সেই ভিন্গ্রহের মুলুক যেখানে সব সময়ই অঝোরে লোহার বৃষ্টি হয়। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
সোনা নয়। লোহা ঝরছে। ঝরে পড়ছে। একনাগাড়ে। ঝমঝমিয়ে লোহার বৃষ্টি হচ্ছে এই ভিন্গ্রহের শুধু একটি দিকেই।
লোহা গলে গলে আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে অনবরত। ঝাঁপিয়ে লোহার বৃষ্টি হচ্ছে এই ভিন্ মুলুকের এই গ্রহে। আর ভয়ঙ্কর গনগনে তাপে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে সেই গ্রহের একটি দিক। আগে যতটা আঁচ করা হয়েছিল, তার চেয়েও বেশি তাপমাত্রায় পুড়ে যাচ্ছে ‘WASP-76b’ নামের ভিন্গ্রহটি। সেই তাপমাত্রা ২ হাজার ২৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৪ হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়েও অনেক বেশি। যা আমাদের সূর্যের পিঠের (‘সারফেস’ বা ‘ফোটোস্ফিয়ার’) তাপমাত্রা (৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস)-র এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
প্রায় আমাদের বৃহস্পতির মতো আকারের এই ভিন্গ্রহটির ঝলসে যাওয়ার ছবি উঠে এসেছে সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে। সেই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ।
গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, আমাদের থেকে মাত্র ৬৪০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা এই ভিন্গ্রহটি যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে, তার তাপমাত্রা সূর্যের চেয়েও অনেক বেশি। আর সেই গনগনে তাপ উগরে দেওয়া নক্ষত্রটির এতটাই কাছে রয়েছে প্রায় বৃহস্পতির আকারের এই ভিন্গ্রহ যে, পৃথিবীর মাত্র ১.৮ দিনেই সেটি তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। যেখানে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর লাগে ৩৬৫ দিন ও কয়েক ঘণ্টা সময়। শুধু তা-ই নয়; চাঁদের যেমন একটি দিক সব সময় থাকে পৃথিবীর দিকে (জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয়, ‘টাইডালি লক্ড’) এই ভিন্গ্রহটিরও তেমনই একটি দিক সব সময় থাকে তার নক্ষত্রের দিকে। সে দিকে সব সময়ই দিনের আলো। রাতের অন্ধকার নামে না কোনও কালেই। আর ভিন্গ্রহের যে দিকটি কোনও দিনই নক্ষত্রের মুখ দেখতে পায় না, সেই দিকটি সবসময়ই ঢাকা থাকে জমাট বাঁধা অন্ধকারে। এই দিকের তাপমাত্রাও অন্য দিকটির চেয়ে তুলনায় কিছুটা কম।
মূল গবেষক নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রে জয়বর্ধনে জানিয়েছেন, প্রচণ্ড তাপমাত্রায় ভিন্গ্রহটির সবটুকু লোহাই গলে যাচ্ছে। আর সেই গলানো লোহা বাষ্পীভূত হয়ে উঠে আসছে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে। সেখান থেকেই ওই অত্যন্ত উষ্ণ গলিত লোহার বাষ্প ভিন্গ্রহের অন্ধকারে ঢেকে থাকা দিকের কিছুটা ঠান্ডায় তরল লোহায় পরিণত হচ্ছে। অনর্গল ঝরে পড়ছে খুব গরম লোহার বৃষ্টি হয়ে।