(বাঁদিকে) তামিম ইকবাল এবং শাকিব আল হাসান। —ফাইল চিত্র।
শাকিব আল হাসানের সঙ্গে তামিম ইকবালের বহু চর্চিত দ্বন্দ্ব আরও এক বার প্রকাশ্যে চলে এসেছে বিশ্বকাপের দল গঠনকে কেন্দ্র করে। তামিম কেন দলে নেই? এই একটা প্রশ্নে কার্যত দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহল।
বিশ্বকাপের দল গঠন নিয়ে বিভিন্ন রকম তথ্য উঠে আসছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহল থেকে। একটি অংশ বাংলাদেশের বোর্ড কর্তাদের উপর শাকিবের চাপের কথা বলছে। আরেকটি অংশ আবার শাকিবের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ বোর্ড সূত্রে খবর, তামিমের পিঠের ব্যথা এখনও সম্পূর্ণ ঠিক হয়নি। টানা ম্যাচ খেলার মতো অবস্থায় তিনি নেই।
তামিম নাকি বোর্ড কর্তাদের বলেছিলেন, বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ তিনি খেলতে পারেন। একটি ম্যাচ অন্তর মাঠে নামবেন তিনি। যে ম্যাচ খেলবেন, তাতেও পুরো ৫০ ওভার ফিল্ডিং করতে পারবেন না। একই সঙ্গে তাঁর দাবি ছিল, বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে পিঠের ব্যথা সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যাবে।
তামিমের এই বক্তব্য, দল নির্বাচনের আগে জানানো হয়েছিল শাকিবকে। সূত্রের খবর,বিষয়টি জেনেই বেঁকে বসেন শাকিব। তিনি কর্তাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন, তামিমকে দলে রাখা হলে তিনি বিশ্বকাপ খেলবেন না। সম্পূর্ণ ফিট নয়, এমন কাউকে নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যেতে চান না তিনি। প্রয়োজনে সব ধরনের ক্রিকেটের নেতৃত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন শাকিব।
বিশ্বকাপের কয়েক দিন আগে শাকিবের এই বক্তব্যের তেমন বিরোধিতা করতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্তারা। সেই সুযোগে দলের লজিস্টিক (যাতায়াত, হোটেল-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা) ম্যানেজার নাসিফ ইকবালকে নিয়েও আপত্তি জানান শাকিব। যিনি আবার সম্পর্কে তামিমের দাদা। নাসিফের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন শাকিব। তাঁর বক্তব্য জানানো হয় তামিম এবং নাসিফকে। বাংলাদেশের প্রাক্তন অধিনায়ক নিজেই বিশ্বকাপের দল থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান বোর্ড কর্তাদের। ভাই বিশ্বকাপের দলে না থাকায় রাগে ইস্তফা দেন নাসিফও (মতান্তরে তাঁকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়)। নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে তৃতীয় এক দিনের ম্যাচ চলার সময়ই তিনি বাড়ি চলে যান।
পরিস্থিতি জটিল হতে পারে আঁচ করে বাংলাদেশের বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এক সঙ্গে তিন জনের সঙ্গে কথা বলেন। শাকিব, তামিম ছাড়াও তিনি কথা বলেন কোচ চন্ডিকা হাতুরুসিংঘের সঙ্গে। এর পর দল ঘোষণার আগে ভক্তদের ভিডিয়ো বার্তায় তামিম জানিয়ে দেন বিশ্বকাপে খেলবেন না। তিনি বলেন, ‘‘বোর্ড সভাপতি এবং প্রধান নির্বাচকের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। ওদের বলেছি, মনে হয় না আমার বিশ্বকাপের দলে থাকা উচিত। বিশ্বকাপে আমাকে পাওয়া যাবে না। এর দু’তিনটে কারণ রয়েছে। প্রথমত, আমি বেশ কিছু দিন ধরে খেলছি না। দ্বিতীয়ত, চোট খুব বড় সমস্যা নয়। আশা করি বিশ্বকাপের আগেই ঠিক হয়ে যাব। কিন্তু আসল বিষয় অন্য। এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি কারণ, আমার জায়গায় যারা খেলছিল, তাদের প্রতি সুবিচার হবে না আমি দলে থাকলে। হঠাৎ করে এসে ওদের জায়গা নিয়ে নেওয়া আমার ঠিক নয়। মনে হয় আমি বিশ্বকাপের দলে থাকতাম। কিন্তু সেটা ঠিক হত না। বিশ্বকাপে আপনারা আমাকে দেখতে পাবেন না। বাংলাদেশ দলের জন্য আমার শুভেচ্ছা থাকবে।’’
তাই আবার শাকিব-তামিম দ্বন্দ্ব নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। তামিম চোট লুকিয়ে না রাখায় তাঁর প্রশংসা করছে অনেকে। আবার চোট নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে চাওয়ায় অনেকে বিস্মিত। কারণ তামিম বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদকে মঙ্গলবার বলেছিলেন, ‘‘আমার পিঠে ব্যথা রয়েছে। যন্ত্রণা হয়। আমার আর ভাল কিছু হবে না। এ ভাবেই চলতে হবে আমাকে। এ বারের বিশ্বকাপটা খেলতে চাই। বোর্ডকে সব জানিয়ে দেব।’’