ভারতীয় জার্সিতে সফল অর্শদীপ। ছবি: এএফপি
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচে তরুণ অর্শদীপ সিংহের হাতে বল তুলে দেওয়া হয়েছিল ১৮ এবং ২০তম ওভারে। দুই ওভারেই উইকেট তুলে নেন তিনি। সেই ম্যাচে তিনি উইকেট না নিলেও হয়তো ভারত জিতত। কিন্তু ওই সময় এসে উইকেট তুলে নেওয়া এবং মাত্র সাত রান দেওয়া বুঝিয়ে দেয় যে ডেথ ওভারে তিনি কতটা কার্যকর। অর্শদীপ এখনও পর্যন্ত মাত্র চারটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও ডেথ ওভারে তাঁর দক্ষতা নজর কেড়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে কি তাঁকে দেখা যাবে?
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম তিনটি ম্যাচে বুমরা না থাকলেও ডেথ ওভারে বল করতে এসে ভারতকে ভরসা দিয়েছেন অর্শদীপ। তাঁর সম্পর্কে ভারতের বোলিং কোচ পরেশ মাম্ব্রে বলেন, “অর্শদীপকে আইপিএলের সময় থেকে দেখছি। ওর সব থেকে বড় গুণ হচ্ছে চাপ নেওয়ার ক্ষমতা। লক্ষ করে দেখবেন অর্শদীপ সব থেকে কঠিন সময়ে বল করে। পাওয়ার প্লে এবং ডেথ ওভার। সেখানে নিজের চরিত্র বুঝিয়েছে ও। ভারতীয় দলের হয়ে অর্শদীপ যে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে তাতে আমি খুশি।”
অর্শদীপের বয়স মাত্র ২৩ বছর। ছ’ফুট তিন ইঞ্চির এই তরুণ পেসার ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারেন। পঞ্জাবের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে ২০১৮ সালে অভিষেক হয় অর্শদীপের। ছ’টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ২১টি উইকেট। লিস্ট এ-তে খেলেছেন ১৭টি ম্যাচ। সেখানেও নিয়েছেন ২১টি উইকেট। অর্শদীপ ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলেও ছিলেন। ২০১৯ সালে আইপিএলের নিলামে তাঁকে কিনে নেয় কিংস ইলেভেন পঞ্জাব (এখন পঞ্জাব কিংস)। প্রথম বছর মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেন অর্শদীপ। উইকেট নেন তিনটি। পরের বছর আটটি ম্যাচ খেলে নেন ন’টি উইকেট। গত বছর ১২টি ম্যাচে অর্শদীপ নেন ১৮টি উইকেট। এ বারের আইপিএলে পঞ্জাবের হয়ে সব ক’টি ম্যাচ (১৪) খেলেন তিনি। ১০টি উইকেট নেন।
ভারতের হয়ে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু এখনই তাঁকে নিয়ে বিরাট কোনও উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নন প্রাক্তন নির্বাচকরা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিমানে তিনি উঠবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেবাং গাঁধী বললেন, “এত তাড়াতাড়ি বলা মুশকিল যে অর্শদীপ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলবে। দল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেকটা সময় রয়েছে। অনেকগুলো ম্যাচও বাকি। এখনও কয়েকটা ম্যাচে ওকে দেখে নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।” একই সুর সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলাতেও। তিনি বললেন, “অর্শদীপ ভাল বল করছে। ডেথ ওভারে খুব কার্যকর। কিন্তু ভারতের হয়ে আগামী দিনে নিয়মিত খেলবে কি না এখনই বলা যাবে না। সবে চারটে ম্যাচ খেলেছে। আগামী দিনে সাফল্য পেলে দলে থাকবে। তবে অর্শদীপ ভারতীয় দলে থাকলে একটা বৈচিত্র আসে। বাঁহাতি পেসারদের খেলতে যে কোনও ব্যাটারই অসুবিধায় পড়ে।”
দীর্ঘকায় পেসারের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার দীর্ঘায়ু হবে কি না, সে দিকেও নজর থাকবে। অর্শদীপ দলে থাকা মানে বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র আসবে। নতুন বলে আক্রমণ হোক বা শেষের দিকে এসে রান আটকে দেওয়া, অর্শদীপ দু’টি কাজই করতে পারেন। আইপিএলে পঞ্জাব কিংসের হয়ে তাঁকে দু’টি কাজই করতে দেখা গিয়েছে। সাফল্যও পেয়েছেন। তরুণ অর্শদীপের লড়াই দেখা গিয়েছে ক্যারিবিয়ান সফরে। প্রথম ম্যাচে কাইল মেয়ার্স তাঁকে এক ওভারে একটি ছয় এবং পরের বলে চার মারেন। সেই ওভারেই একটি স্লোয়ার দেন অর্শদীপ। সেই বলে আউট হন মেয়ার্স। সেই উইকেট নেওয়ার পর ভারতীয় পেসার যে ভাবে তাকিয়ে ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারের দিকে, তাতেই বুঝিয়ে দেন যে তিনি লড়াই জিততে জানেন। ডেথ ওভারে যা প্রচণ্ড জরুরি।
এমন এক জন পেসার ধারাবাহিকতা দেখাতে পারলে ভারতীয় দলের শক্তি বৃদ্ধি হবে তা বলাই যায়। ভুবনেশ্বর কুমার বলেন, “অর্শদীপের সব থেকে বড় গুণ হল ও জানে ওর কাছে কী চাওয়া হচ্ছে। কী ভাবে ফিল্ডিং সাজাতে হবে, কোন ব্যাটারকে কী ভাবে আক্রমণ করতে হবে। খুব কম তরুণের মধ্যে এত পরিণতি বোধ দেখা যায়। সাধারণত খেলতে খেলতে এটা তৈরি হয়। অর্শদীপ এটা নিয়েই এসেছে।”