রবিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নামবে ভারত। —ফাইল চিত্র
সাবিত্রী দেবী ইনভার্টার খুঁজছেন। তাঁর মেয়ে অর্চনা খেলবেন মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের নাম একাধিক বার সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। কিন্তু সেই সময় লজ্জায় মুখ ঢেকেছেন উন্নাওয়ের মানুষেরা। সংবাদমাধ্যমকে দেখলে পিছিয়ে গিয়েছেন। ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ বার তাঁদের কাছে সময় এসেছে বুক চিতিয়ে সামনে আসার। আর সেই কারণ অর্চনা। রবিবার যিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামবেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর লক্ষ্য নিয়ে। কিন্তু তাঁর মা সাবিত্রী দেবী সেই ম্যাচ দেখতে পারবেন তো?
১৮ বছরের অর্চনা অফ স্পিনার। এ বারের বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৬ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইতিহাস তৈরির মুখে দাঁড়িয়ে তাঁরা। এ বারেই প্রথম মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে আইসিসি। সেই প্রতিযোগিতার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছেন অর্চনারা। বাকি আর একটি ম্যাচ। সব থেকে বড় ম্যাচ। এর আগে তিন বার বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেও হারতে হয়েছে ভারতের সিনিয়র দলকে। এ বার ছোটদের কাছে সুযোগ ভারতের সম্মান বাড়িয়ে দেওয়ার। এত বড় ম্যাচে খেলবে তাঁর মেয়ে কিন্তু চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন সাবিত্রী দেবী। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে বিদ্যুৎবিভ্রাট বড় সমস্যা। অর্চনাদের বাড়িতে যদিও টিভি নেই। সাবিত্রী দেবী খেলা দেখবেন তাঁর মেয়ের কিনে দেওয়া মোবাইলে। কিন্তু ফোনের চার্জ যদি শেষ হয়ে যায়? এটাই এখন চিন্তা সাবিত্রীর।
২০০৭ সালে অর্চনার বাবা শিবরাম মারা যান। তখন থেকে মেয়েকে একাই মানুষ করছেন সাবিত্রী। অভাবের সংসারে টিভি কেনা সম্ভব হয়নি। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাবিত্রী বলেন, “আমাদের গ্রামে বিদ্যুৎ থাকবে কি না সেটার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সেই কারণে আমি টাকা জোগাড় করেছি ইনভার্টার কেনার জন্য। আমার মেয়ে বিশ্বকাপের দলে খেলছে। আশা করি মোবাইলে সেই খেলা আমি বিনা বাধায় দেখতে পাব।”
It's down to two
— T20 World Cup (@T20WorldCup) January 28, 2023
Who will get their hands on the inaugural ICC Women's #U19T20WorldCup? pic.twitter.com/CDh5IGnAaa
শুধু স্বামী নয়, ছেলেকেও হারিয়েছেন সাবিত্রী। ছ’বছর আগে সাপের কামড়ে প্রাণ হারান অর্চনার ভাই বুদ্ধিমান। সেই বছরই অর্চনার ক্রিকেট শেখা শুরু পুনম গুপ্ত এবং কপিল পাণ্ডের কাছে। যিনি ভারতীয় দলের স্পিনার কুলদীপ যাদবের কোচ। সাবিত্রী বলেন, “একটা এক একর জমিতে চাষ করতাম। আমাদের দুটো গরু ছিল। সেই দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতাম। লোকে আমাকে অনেক কথা শুনিয়েছে কারণ আমি মেয়েকে মোরাদাবাদে কস্তুরবা গাঁধী গার্লস স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। ওখানে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত অর্চনা। সেখানে সুযোগ পাওয়ার আগে রোজ ৩০ টাকা বাস ভাড়া দেওয়া কঠিন ছিল আমার পক্ষে। এখন যদিও লোকে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে যায়।”
শুধু সাবিত্রী নন, ভারতীয় দলে থাকা অনেক মেয়ের পরিবারের চোখ থাকবে রবিবারের ম্যাচের দিকে। দলের অধিনায়ক শেফালি বর্মা। শনিবার ১৯ বছর বয়স হল তাঁর। সিনিয়র দলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সিনিয়র দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০২০ সালে ফাইনাল খেলেছিলেন শেফালি। সেই ম্যাচ ভারত জিততে পারেনি। সেই সময় শেফালির বাবা বলেন, “আমার মেয়ে আরও সুযোগ পাবে।” শেফালি বলেন, “আমার বাবা সব সময় বলত আমি সেরা। আমাকে সেটা অনুভব করিয়েছে। ধন্যবাদ বাবা। আমাকে খেলতে দিতে চাননি অনেক প্রতিবেশী। তাঁদের কথায় পাত্তা না দিয়ে বাবা আমাকে খেলতে নিয়ে গিয়েছে। আমি যদি ট্রফি জিতি তা হলে সেটা বাবার জন্যই জিতব। বাবা না থাকলে আমি এখানে পৌঁছতে পারতাম না।”
রবিবার ভারতীয় জার্সিতে দেখা যাবে সোনম যাদব। তাঁর মা গুড্ডি যাদব চাইতেন না যে, মেয়ে ক্রিকেট খেলুক। ফিরোজ়াবাদ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রাজা কা তাল বলে একটি জায়গায় তাঁদের বাড়ি। রবিবার সেখানে গোটা পরিবার একসঙ্গে খেলা দেখবে সোনমের পরিবার। বাঁহাতি স্পিনার সোনম ভারতীয় দলের সব থেকে কনিষ্ঠ ক্রিকেটার। ১৫ বছরের সোনমের দাদা আমন যাদব ক্রিকেট খেলতেন। কিন্তু তাঁকে খেলা ছেড়ে কাচের কারখানায় কাজ নিতে হয় বাধ্য হয়ে। সেখানেই কাজ করেন তাঁর বাবা মুকেশ। আমন বলেন, “১৮ বছর বয়স থেকে কাজ করতে শুরু করি। বোনেদের বিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দরকার ছিল। সোনমের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই আমরা একটা আলাদা কিছু দেখেছিলাম। ও খেলাধুলার সঙ্গে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। সেই কারণেই চাইতাম ও যেন ওর স্বপ্নপূরণ করতে পারে।”
বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং স্কটল্যান্ডকে হারায় ভারত। সুপার সিক্সে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দেন শেফালিরা। সেমিফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারায় ভারত। এ বার সামনে ইংল্যান্ড। জিততে পারলেই ইতিহাস তৈরি করবেন শেফালিরা।