কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়ে টুইট মমতা, সানিয়ার। — ফাইল চিত্র
কুস্তিগিরদের ধর্নার মেয়াদ যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে সমর্থন। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ধীরে ধীরে ক্রীড়াজগতের বাকি ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদরাও এগিয়ে আসছেন। ধর্নায় বসা কুস্তিগিরদের মধ্যে বিনেশ ফোগাট, সাক্ষী মালিকদের মতো মহিলা কুস্তিগিররাও রয়েছেন। শুক্রবার তাঁদের ধর্নাকে সমর্থন জানিয়ে টুইট করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় সানিয়া মির্জা। দু’জনেই কুস্তিগিরদের ন্যায়বিচারের আবেদন করেছেন।
এ দিন দুপুর ১.৩০টা নাগাদ টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “যে সব কুস্তিগিররা প্রতিবাদ করছে তাদের পাশে আমাদের দাঁড়ানো দরকার। ওরা সবাই এক হয়ে কথা বলছে। আমাদের ক্রীড়াবিদরা দেশের গর্ব। ওরাই আসল চ্যাম্পিয়ন। প্রকৃত দোষী যে রাজনৈতিক দলেরই হোক না কেন, তাঁকে প্রকাশ্যে আনা উচিত। ন্যায়বিচার হওয়া দরকার। সত্যের জয় হোক।”
শুধু ক্রীড়াবিদ হিসাবে নয়, মহিলা হিসাবেও কুস্তিগিরদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন সানিয়া। তিনি লিখেছেন, “শুধু ক্রীড়াবিদ হিসাবে নয়, একজন মহিলা হিসাবেও ওদের ধর্না দিতে দেখা কঠিন। ওরা আমাদের দেশকে সম্মান এনে দিয়েছে। তখন আমরা ওদের সঙ্গে উৎসব করেছি। আপনিও যদি সেটা করে থাকেন, তা হলে এই কঠিন সময়েও ওদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয় এবং গুরুতর অভিযোগ। আমি চাই সত্য প্রকাশ্যে আসুক এবং ন্যায়বিচার পাক সবাই। দেরি না হয়ে যায়।”
We must all stand with the wrestlers who are protesting. They are speaking in one voice.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) April 28, 2023
Our sportspersons are the pride of our nation. They are champions.
The guilty must be brought to book, irrespective of their political affiliation. Justice must prevail. Truth must win
As an athlete but more as a woman this is too difficult to watch .. they’ve brought laurels to our country and we have all celebrated them , with them .. if you have done that then it’s time to now stand with them in this difficult time too .. this is a highly sensitive matter… pic.twitter.com/7mVVyz1Dr1
— Sania Mirza (@MirzaSania) April 28, 2023
দেশের ক্রীড়াবিদ, মূলত ক্রিকেটাররা কেন এখনও চুপ করে রয়েছেন তা নিয়ে আগেই মুখ খুলেছিলেন কুস্তিগিরদের প্রতিনিধি বিনেশ ফোগাট। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি-সহ দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটাররা এখন ব্যস্ত রয়েছেন আইপিএল নিয়ে। কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে তাঁরা কেউই মন্তব্য করেননি। মুখ খোলেননি অন্য খেলার সঙ্গে যুক্ত প্রথম সারির অনেক ক্রীড়াবিদও। তাঁদের নীরবতায় ব্যথিত হয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিনেশ। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁদের যথেষ্ট সাহস নেই।’’
কথা বলার সময় বিনেশের গলায় শোনা গিয়েছে কিছুটা আক্ষেপের সুর। তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা দেশ ক্রিকেটকে ধর্ম মনে করে। অথচ এক জন ক্রিকেটারও মুখ খুললেন না। আমরা বলছি না যে, আমাদের সমর্থনেই বক্তব্য রাখতে হবে। কিন্তু কোনও নিরপেক্ষ বার্তা তো দিতে পারতেন কেউ। ন্যায়বিচারের পক্ষে তো কিছু বলতে পারতেন। এটাই আমাকে সব থেকে কষ্ট দিচ্ছে। ক্রিকেটার, ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়, অ্যাথলিট, বক্সার— সকলের সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।’’
এই প্রসঙ্গে বিনেশ তুলেছেন ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স’ আন্দোলনের প্রসঙ্গ। তিনি বলেছেন, ‘‘আমেরিকায় যখন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্স আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন বিশ্বের বড় বড় ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা মুখ খুলেছিলেন। আমাদের দেশে বড় মাপের ক্রীড়াবিদ নেই এমন নয়। তাঁদের অধিকাংশই ক্রিকেটার। সে সময় তাঁরা অনেকেই সমর্থন করেছিলেন। অথচ এখন সকলে চুপ! আমরা কি এটুকুর যোগ্যও নই?’’
বিনেশের আক্ষেপ, তিনি এবং বজরং পুনিয়া দেশের সব ক্রীড়াবিদদের একটি খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়ে ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্তরা সমর্থন জানালেও প্রথম সারির ক্রীড়াবিদদের একাংশের কোনও বার্তা তাঁরা পাননি। বিনেশ বলেছেন, ‘‘জানি না তাঁরা কোনও কারণে ভয় পাচ্ছেন কি না। হয়তো তাঁরা ভাবছেন, মুখ খুললে স্পনসরশিপ হারাতে হতে পারে। তাঁদের বিজ্ঞাপনের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে। হয়তো সেই ভয় থেকেই তাঁরা অন্য অ্যাথলিটদের সঙ্গে গলা মেলাতে ভয় পাচ্ছেন।’’
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও সাফল্য পেলে সকলে অভিনন্দন জানান। সে সময় ক্রিকেটাররাও সমাজমাধ্যমে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দেন। তা হলে এখন কী হল! ওঁরাও কি তা হলে প্রশাসনকে ভয় পান? না কি তাঁদের মধ্যেও এমন কোনও সমস্যা রয়েছে, যে মুখ খুলতে পারছেন না।’’