Wrestlers’ Protest

কুস্তি-বিতর্কে সরব বিশ্বজয়ীরা, কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি কৃষক নেতাদের, থামছেন না কুস্তিকর্তাও

কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক থামার কোনও শেষ নেই। শুক্রবারও ঘটনাবহুল দিন হয়ে থাকল। প্রথম বার প্রাক্তন ক্রিকেটাররা মুখ খুললেন। আবার হুঁশিয়ারি দিলেন কৃষক নেতারা। আর কী কী হল?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ২২:০২
wrestlers

বিনেশ ফোগট, বজরং পুনিয়া এবং সাক্ষী মালিক (বাঁ দিক থেকে)। ছবি: পিটিআই

কুস্তিগিরদের আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক থামার কোনও শেষ নেই। শুক্রবারও ঘটনাবহুল দিন হয়ে থাকল। এক দিকে যেমন জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরন সিংহ মুখ খুলে আবার শাসিয়েছেন, তেমনই তাঁকে গ্রেফতারের দাবি তুলে সরব হয়েছেন কৃষক নেতারা। তার আগেই কুস্তিগিরদের এফআইআরের বয়ান প্রকাশ্যে আসে। কী ভাবে তাঁরা ব্রিজভূষণের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তার বর্ণনা দিয়েছেন। তার পরে ব্রিজভূষণ অযোধ্যায় নিজের কর্মসূচি বাতিল করে দেন। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মুখ খোলা। সংবাদ সংস্থাকে একটি বিবৃতিতে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্যরা কুস্তিগিরদের অনুরোধ করেছেন, এখনই কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত না নিতে।

এর আগে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী, প্রীতম কোটালরা মুখ খুললেও নামী কোনও ক্রিকেটারকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। সেই জায়গায় বিশ্বজয়ীদের বার্তা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সেই বার্তায় রয়েছে রজার বিনির নাম, যিনি এখন বোর্ড সভাপতি। অর্থাৎ বিবৃতির মাধ্যমে পরোক্ষে বোর্ডও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল।

Advertisement

কী বলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা?

সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া বার্তায় ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ীরা বলেন, “আমাদের দেশের কুস্তিগিরদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখে আমরা মর্মাহত। বহু কষ্টে অর্জিত পদক গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার যে ভাবনা কুস্তিগিরদের মধ্যে এসেছে সেটা দেখে আমরা চিন্তিত। বহু দিনের পরিশ্রমের পর পদক জিতেছে তারা। অনেক ত্যাগ করতে হয়েছে এই পদক পেতে। আমরা অনুরোধ করব এমন কোনও বড় পদক্ষেপ যেন তারা না করে। আশা করব খুব তাড়াতাড়ি বিচার পাবে কুস্তিগিরেরা। দেশের আইনের উপর ভরসা রাখুক তারা।”

১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্ব ট্রফি জেতে ভারত। সেই দলের সদস্য ছিলেন গাওস্কর, বিন্নীরা। ছিলেন মহিন্দর অমরনাথ, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, সইদ কিরমানি, যশপাল শর্মা, মদন লাল, বলবিন্দর সিংহ সাধু, সন্দীপ পাটিল, কীর্তি আজাদরা। সেই বছর ২৫ জুন লর্ডসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তাঁরা।

কী কী অভিযোগ করেছেন কুস্তিগিরেরা?

অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলা কুস্তিগিরের অভিযোগ, ছবি তোলার নাম করে তাঁর শরীর ছুঁয়েছেন ব্রিজভূষণ। নিজের শরীরের দিকে জোর করে টেনে নিয়েছেন। তাঁর কাঁধ এবং বুকে হাত দিয়েছেন ইচ্ছাকৃত ভাবে। সেই কুস্তিগির জানিয়েছেন যে, কোনও রকম শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করার ইচ্ছা তাঁর ছিল না। অভিযোগ, তবুও তাঁকে বার বার উত্ত্যক্ত করেছেন ব্রিজভূষণ।

প্রাপ্তবয়স্ক কুস্তিগিরদের অভিযোগ

প্রথম জন: অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ তাঁর সঙ্গে রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর বুকে, পেটে হাত দেন বলে অভিযোগ। তিন-চার বার এমন করেছেন বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা কুস্তিগির। নিজের অফিসে ডেকেও তাঁর অনুমতি ছাড়াই শরীরে হাত দেন বলে অভিযোগ। সামনাসামনি বসে থাকা অবস্থায় কুস্তিগিরের পায়ের উপর পা রাখেন ব্রিজভূষণ। হাঁটুতে হাত দেন তিনি। কুস্তিগিরের অভিযোগ, তাঁর চুপ করে থাকার সুবিধা নেন ব্রিজভূষণ।

দ্বিতীয় জন: নিশ্বাস-প্রশ্বাস দেখার নাম করে তাঁর শরীরে হাত দেন ব্রিজভূষণ। অনুশীলন করার সময় কোচের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাঁর জামার ভিতর হাত ঢুকিয়ে দেন অভিযুক্ত ফেডারেশন কর্তা। তাঁর ঘরে ডেকে পাঠিয়ে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

তৃতীয় জন: তাঁর কাছে ফোন ছিল না। পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার নাম করে অভিযোগকারী কুস্তিগিরকে ঘরে ডাকেন ব্রিজভূষণ। ফোন দেওয়ার নাম করে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন অভিযুক্ত কর্তা। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই কুস্তিগির।

চতুর্থ জন: নিশ্বাস-প্রশ্বাস দেখার নাম করে তাঁর শরীরেও হাত দেন ব্রিজভূষণ। বুক থেকে পেট পর্যন্ত হাত বোলান তিনি। অভিযোগকারী জানান, যে হেতু জানতেন উনি মেয়েদের সঙ্গে অশ্লীল ব্যবহার করেন তাই কখনও তাঁর সঙ্গে আলাদা করে খেতে যেতে চাননি।

পঞ্চম জন: ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন ওই কুস্তিগির। সঙ্গে আরও অনেকে ছিলেন। অভিযোগকারী ছিলেন একেবারে শেষ দিকে। তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান ব্রিজভূষণ। অভিযোগকারী বুঝতে পারেন তাঁর পিছনে হাত রেখেছেন অভিযুক্ত। সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে গেলে কুস্তিগিরের কাঁধ ধরে আটকে রেখেছিলেন ব্রিজভূষণ।

ষষ্ঠ জন: ছবি তোলার নাম করে তাঁকে কাছে টেনে নেন ব্রিজভূষণ। কাঁধ ধরে রেখেছিলেন। নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ওই কুস্তিগির। ব্রিজভূষণকে ধাক্কা দেওয়ারও চেষ্টা করেন। তখন ব্রিজভূষণ তাঁকে বলেন, “বেশি চালাকি করতে যেয়ো না। আগামী দিনে কোনও প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে না।”

কৃষক নেতাদের হুঁশিয়ারি

আগামী ৯ জুনের মধ্যে অভিযুক্ত কর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহকে গ্রেফতারির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক নেতারা। এ দিন মহাপঞ্চায়েতের শেষে নেতা রাজেশ বলেন, “যদি আমাদের ৯ জুন যন্তর মন্তরে বসতে না দেওয়া হয়, তা হলে আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে। ব্রিজভূষণের গ্রেফতারি চাই আমরা। আর কোনও রকম আপসের রাস্তায় হাঁটতে রাজি নই। যদি ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার না করা হয়, তা হলে ৯ জুন যন্তর মন্তরে যাব। দেশ জুড়ে পঞ্চায়েত আয়োজন করা হবে। কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছে তা এখনই প্রত্যাহার করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করতে হবে।” কুরুক্ষেত্রে আলোচনায় বসা কৃষক নেতাদের মধ্যে কোনও একটি ব্যাপারে মতানৈক্য হয়। বেশ কিছু নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। যদিও কী বিষয়ে ঝামেলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে সেই ঘটনার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে।

ব্রিজভূষণের কর্মসূচি বাতিল

শুক্রবার ব্রিজভূষণ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানান যে, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, সেই কারণে ৫ জুন অযোধ্যায় যে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল, আপাতত তা স্থগিত রাখলেন। অযোধ্যার সন্ন্যাসীদের ব্রিজভূষণের সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সমাবেশ বাতিল হওয়ার পর তাঁরা ব্রিজভূষণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এক সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা বলেন, “ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পকসো আইনের অন্যায় ব্যবহার করা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এই আইনের ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।”

কুস্তিকর্তার শাসানি

তার আগেই কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি বলেন, “১৮ জানুয়ারি কুস্তিগিরেরা যখন যন্তর মন্তরের সামনে ধর্নায় বসলেন, তখন তাঁদের অভিযোগ ছিল এক রকম। কিছু দিন পর সেই দাবি পাল্টে গেল। আমি মহিলা কুস্তিগিরদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আমি কোথায়, কখন তাঁদের সঙ্গে অন্যায় করেছি। কিন্তু কেউ আমাকে পরিষ্কার কোনও উত্তর দিতে পারেননি। কে কী বলছেন আমার বিরুদ্ধে, সেটা নিয়ে আমার কিছু যায়-আসে না। পুলিশ ব্যাপারটাকে বড় করে ফেলছে। যা হচ্ছে হোক, আমি সব সামলাতে তৈরি। আমাকে দয়া করে অযৌক্তিক প্রশ্ন করবেন না।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণ হলে গলায় দড়ি দেবেন বলে জানিয়েছেন ব্রিজভূষণ।

আরও পড়ুন
Advertisement