Tamim Iqbal

১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিয়ো বার্তা তামিমের, বাদ পড়ার পর ফাঁস করলেন জোড়া ষড়যন্ত্রের কথা

বিশ্বকাপের দলে তামিমের সুযোগ না পাওয়া নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। তা নিয়ে বুধবার সমাজমাধ্যমে মুখ খুললেন তামিম নিজেই। একাধিক অভিযোগ শোনা গিয়েছে বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়কের মুখে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৮
picture of Tamim Iqbal

তামিম ইকবাল। —ফাইল চিত্র।

বিশ্বকাপের দলে সুযোগ না পেয়ে মুখ খুললেন তামিম ইকবাল। সমাজমাধ্যমে ১২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিয়ো পোস্ট করে জোড়া ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। প্রথমে অভিযোগ করেছেন সংবাদমাধ্যমের দিকে। পরের ষড়যন্ত্রের অভিযোগটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্তার বিরুদ্ধে। তবে সেই কর্তার নাম বলেননি তামিম।

Advertisement

ভিডিয়ো বার্তায় ঠিক কী বলেছেন তামিম, তুলে ধরল আনন্দবাজার অনলাইন।

গলায় সংক্রমণ হয়েছে, তাই পরিষ্কার করে কথা বলতে পারছি না।

শেষ কয়েক দিনে যা যা লেখা হয়েছে আর আসলে যা ঘটেছে— সম্পূর্ণ আলাদা। যা যা ঘটেছে, পুরো জিনিসটাই পর পর সবাইকে জানাই। কারণ যাঁরা আমার এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভক্ত, তাঁদের এটা জানা উচিত।

সবাই জানেন, আমি অবসর নিয়ে ফেলেছিলাম। তার কারণ ছিল। কিন্তু তার পর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এর পরের দু’মাস আমি প্রচণ্ড পরিশ্রম করি নিজেকে ফিট করার জন্য। আমি নিশ্চিত, ফিজিয়ো থেকে শুরু করে বাকি যাঁরা এই প্রক্রিয়াটার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন বা এক্সারসাইজ ছিল না, যেটা তাঁরা চেয়েছেন কিন্তু আমি করিনি।

ম্যচের দিন এগিয়ে এল। কিন্তু মানসিক ভাবে আমি খুব একটা খুশি ছিলাম না। আসলে এটা সহজ না। যাই হোক, প্রথম ম্যাচে ৩০-৩৫ ওভার ফিল্ডিং করলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাইনি। পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এল। আমার জন্য যেটা সব থেকে বেশি দরকার ছিল, সেটা হল দলের জয়। কিন্তু এই ম্যাচে আমরা হেরে গেলাম। তবে ওই সময় আমার কিছুটা রান করারও দরকার ছিল। বোঝার ছিল, ব্যাটিংটা কেমন হচ্ছে। যে ভাবে ব্যাটিং করেছি তাতে খুশি ছিলাম। মাত্র ৪৪ রান করলেও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম বড় কিছুর জন্য। ওই ম্যাচের পর মানসিক দিক দিয়ে খুব খুশি ছিলাম। তার আগের চার-পাঁচ মাসে যা হয়েছিল, তখন আর সেগুলো মাথায় ছিল না সে ভাবে। আবার খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে ছিলাম।

এত দিন পর যখন খেলতে নেমেছি, চোট থেকে সেরে উঠেছি, স্বাভাবিক ভাবেই ব্যথা, অস্বস্তি থাকবেই। প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। যখন খেলা শেষ হল, ফিজিয়োকে বললাম যে, আমি কেমন বোধ করছি। ঠিক ওই মুহূর্তে তিন জন নির্বাচক আমাদের ড্রেসিংরুমে আসেন। এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, আমি কোনও সময় কাউকে বলিনি যে, বিশ্বকাপে পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারব না। আমি নিশ্চিত, গত কাল নান্নু ভাইও (বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন) এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আমি জানি না এটা সংবাদমাধ্যমে কী ভাবে খাওয়ানো হয়েছে, কে করেছে। এটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা। আমি নির্বাচকদের যেটা বলেছিলাম সেটা হল, আমার শরীর এখন এ রকমই থাকবে। মাঝেমাঝে ব্যথা থাকবে। ফলে দল যখন নির্বাচন করবেন, এটা মাথায় রেখে করবেন।

আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম, অর্থাৎ যে ম্যাচের পর অবসর নিয়েছিলাম, তখনও ফিজিয়ো ও কোচের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিন জন একমত হয়েছিলাম যে, আমার খেলা উচিত। এর পর সবাই জানে যে, কেমন ধরনের কথা মিডিয়ায় বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ফিট না থাকলে খেলা উচিত নয়। আমি দ্বিতীয় আর একটি বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি। তাই পুরোপুরি সৎ থেকে নির্বাচকদের বলেছি, আপনারা আমার শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে দল নির্বাচন করবেন। এমনও হতে পারে, ন’টা ম্যাচ খেললাম কোনও সমস্যা ছাড়াই। বিশ্বকাপে প্রথম দুটো ম্যাচ ছাড়া প্রতি ম্যাচের পরই তিন-চার দিনের বিরতি আছে।

যে কোনও ক্রিকেটার দুটো ম্যাচ খেলার পর হঠাৎ চোট পেতে পারে, এর পর তাকে দেশে পাঠিয়ে তার পরিবর্তে কাউকে নেওয়ার সুযোগ তো রয়েইছে। আমি আমার বিষয়টা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিই। এর পর আমাকে নিয়ে ফিজিয়ো রিপোর্ট জমা দেন। সেখানে ঠিক কী লেখা ছিল, আজ জানাতে চাই। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করতে চান, তাঁকে স্বাগত। জনসমক্ষে এসে বলুন যে, আমি ভুল বলছি।

ফিজিয়োর রিপোর্টে আমার কন্ডিশনটা বলা হয়েছিল। প্রথম ম্যাচের পর কতটা ব্যথা হয়েছে, দ্বিতীয় ম্যাচের পর কতটা ব্যথা হয়েছে, তার উল্লেখ ছিল। বলা হয়েছিল, ২৬ সেপ্টেম্বরের ম্যাচের (নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজের শেষ ম্যাচ) জন্য আমাকে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে আমাদের মেডিক্যাল টিম যদি মনে করে, আমাকে বিশ্রাম দিতে পারে। আমাদের ২৭ তারিখ ভারতে রওনা হওয়ার কথা। ২৯ তারিখ আমাদের একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ রয়েছে। তার পর ২ অক্টোবর আর একটি প্র্যাকটিস ম্যাচ ইংল্যান্ডের সঙ্গে। তখন আমাকে বলা হয়, আমি যদি এখন রেস্ট নিই এবং দ্বিতীয় প্র্যাকটিস ম্যাচটা খেলি, তা হলে পর্যাপ্ত সময় পাব। সব মিলিয়ে ১০ সপ্তাহের রিহ্যাবও হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচটা (৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে) খেলার জন্য খুব ভাল অবস্থায় থাকব।

কখনও কোনও জায়গায় বলা হয়নি যে, পাঁচ ম্যাচ বা দুই ম্যাচ চোটের জন্য খেলতে পারব না। হ্যাঁ, আমার শরীরে ব্যথা ছিল, এটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমার চোট রয়েছে, এটা কখনও বলা যাবে না।

যাই হোক, তার দু-এক দিন পর আমাকে বোর্ডের উপর মহল থেকে এক জন ফোন করলেন। উনি আমাদের ক্রিকেটে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত। আমাকে হঠাৎ ফোন করে উনি বললেন, ‘‘তুমি তো বিশ্বকাপে যাবে। তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো, আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রথম ম্যাচটা খেলো না।’’ আমি বললাম, ‘‘এখনও তো ১২-১৩ দিন বাকি। আমি তো এর মধ্যে ভাল কন্ডিশনে পৌঁছে যেতে পারি। তাই এখনই কী করে বলছেন যে, প্রথম ম্যাচে খেলব না?’’ উনি তখন বললেন, ‘‘আচ্ছা তুমি যদি খেলো, তা হলে তোমাকে নিয়ে আমাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে। তোমাকে নিচের দিকে ব্যাট করাব।’’

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আমি তখন কোন মানসিকতার মধ্যে ছিলাম। হঠাৎ করে একটা ভাল ইনিংস খেলেছি। আমি খুশি ছিলাম। হঠাৎ করে এই ধরনের কথা আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে (ওপেনিং) ব্যাটিং করেছি। জীবনে কখনও তিন-চার নম্বরেও ব্যাট করিনি। আমি যদি তিনে বা চারে ব্যাটিং করতাম, তা হলে ওপর-নীচ করানোটা মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু আমার তিন, চার, পাঁচে ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতাই নেই। আমি কথাগুলো ভাল ভাবে নিইনি। উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আমাকে জোর করে বিভিন্ন ভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তখন আমি বললাম, ‘‘দেখুন, আপনাদের যদি এমন ভাবনাচিন্তা থাকে, তা হলে আমাকে পাঠাবেন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতি দিন আপনারা আমাকে এক একটা নতুন সমস্যার সামনে ফেলে দেবেন, আমি এগুলোর মধ্যে থাকতে চাই না।’’ তার পরও ফোনে ওঁর সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়। সেগুলো এখানে না বলাই ভাল।

আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে, একটা জিনিসকে ঢাকার জন্য আর একটা জিনিস ঠিক করা। তাই বলা হচ্ছে, আমি পাঁচটা ম্যাচ খেলতে চেয়েছি। এমন কোনও কথাই হয়নি। সে দিন সিলেক্টর, ফিজিয়ো, ট্রেনার— সবাই ছিলেন। তখন খুব খারাপ তিন-চারটে মাস কাটিয়ে আমি সবে ক্রিকেটে ফিরেছিলাম। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল ওই তিন-চার মাস। গোটা ব্যাপারটাই যদি আমাকে অন্য ভাবে বলা হত তা হলে হয়তো বিষয়টা মেনে নিতাম। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ যদি ফোন করে বলেন, খেলানো হবে না বা খেলালেও নীচে ব্যাটিং করাবে, জানি না এটা কতটা ঠিক। ঠিক এটাই হয়েছিল। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।

আশা করব, যে ১৫ জন বিশ্বকাপে যাচ্ছে, তারা বাংলাদেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসবে। এক বার-দু’বার ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু এক জনের সঙ্গে তিন-চার মাসে যদি সাত-আট বার এ রকম হয়, বুঝতে হবে সেটা ইচ্ছাকৃত।

আর একটা কথা, আমাকে সবাই মনে রাখবেন। ভুলে যাবেন না।

আরও পড়ুন
Advertisement