এক দিনের সিরিজেও হার ভারতের। ছবি রয়টার্স
প্রথম এক দিনের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা দেখিয়ে দিয়েছিল, কী ভাবে স্কোরবোর্ডে বড় রান তুলে জিততে হয়। দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে দেখাল, রান তাড়া করতেও কোনও অংশে পিছিয়ে নেই তারা। দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ পকেটে পুরে নিল তেম্বা বাভুমার দল। টেস্টের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এক দিনের সিরিজও হাতছাড়া হল ভারতের।
প্রথম এক দিনের ম্যাচে ভারতকে যদি ডুবিয়ে থাকে মাঝের সারির ব্যাটারদের ব্যর্থতা, দ্বিতীয় ম্যাচে তা হলে দায়ী নির্বিষ বোলিং এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের বুদ্ধি। ভারত যে একের পর এক স্পিনার লেলিয়ে দেবে এটা বুঝতে পেরেই ক্রমাগত সুইপ খেলতে শুরু করলেন জানেমল মালান, কুইন্টন ডি’ককরা। ফলও মিলল। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যুজবেন্দ্র চহাল জ্বলে উঠতেই পারলেন না।
পার্লের বোলান্ড পার্কের যে পিচে প্রথম ম্যাচ খেলা হয়েছিল, দ্বিতীয় ম্যাচেও সেই একই পিচ ব্যবহার করা হয়। জেতার একটাই ফর্মুলা ছিল, প্রথমে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া এবং বড় রান তোলা। টসের পর ভারতের অধিনায়ক কেএল রাহুলের মুখেও শোনা গিয়েছিল সে কথাই। এমনকি, শুরুটা ভালই হয়েছিল ভারতের। আগের দিন রাহুল শুরুতে ফিরলেও, শুক্রবার উইকেট কামড়ে পড়েছিলেন তিনি। যোগ্য সঙ্গত দেন শিখর ধবন। তবে ৬৩ রানের মাথায় এডেন মার্করামকে সুইপ করতে গিয়ে উইকেট খোয়ালেন ধবন। নামলেন বিরাট কোহলী।
The drinks break doing the trick🍹
— Cricket South Africa (@OfficialCSA) January 21, 2022
How good was that from Aiden Markram?🤩 #SAvIND #BetwayODISeries #BePartOfIt pic.twitter.com/g1ZzBrcscf
প্রথম ম্যাচে অর্ধশতরানের মনে করা হয়েছিল এই ম্যাচেও তাঁর ব্যাট থেকে বড় রান আসবে। কিন্তু পঞ্চম বলে অদ্ভুত ভাবে আউট হয়ে ফিরলেন কোহলী। কেশব মহারাজের আপাত নিরীহ বলে ড্রাইভ করতে গেলেন। শর্ট কভারে থাকা বাভুমার কাছে লোপ্পা ক্যাচ গেল। অনেকেই তখন দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, কোহলী এ ভাবেও আউট হতে পারেন! তিন ধরনের ক্রিকেটেই তিনি আর নেতা নন। এটা মানসিক ভাবে কি কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলেছে তাঁর উপর? শুক্রবারের তাঁর আউট হওয়ার ধরন দেখে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে।
চার নম্বরে ঋষভ পন্থ ভারতের ধস সামলালেন। রাহুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেন ভারতের রান। রাহুলের তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন পন্থ। এর আগে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা হলেও, শুক্রবার যেন স্বাভাবিক মেজাজেই দেখা গেল ভারতের উইকেটকিপারকে। দ্বিতীয় উইকেটে ১১৫ রান যোগ হওয়ার পরে ভাঙল জুটি। অর্ধশতরান করেই মাগালার বলে ভ্যান ডার ডুসেনের হাতে ক্যাচ দিলেন রাহুল। পরের ওভারেই ফিরলেন পন্থ। অহেতুক তুলে মারতে গিয়ে উইকেট খোয়ালেন তিনি। না হলে এক দিনের ক্রিকেটে জীবনের প্রথম শতরান শুক্রবারই করে ফেলতে পারতেন।
রাহুল এবং পন্থ পরপর ফেরার পরই ভারতের রানের গতি কমে যায়। মাঝের অর্ডার ফের ব্যর্থ। শ্রেয়স আয়ার এবং বেঙ্কটেশ আয়ার হাতে অনেকটা সময় পেলেও বড় রান করতে পারলেন না। উল্টে আগের ম্যাচে অর্ধশতরান করার পর শুক্রবার ৪০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দিলেন শার্দূল ঠাকুর। তিনি না থাকলে ভারতের স্কোর ২৮৭ রানে পৌঁছয় না।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে নামার শুরু থেকেই বুঝিয়ে দেয় তারা হাল ছাড়তে রাজি নয়। একের পর এক বোলিং পরিবর্তন করেও কুইন্টন ডি’কক বা জানেমন মালানকে ফেরাতে পারছিলেন না রাহুল। ভারতের প্রথম সাফল্য আসে ২২তম ওভারে। ততক্ষণে প্রথম উইকেটে উঠে গিয়েছে ১৩২ রান। ৭৮ রান করে শার্দূলের বলে ফিরে যান ডি’কক। ক্রিজে আসেন বাভুমা। দু’জনে মিলে ঠান্ডা মাথায় খেলে ক্রমশ জয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। একদিনের ক্রিকেটে চতুর্থ শতরানের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছিলেন মালান। কিন্তু ক্রিজে জমে গিয়েও ৯১ রানের মাথায় বুমরার বলের লাইন বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেলেন। তার পরের ওভারেই ফিরলেন বাভুমাও।
কিন্তু মার্করাম এবং ডুসেনের সৌজন্যে জয়ের রান তুলতে অসুবিধা হয়নি প্রোটিয়াদের।