রোহিত শর্মা এবং বাবর আজ়ম। ছবি: আইসিসি।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই লড়াই সমানে-সমানে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দেবে না। বিরাট কোহলি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, এই ম্যাচে দর্শকদের আওয়াজটাই অন্য মাত্রার হয়। ক্রিকেটারেরাও এই ম্যাচ নিয়ে উত্তেজিত থাকেন। শনিবারের ম্যাচে তাই নজর থাকবে দুই দলের সেরা ক্রিকেটারদের দিকে। দেখে নেওয়া যাক দুই দলে কার বিরুদ্ধে কাকে লড়াইয়ে দেখা যেতে পারে।
রোহিত বনাম আফ্রিদি
ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ওপেন করতে নামবেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার শাহিন আফ্রিদিকে দেখা যেতে পারে। আগেও বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে রোহিতকে নড়বড়ে দেখিয়েছিল। তাই পাকিস্তান আফ্রিদিকে শুরুতেই রোহিতের বিরুদ্ধে আক্রমণে আনতে পারে। নতুন বলে আফ্রিদি যথেষ্ট ভয়ঙ্কর। বাঁহাতি বলে একটি দুরূহ কোণ থেকে বল করতে পারেন। সেই সঙ্গে রয়েছে গতি। রোহিতকে সামলে থাকতে হবে আফ্রিদির বিরুদ্ধে। তবে ভারত অধিনায়ক এখন আগ্রাসী ব্যাট করতে পছন্দ করেন। তিনি শুরু থেকেই আফ্রিদিকে আক্রমণ করতে পারেন। তাতে বাঁহাতি পেসারের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরতে পারে। সেই চেষ্টাই করবেন রোহিত। মাত্র দু’বার রোহিত এবং আফ্রিদি একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছেন। এক দিনের ক্রিকেটে তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে খেলেছিলেন ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে। সে বার আফ্রিদির বিরুদ্ধে ১৮ বলে ১৯ রান করেছিলেন ভারত অধিনায়ক। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিতকে প্রথম বলে আউট করে দিয়েছিলেন শাহিন। দু’বছর পর আবার মুখোমুখি তাঁরা।
বাবর বনাম কুলদীপ
পাকিস্তান দলের সেরা অস্ত্র অধিনায়ক বাবর আজ়ম। তাঁর ব্যাট চললে রান উঠবে। আইসিসির ক্রমতালিকায় এক দিনের ক্রিকেটে এক নম্বর ব্যাটার বাবর। তাঁকে আটকানোর জন্য কুলদীপ যাদবকে ব্যবহার করতে পারে ভারত। পাকিস্তানের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন বাবর। তিনি ব্যাট করতে নামলে রোহিত বল তুলে দিতেই পারেন কুলদীপের হাতে। ভারতের চায়নাম্যান স্পিনার এর আগে তিন ম্যাচে দু’বার বাবরকে আউট করেছেন। আরও এক বার সেই সুযোগ পেতে পারেন কুলদীপ। ভারতের বিরুদ্ধে বাবর এখনও পর্যন্ত পাঁচটি এক দিনের ম্যাচ এবং চারটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। এর মধ্যে তাঁকে কুলদীপ ছাড়াও আউট করেছিলেন উমেশ যাদব, কেদার যাদব, রবি বিষ্ণোই, ভুবনেশ্বর কুমার এবং আরশদীপ সিংহ। এঁরা কেউই এশিয়া কাপে ভারতের দলে নেই। তাই কুলদীপ থাকায় বাবর ব্যাট করতে নামলে তাঁকে আক্রমণে এনে চাপ তৈরি করতে পারে ভারত।
বিরাট বনাম রউফ
ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচে আবার মুখোমুখি হতে চলেছেন বিরাট কোহলি এবং হ্যারিস রউফ। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের এই পেসারের এক ওভারে ২৮ রান নিয়েই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন বিরাট। রউফের কাছে সুযোগ থাকবে বদলা নেওয়ার। রউফ এক দিনের ক্রিকেটে ভারতের বিরুদ্ধে কখনও খেলেননি। চারটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। সেই চার ম্যাচে চারটি উইকেট নিয়েছেন রউফ। কিন্তু বিরাটের উইকেট কখনও নিতে পারেননি তিনি। এই বার সেই সুযোগ রয়েছে তাঁর কাছে। বিরাট এখন ফর্মে ফিরেছেন। তিনি চাইবেন আরও এক বার রউফ এবং পাকিস্তানের বাকি বোলারদের বিরুদ্ধে বড় রান করতে। ভারতীয় সমর্থকেরাও সেটাই চাইবেন।
রিজ়ওয়ান বনাম হার্দিক
বাবর ছাড়া আরও এক ব্যাটার ভারতের চিন্তার কারণ হতে পারেন। তিনি মহম্মদ রিজ়ওয়ান। পাকিস্তানের ব্যাটারের বিরুদ্ধে তাই আক্রমণে আনা হতে পারে হার্দিক পাণ্ড্যকে। ভারতীয় অলরাউন্ডার এর আগে দু’বার আউট করেছেন রিজ়ওয়ানকে। তাই এই ম্যাচেও হার্দিকের উপর দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এক দিনের ক্রিকেটে মাঝের ওভারেই বল করতে দেখা যায় হার্দিককে। রিজ়ওয়ানও পাকিস্তানের হয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নামেন। তাই রিজ়ওয়ান ব্যাট করতে নামলে হার্দিকের হাতে বল তুলে দিতে পারেন রোহিত।
ফখর বনাম বুমরা
পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জমানের বিরুদ্ধে ভারতের অস্ত্র অবশ্যই যশপ্রীত বুমরা। চোট সারিয়ে দলে ফিরেছেন ভারতীয় পেসার। নতুন বলে আক্রমণ শুরু করবেন তিনি। শুরুতেই ফখরকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতের ভরসা বুমরা। নতুন বলে উইকেট তুলে নিতে চাইবে ভারত। সেই কাজে ভারতের হয়ে বড় ভূমিকা নিতে পারেন বুমরা। ফখর চাইবেন পাকিস্তানকে বড় রান করার ভিত গড়ে দিতে। তাই ফখর বনাম বুমরা লড়াই এশিয়া কাপে দেখা যেতেই পারে।
শাদাব বনাম জাডেজা
দুই দলের দুই স্পিনার অলরাউন্ডার। ব্যাটে, বলে দু’জনেই নিজেদের দলের সম্পদ। শাদাব খান পাকিস্তানের সহ-অধিনায়ক। রবীন্দ্র জাডেজা ভারতীয় দলের ভারসাম্য রক্ষা করেন। প্রয়োজনে ব্যাট হাতে যেমন বড় ভূমিকা নিতে পারেন, তেমনই বল হাতে জুটি ভাঙতেও দক্ষ। ফিল্ডার হিসাবেও দলের অন্যতম সেরা জাডেজা। শাদাব এবং জাডেজার লড়াই দেখা যেতে পারে শনিবার। একে অপরকে ছাপিয়ে যেতে চাইবেন তাঁরা। যিনি ভাল খেলবেন, তাঁর দলও সুবিধা করে নেবে ম্যাচে।
শুভমন বনাম নাসিম
প্রথম বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে নামবেন শুভমন গিল। ভারতীয় ওপেনার এর আগে কখনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ম্যাচ খেলেননি। তাঁর সঙ্গে লড়াই দেখা যেতে পারে নাসিম শাহের। ভারতের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও এক দিনের ক্রিকেটে প্রথম বার নামবেন এই তরুণ পেসার। শুভমনের বয়স ২৩, নাসিমের ২০ বছর। দুই তরুণ ক্রিকেটারের লড়াই দেখা যেতে পারে এশিয়া কাপে। দু’জনেরই তাগিদ থাকবে দলের হয়ে বড় ভূমিকা নেওয়ার। তাঁরা জানেন এই ম্যাচে ভাল খেলতে পারলে দর্শক মাথায় করে রাখবে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবেন শুভমন এবং নাসিম। তাই তাঁদের মধ্যেও লড়াই দেখা যেতে পারে শনিবার।