কুস্তিগিরদের মনোনীত এক ব্যক্তিকে কমিটিতে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানা হয়নি। ফাইল ছবি
জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরন সিংহের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কমিটি গঠনের বিরোধিতা করেছেন বিক্ষোভকারী কুস্তিগিররা। সেই বিরোধিতা ভাল ভাবে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। স্পষ্ট জানানো হয়েছে, তদন্তকারী কমিটি নতুন করে গঠন করার প্রশ্নই নেই। তবে কুস্তি প্রতিযোগিতা স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে না। জাগ্রেবে কুস্তির র্যাঙ্কিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যেতে পারেন কুস্তিগিররা।
গত মঙ্গলবার বিনেশ ফোগত, বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিকরা মেরি কমের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির বিরোধিতা করে জানিয়েছিলেন, তাঁদের কোনও পরামর্শ নেওয়াই হয়নি। সেই প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত। একটি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বজরং দাবি করেছেন, কুস্তিগিরদের মনোনীত এক ব্যক্তিকে কমিটিতে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মানা হয়নি।
বজরং বলেছেন, “মহিলা কুস্তিগিররা যৌন হেনস্থার শিকার। এটা সাধারণ কোনও ব্যাপার নয়। তাই আমাদের মনোনীত কাউকে কমিটিতে রাখা দরকার। গত শুক্রবার আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। যাঁরা কমিটিতে রয়েছেন প্রত্যেককে সমীহ করি। কিন্তু এটা স্পর্শকাতর বিষয়। তাই কমিটিতে এমন একজনকে চাই যাকে আমরা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারি।”
এ দিকে, আগামী ১-৫ ফেব্রুয়ারি জাগ্রেব ওপেন গ্রাঁ প্রি-তে কুস্তিগিরদের অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র দিল কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক। সেই প্রতিযোগিতার জন্য ১২ মহিলা, ১১ জন গ্রিকো-রোমান এবং ১৩ জন পুরুষ ফ্রিস্টাইল কুস্তিগিরদের বেছে নেওয়া হয়েছে। দলে রবি কুমার দাহিয়া, অংশু মালিক, দীপক পুনিয়ারা রয়েছেন। যাবতীয় খরচ সরকারই দেবে।
গত সোমবার কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর কমিটির পাঁচ সদস্যের নাম ঘোষণা করেন। দেশের প্রথম সারির এক ঝাঁক কুস্তিগিরের তিন দিনের অবস্থান প্রতিবাদের পর গত শনিবার তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বিক্ষোভকারী কুস্তিগিরদের সঙ্গে শুক্রবার রাতে দীর্ঘ বৈঠক করেছিলেন অনুরাগ। মেরির নেতৃত্বাধীন কমিটিতে রয়েছেন অলিম্পিক পদকজয়ী কুস্তিগির যোগেশ্বর দত্ত, প্রাক্তন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় এবং মিশন অলিম্পিক সেলের সদস্য তৃপ্তি মুরগুন্ডে, ‘টপস’-এর প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা রাজাগোপালন এবং সাইয়ের প্রাক্তন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাধিকা শ্রীমন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রককে রিপোর্ট দেবে এই কমিটি।
তার পরেই যন্তরমন্তরে ধর্নায় উপস্থিত থাকা বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগত, সরিতা মোর এবং সাক্ষী মালিক টুইটারে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। প্রত্যেকেরই ভাষা এক। লিখেছেন, “আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে তদন্ত কমিটি গঠন করার আগে পরামর্শ নেওয়া হবে। দুঃখজনক যে আমাদের কথা শোনা হয়নি।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে তিন জনই ‘ট্যাগ’ করেছেন।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকপ্রাপ্ত গীতা ফোগত আলাদা টুইট করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, দেশের সমস্ত মেয়ে এবং বোনেরা আপনার দিকে অনেক আশা এবং প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। যদি আমরা ন্যায়বিচার না পাই, তা হলে দেশের পক্ষে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে।” তার আগে বিনেশ টুইট করেন, “সত্যকে সমস্যায় ফেলা যায়, কিন্তু হারানো যায় না।” তার কিছু ক্ষণ আগে আর একটি টুইটে তিনি লেখেন, “যদি তোমার লক্ষ্য বড় থাকে, তা হলে আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে থাকতে হবে।”