অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার উসমান খোয়াজার চোখের সামনে ইংল্যান্ডের ছয় ফিল্ডার। এই ফিল্ডিং পরিকল্পনাকেই বলা হচ্ছে ‘ব্রামব্রেলা’। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
অ্যাশেজ়ের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন মধ্যাহ্নভোজের এক ঘণ্টা আগে টেস্ট ক্রিকেটকে আরও এক নতুন উপহার দিলেন বেন স্টোকস। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার উসমান খোয়াজাকে আউট করতে তিনি যে ফিল্ডিং সাজালেন তাকে বলা হচ্ছে ‘ব্রামব্রেলা’। বাজ়বল তো ছিলই। এ বার আরও এক নতুন পরিকল্পনা দেখা গেল ইংরেজ অধিনায়কের কাছে। আর সেই পরিকল্পনাতেই প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করে লিড নিল ইংল্যান্ড।
দ্বিতীয় দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই তৃতীয় দিনের শুরুটা করেছিলেন খোয়াজা। একই রকম ধৈর্য। কোনও তাড়াহুড়ো না করে খেলছিলেন। জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রডের পেস বা মইন আলির স্পিন, কিছুই সমস্যায় ফেলতে পারছিল না খোয়াজাকে। সব রকম চেষ্টা করেন স্টোকস। ক্রিকেটের নিয়মের মধ্যে যত রকম পরিকল্পনা সম্ভব সব করতে দেখা যায় ইংরেজ অধিনায়ককে। কিন্তু কিছুতেই কাজ না হওয়ায় অবশেষে ক্রিকেটের নিয়মের বাইরে যান স্টোকস। বার করেন তাঁর অস্ত্র ‘ব্রামব্রেলা’।
কী এই ‘ব্রামব্রেলা’?
মধ্যাহ্নোজের বিরতির ঘণ্টাখানেক আগে ওলি রবিনসনের ওভারে দেখা যায় খোয়াজার বিরুদ্ধে অফসাইডে ৩০ গজ বৃত্তের ভিতরে চার জন ফিল্ডার রাখা হয়েছে। তার মধ্যে দু’জন তাঁর একেবারে কাছে। বাকি দু’জন একটু দূরে দাঁড়িয়ে। তাতেও খোয়াজাকে সমস্যায় ফেলা যায়নি। তাই রবিনসনের পরের ওভারে দেখা যায়, ব্যাটারের চোখের সামনে অফ ও লেগ সাইডে তিন জন করে মোট ছ’জন ফিল্ডার দাঁড়িয়ে। অফ সাইডে শর্ট কভার থেকে শর্ট মিড অফ ও লেগ সাইডে শর্ট স্কয়্যার লেগ থেকে শর্ট মিড অনের মধ্যে এই ছয় ফিল্ডার দাঁড়িয়েছিলেন। খোয়াজার থেকে তাঁদের দূরত্ব ছিল ১২ থেকে ১৫ মিটার। ফিল্ডারদের একে অপরের সঙ্গে এক থেকে দেড় মিটার দূরত্ব ছিল। ব্যাটারের চোখের সামনে ছাতার মতো দাঁড় করানো এই ফিল্ডিংকেই বলা হচ্ছে ‘ব্রামব্রেলা’।
Only in Test Cricket 😍
— Sony Sports Network (@SonySportsNetwk) June 18, 2023
An unconventional field setup from 🏴 forced Usman Khawaja to come down the track and ended up getting bowled 😲👏#SonySportsNetwork #TheAshes #ENGvAUS #RivalsForever pic.twitter.com/jb0XKnBJCv
কেন এই নাম?
বার্মিংহ্যামে ১৯৮১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পিচ ঢাকার জন্য একটি বড় কভার ব্যবহার করা হত। এই কভার অনেকটা ছাতার মতো দেখতে। তাকে বলা হত ব্রামব্রেলা। ইংল্যান্ডের এই ফিল্ডিং সাজানো দেখেও অনেকটা ছাতার কথা মাথায় আসছে। সেই কারণেই এই ধরনের ফিল্ডিংকে ব্রামব্রেলা বলা হচ্ছে।
কেন ‘ব্রামবেলা’?
এই ধরনের ফিল্ডিং সাজানোর আসল উদ্দেশ্য ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করা। তার কয়েকটি কারণ রয়েছে। ১) চোখের সামনে ছ’জন ফিল্ডার থাকায় ব্যাটারের মনে প্রশ্ন জাগবে। যেমন বোলার কি বাউন্সার করবেন? নইলে কেন কাছে এত ফিল্ডার। ২) সামনে ছয় ফিল্ডার থাকায় অফ ও লেগ সাইডে অনেকটা জায়গা অরক্ষিত থাকবে। ফলে ব্যাটারের মনে লোভ জাগতে পারে অন্য ধরনের শট খেলার। সেটা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন তিনি। ৩) একই রকম ফিল্ডিংয়ে খেলে অভ্যস্ত ব্যাটারকে খানিক ভড়কে দিতেই এই নতুন পরিকল্পনা। কারণ, এই ধরনের ফিল্ডিংয়ে সাধারণত কেউ খেলে অভ্যস্ত নন। ফলে তাঁর সাময়িক সমস্যা হতে পারে। আর সেখানেই ফায়দা তুলে নিতে পারে বোলিং দল।
‘ব্রামবেলা’ কি সফল?
স্টোকসের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছেন খোয়াজাও। নইলে ৩২০ বল খেলা ব্যাটার কেন ও ভাবে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে পয়েন্ট অঞ্চলে খেলার চেষ্টা করবেন। খোয়াজা সাধারণত উইকেটে দাঁড়িয়ে থেকে খেলেন। যে শট খেলতে গিয়ে তিনি আউট হলেন সেটা তাঁর কাছে খুব একটা দেখা যায় না। আর সেই বলটাও বুদ্ধি করে করেন রবিনসন। খোয়াজাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখেই ইয়র্কার দেন তিনি। বলে ব্যাট লাগাতে পারেননি খোয়াজা। বোল্ড হয়ে ফেরেন ১৪১ রান করা ব্যাটার।
তবে শুধু সেখানেই থেমে থাকেননি স্টোকস। অস্ট্রেলিয়ার নীচের সারির ব্যাটারদের জন্যও একই রকমের ফিল্ডিং সাজান তিনি। যেমন, প্যাট কামিন্সের জন্য লেগ সাইডে বাউন্ডারিতে পাঁচ জন ফিল্ডার রেখে ক্রমাগত বাউন্সার দেওয়া শুরু করেন রবিনসন ও ব্রড। কয়েকটি বল ছাড়লেও শেষ পর্যন্ত লোভে পড়ে বড় শট মারতে গিয়ে আউট হন কামিন্স। নেথান লায়নকেও একই পদ্ধতিতে আউট করে ইংল্যান্ড। স্কট বোল্যান্ডের জন্য আবার অন্য রকম পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তাঁর ঠিক সামনে দু’জন ফিল্ডারকে রাখা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে এক জনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বোল্যান্ড।
একটা সময় মনে হচ্ছিল, প্রথম ইনিংসে বড় লিড নেবে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু খোয়াজা আউট হওয়ার পরে মাত্র ১৪ রানে বাকি তিন উইকেট পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। ফলে ৭ রানের লিড পায় ইংল্যান্ড। তার নেপথ্যে স্টোকসের পরিকল্পনা। বাজবলের সঙ্গে ব্রামব্রেলা।