের ক্রিকেটকে দ্রুত উন্নতির রাস্তায় নিয়ে এসেছেন বোর্ড সচিব। যার ফল সবাই দেখতে পাচ্ছেন। আমাদের সমর্থকদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। স্পনসররা এগিয়ে এসেছে। টিভি দর্শক সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আর গণমাধ্যমে আমাদের সমর্থন করার মতো মানুষের অভাব এখন নেই। এই সবই কিন্তু শুধু মহিলা ক্রিকেটারদের জন্য নয়, যে কোনও অ্যাথলিটের ক্ষেত্রেই একটা দারুণ ব্যাপার। বছর দশেক আগেও এই ধরনের কিছু আমি কল্পনাও করতে পারতাম না। আজ আমরা অনেক রাস্তা পেরিয়ে এখানে এসে পৌঁছেছি। ভারতীয় বোর্ডের এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্তের প্রভাব এই সিস্টেমের সব সদস্যের ক্ষেত্রেই পড়তে চলেছে।

আমি নিজে ব্যাটটা হাতে তুলে নিয়েছিলাম খানিকটা আবেগের বশে আর খানিকটা এই খেলাটার রোমাঞ্চের স্বাদ পেতে। ওই সময় আমাদের মতো ক্রিকেটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার মতো এর বাইরে আর বিশেষ কিছু ছিল না। আবেগটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেত।

আজ পুরো ছবিটাই বদলে গিয়েছে। আর্থিক নিরাপত্তা এসেছে, পরিকাঠামো একেবারে আধুনিক হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোচেরা দায়িত্ব নিচ্ছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের মান অনেক বেড়ে গিয়েছে। সব কিছুর নেপথ্যেই একটা নির্দিষ্ট চিন্তাধারা আছে। ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যত ম্যাচ খেলা হবে, তত এই রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখীই হবে। আর এর সুফল পাবে সব বয়সের মেয়েরাই।

ছেলে এবং মেয়ে ক্রিকেটারদের এই সমপরিমাণ অর্থ দেওয়ার নীতি মেয়েদের জন্য বুস্টার ডোজ়ের কাজ করবে। ওরা নিজেদের আরও নিংড়ে দেবে, দেশের সম্মান আরও বাড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। পুরুষ দলের সঙ্গে আমাদের তুলনা কেন হবে? আমাদের হাতে রসদ আছে নিজেদের রাস্তা নিজেরাই তৈরি করে নেওয়ার। আমি আত্মবিশ্বাসী, খুব ভাল কিছু করার দিকেই এগোচ্ছি আমরা।

স্বপ্নটা ধীরে হলেও নিশ্চিত ভাবে সত্যি হওয়ার দিকে এগোচ্ছে। আগের চেয়ে মেয়ে ক্রিকেটারদের অনেক পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে। ভক্তদের কাছ থেকে আমরা সম্মান পাচ্ছি। আমরা যে পরিশ্রমটা করেছি, তার মর্যাদা পাচ্ছি। আমাদের সামনে এখন লক্ষ্য আইসিসি ট্রফি জেতা। মেয়েরা যা প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখাচ্ছে, তাতে বলব, সে দিনও আর বেশি দূরে নেই। বোর্ডের বিশাল সমর্থন এবং পরিকল্পনামাফিক যে নীল নকশা তৈরি হয়েছে, তাতে বলাই যায়, মেয়েদের ক্রিকেট এখন অনেকসুযোগ নিয়ে আসছে।

আমি অল্পবয়সি সব মেয়েকে বলব, খেলাটাকে একটা পেশা হিসেবে দেখো। আমাদের ভবিষ্যৎ তোমাদের হাতেই। এসো, বিশ্বের দরবারে ভারতকে সত্যিকারের ক্রীড়াশক্তি হিসেবে তুলে ধরি।

আরও পড়ুন
Advertisement