মাহমুদুল্লা। ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বকাপে পর পর হার। তার মাঝে নতুন বিতর্ক মাহমুদুল্লাকে নিয়ে। মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শতরানের পরেই তৈরি হয় এই বিতর্ক। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন ওঠে, কেন তাঁকে উপরের দিকে ব্যাট করতে পাঠানো হচ্ছে না? এই বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মহমুদুল্লা।
আট, সাত, ছয় নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হচ্ছে মাহমুদুল্লাকে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে বিশ্বকাপে এক মাত্র তিনিই ধারাবাহিক ভাবে রান পাচ্ছেন। চেনা ফর্মে রয়েছেন। তবু কেন এত নীচে ব্যাট করতে পাঠানো হচ্ছে তাঁকে? মাহমুদুল্লা শতরানের পরেও এই বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। যেমন জাতীয় দলে মাস পাঁচেক উপেক্ষিত থাকার সময়ও মুখ বন্ধ রেখেছিলেন। আরও এক বার বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তিনি বলেছেন, ‘‘মাঠে ভাল সময় কাটাতে পেরেছি এই টুকুই। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। এ সব নিয়ে কথা বলতে চাই না। তা ছাড়া এখন এটা নিয়ে কথা বলার সঠিক সময়ও নয়।’’
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশেই সুযোগ হয়নি। নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে আট নম্বরে নেমে করেছিলেন অপরাজিত ৪১। ভারতের বিরুদ্ধে সাত নম্বরে নেমে ৩৬ বলে ৪৬ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ব্যাট করলেন ছয় নম্বরে। অর্থাৎ, তাঁকে নিয়ে স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কোচ চন্দিকা হাতুরেসিংহে এবং অধিনায়ক শাকিব আল হাসান। বিতর্ক চাপা দিতে মাহমুদুল্লা বলেছেন, ‘‘ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ভাবি না। কোচ জানিয়েছিলেন ছয় নম্বরে ব্যাট করতে হবে। আমি সেখানে নেমে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’
গত মার্চ মাসে ইংল্যান্ড সিরিজ়ের পর জাতীয় দল থেকে এক রকম ছেঁটে ফেলা হয়েছিল মাহমুদুল্লাকে। তাঁকে বাদ দিয়েই বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করছিলেন বাংলাদেশের কোচ। মাহমুদুল্লাকে দলে না রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারাও সদুত্তর দিতে পারছিলেন না। শেষে বিশ্বকাপের আগে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজ়ে সুযোগ পান। সেই সিরিজ়ে রান পাওয়ায় মাহমুদুল্লার সামনে খুলে যায় বিশ্বকাপের দরজা।
অনেকেই বলেন, বিশ্রামের কথা বলে জাতীয় দল থেকে দূরে রাখা হয়েছিল মাহমুদুল্লাকে। সেই পাঁচ মাসের কথা এখনও মনে আছে তাঁর। মাহমুদুল্লা বলেছেন, ‘‘হয়তো আমার বিশ্রামটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল। এটা নির্বাচকেরা বলতে পারবেন। আমার হাতে নেই বিষয়টা। আমি শুধু নিজের কাজ করতে পারি সততার সঙ্গে।’’
এক দিনের ক্রিকেটে মাহমুদুল্লার শতরান রয়েছে চারটি। সব কটিই আইসিসি প্রতিযোগিতায়। তিনটি আবার বিশ্বকাপে। তাঁর শেষ শতরানটি এসেছে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটার। ম্যাচের পর জানিয়েছেন নিজের অনুভূতির কথা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শতরানের ইনিংস খেলার পর তিনি বলেছেন, ‘‘শতরানের কথা ভেবে খেলিনি। আমার লক্ষ্য ছিল পুরো ৫০ ওভার ব্যাটিং করার। মুস্তাফিজুর রহিমের সঙ্গে ব্যাট করার সময়, ওকে ঝুঁকি না নেওয়ার কথা বলেছিলাম। লক্ষ্য ছিল উইকেট বাঁচিয়ে ব্যাট করার। যতটা সম্ভব রান তুলতে চেয়েছিলাম। কারণ রান রেট অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়। খুব কম রানে অলআউট হয়ে গেলে নেট রান রেটে প্রভাব পড়ে। তাই শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকতে চেয়েছিলাম। দলের জন্য যতটা বেশি রান করাই ছিল আসল লক্ষ্য।’’
কাকে উৎসর্গ করবেন এই সাফল্য? মাহমুদুল্লা বলেছেন, ‘‘অবশ্যই পরিবারের সবাইকে উৎসর্গ করব। বিশেষ করে তাঁদের উৎসর্গ করেছি, যাঁরা গত কয়েক মাসে আমার পাশে ছিলেন। আমার জন্য দোয়া করেছেন।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘নিজেকে কী ভাবে প্রস্তুত রেখেছি বলতে পারব না। চেষ্টা করেছি ফিটনেস ঠিক রাখতে। কঠোর পরিশ্রম করে গিয়েছি। এর ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না।’’
বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ মাহমুদুল্লা বলেছেন, ‘‘কে আর হারতে পছন্দ করে! আমরা দ্রুত উইকেট হারাচ্ছি। এই বিষয়টা এখনও ঠিক করা যায়নি। প্রতিপক্ষকেও নির্দিষ্ট রানের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারছি না আমরা।’’
বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচ হারের পর শাকিব হয়তো বুঝেছেন মাহমুদুল্লাকে ব্যাটিং অর্ডারের আরও উপরের ব্যবহার করলে ভাল ফল হতে পারে। সেমিফাইনালের রাস্তা কঠিন করে ফেলার পর ৩৭ বছরের ব্যাটারের উপর আস্থা রাখতে চাইছেন শাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর তাঁকে ব্যাটিং অর্ডারের উপরে নিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।