ম্যাচ জিতে উল্লাস বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ছবি: পিটিআই।
চতুর্থ দিন শেষ হওয়ার পরে মনে হচ্ছিল, ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে পাকিস্তান-বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট। কিন্তু পঞ্চম দিন ছবিটা পুরো বদলে গেল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয় পাকিস্তানের। মহম্মদ রিজ়ওয়ান ছাড়া বাকি কেউ দাঁড়াতেই পারলেন না। বাংলাদেশের দুই স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও শাকিব আল হাসান ৭ উইকেট তুললেন। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য ছিল ৩০ রান। দুই ওপেনার সেই রান তুলে নেন। ১০ উইকেটে জেতে বাংলাদেশ। এই প্রথম বার পাকিস্তানকে টেস্টে হারাল তারা। দু’ম্যাচের সিরিজ় ১-০ এগিয়ে গেল তারা। অর্থাৎ, এই সিরিজ়ে আর হারবে না বাংলাদেশ। সিরিজ় ড্র করতে হলে পরের টেস্টে জিততেই হবে পাকিস্তানকে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এর আগে ১৩টি টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। ১২টি জিতেছিল পাকিস্তান। একটি ড্র হয়েছিল। ১৪তম টেস্টে পাকিস্তানকে হারাল বাংলাদেশ। টেস্টের ইতিহাসে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেই এখনও পর্যন্ত কোনও টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। বাকি সব টেস্ট খেলিয়ে দেশকে হারিয়েছেন শাকিবেরা।
পঞ্চম দিনের শুরুতে পাকিস্তানের রান ছিল ২৩ রানে ১ উইকেট। সেখান থেকে পর পর উইকেট পড়ল। আরও এক বার ব্যর্থ অধিনায়ক শান মাসুদ (১৪) ও বাবর আজ়ম (২২)। যত দিন যাচ্ছে, তত সমালোচনা হচ্ছে বাবরের ব্যাটিং নিয়ে। রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট সেই সমালোচনা যে আরও বাড়িয়ে দিল, তাতে সন্দেহ নেই। প্রথম ইনিংসে শতরান করা সাউদ শাকিল এই ইনিংসে শূন্য রানে আউট হলেন।
দ্বিতীয় ইনিংসেও একাই লড়াই করলেন রিজ়ওয়ান। দেখে মনে হল, তিনি অন্য পিচে খেলছেন। সঙ্গে কাউকে পেলেন না রিজ়ওয়ান। এক সময় মনে হচ্ছিল ইনিংসে হারতে পারে পাকিস্তান। রিজ়ওয়ান দলকে বাঁচান। অর্ধশতরান করেন তিনি। নীচের সারির ব্যাটারদের নিয়ে লড়ছিলেন রিজ়ওয়ান। কিন্তু ৫১ রানের মাথায় মেহেদির বলে বোল্ড হন তিনি। তার পরেই শেষ হয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস। মাত্র ১৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায় তারা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এক ইনিংসে এটি কোনও দলের সর্বনিম্ন রান। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে ৭৭ রান করার পরে বল হাতেও চমক দিলেন মেহেদি। ২১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। ৪৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন অভিজ্ঞ শাকিব।
টেস্ট জিততে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৩০ রান। বোঝাই যাচ্ছিল, এই ম্যাচ পাকিস্তান আর কোনও মতেই বাঁচাতে পারবে না। ৩০ রান করতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। ৬.৩ ওভারে ম্যাচ জিতিয়ে দেন দুই ওপেনার। ১০ উইকেটে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে এই হারের ফলে পাকিস্তানের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ধাক্কা খেল।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ডিক্লেয়ার দেয় পাকিস্তান। শতরান করেন শাকিল ও রিজ়ওয়ান। জবাবে প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রান করে বাংলাদেশ। তাদের হয়ে ১৯১ রান করেন মুশফিকুর রহিম। ৯৩ রান করেন শাদমান ইসলাম। পাকিস্তানের থেকে ১১৭ রান এগিয়ে শেষ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ১১৩ ওভার ব্যাট করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৫.৫ ওভার ব্যাট করতে পারে তারা। ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয় বাবরদের।