ICC ODI World Cup 2023

কাজ সহজ করে দিয়েছিল চোট! কী ভাবে? ‘এক পায়ে’ ২০১ রান করে জানিয়ে দিলেন ম্যাক্সওয়েল

কোনও রকমে দাঁড়িয়ে থেকে ১২৮ বলে ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস। ম্যাক্সওয়েল ৭০ শতাংশের বেশি রান করেছেন মাঠের বাইরে বল পাঠিয়ে। এমন ইনিংসের জন্য নিজের চোটকে কৃতিত্ব দিয়েছেন অসি অলরাউন্ডার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৫২
picture of Glenn Maxwell

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ছবি: এএফপি।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একার হাতে অস্ট্রেলিয়াকে হারা ম্যাচ জিতিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। মঙ্গলবার রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়া দলকে একার হাতে বাঁচিয়েছেন তিনি। তাঁর ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রানের ইনিংসে মুগ্ধ ক্রিকেট বিশ্ব। তবে ম্যাক্সওয়েলের দাবি, চোটের জন্যই এমন অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলতে পেরেছেন।

Advertisement

দলের প্রথম সারির ব্যাটারেরা ব্যর্থ হওয়ার পর ২২ গজে এসেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। দলের রান তখন ৪ উইকেটে ৪৯। তার পরেও ধস আটকায়নি অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের। ৯১ রানে ৭ উইকেট হারায় তারা। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ভরসা দেন ম্যাক্সওয়েলকে। তাতেই আফগানিস্তানের প্রায় নিশ্চিত জয় ছিনিয়ে নেন তিনি। অথচ ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারছিলেন না ম্যাক্সওয়েল। পিঠে ব্যথা ছিল আগে থেকেই। ইনিংসের মাঝপথে হ্যামস্ট্রিংয়েও টান ধরে তাঁর। সেই পরিস্থিতিতে সাজঘরে ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল না। কারণ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার জন্য আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে জয় ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাল ছাড়েননি অসি অলরাউন্ডার। বরং আরও শক্ত হাতে হাল ধরেন তিনি। তাতেই এসেছে অবিশ্বাস্য জয়। এক দিনের ক্রিকেটে প্রথম দ্বিশতরান পেয়েছেন ম্যাক্সওয়েল।

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা উচ্ছ্বসিত। ম্যাক্সওয়েলও খুশি দলকে গুরুত্বপূর্ণ জয় এনে দিতে পেরে। যদিও তাঁর বক্তব্যে অস্ট্রেলীয় সুলভ আগ্রাসী মেজাজ নেই। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর বক্তব্য, ‘‘পিঠে একটা ব্যথা আগে থেকেই ছিল। সঙ্গে ডান পায়ে টান ধরেছিল। বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তার সঙ্গে আবার বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে যন্ত্রণা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ কঠিন হয়ে গিয়েছিল।’’ তা-ও এমন ইনিংস খেললেন কী ভাবে? ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘‘যন্ত্রণাই আমার কাজ কিছুটা হলেও সহজ করে দেয়। বেশি কিছু ভাবার মতো পরিস্থিতি তখন ছিল না। শুধু চেষ্টা করেছি বল দেখতে এবং বড় শট খেলতে। শুধু বল উড়িয়ে খেলার চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া কিছু করারও ছিল না আমার।’’

ম্যাক্সওয়েলের পরিস্থিতি দেখে আশঙ্কায় ছিলেন কামিন্সও। ম্যাক্সওয়েল কত ক্ষণ ব্যাট করতে পারবেন, তা-ও বোঝা যাচ্ছিল না। তাই অ্যাডাম জ়াম্পাকে যে কোনও সময় মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত থাকার বার্তা পাঠিয়েছিলেন কামিন্স। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর মাঠে নামতে হয়নি। আহত ম্যাক্সওয়েলকে আউট করতেই পারেননি মুজিব উর রহমান, রশিদ খান, নবীন উল হকেরা। আহত ম্যাক্সওয়েলের আগ্রাসী ব্যাটিং থামাতে পারেননি আফগান বোলারেরা। তিনি মারেন ২১টি চার এবং ১০টি ছক্কা। অর্থাৎ, ২০১ রানের মধ্যে ১৪৪ রান ম্যাক্সওয়েল করেন মাঠের বাইরে বল পাঠিয়ে।

কামিন্স বলেছেন, ‘‘মনে হচ্ছিল ম্যাক্সওয়েলের পক্ষে ব্যাট করা সম্ভব হবে না। উঠে যেতে হবে। জ়াম্পাকে তৈরি থাকতে বলেছিলাম। নড়াচড়া করতেও পারছিল না ম্যাক্সওয়েল। মাঠে ফিজিয়ো জনকে ডাকতে হয়েছিল। ও ম্যাক্সওয়েলকে দাঁড়ানোর মতো ব্যবস্থা করে দেয়। জন ওকে বলেছিল, ‘যত ক্ষণ সম্ভব মাঠে থাকার চেষ্টা করো। তুমি উঠে এলে আর সুযোগ থাকবে না। একটা জঘন্যতম ফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। তুমি উঠে দাঁড়াও। শেষ একটা চেষ্টা করো।’’’ ম্যাক্সওয়েলের সেই চেষ্টাই জয় এনে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। উইকেটের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে সতীর্থের অবিশ্বাস্য ইনিংসের সাক্ষী থেকেছেন কামিন্স।

এ বারের বিশ্বকাপের শুরুতে অস্ট্রেলিয়াকে চেনা ফর্মে দেখা যায়নি। অস্ট্রেলীয়দের পরিচিত লড়াকু মেজাজটাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। তবে প্রতিযোগিতা যত এগিয়েছে, কামিন্সের দলকে তত চেনা মেজাজে দেখা গিয়েছে। মঙ্গলবার ম্যাক্সওয়েলের ইনিংসে দেখা গিয়েছে অস্ট্রেলীয়দের পরিচিত লড়াই, হার না মানা অদম্য জেদ আর একরোখা ক্রিকেট।

আরও পড়ুন
Advertisement