Supermassive Black Hole

Where This Ghost Particle Came From: ব্রহ্মাণ্ডের কোন মুলুক থেকে এল এই ভুতুড়ে কণা

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৪৫
ব্ল্যাক হোলের ভুরিভোজের সময় এই রেডিয়ো তরঙ্গই বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের এপ্রিলে। ছবি- গবেষণাপত্রের সৌজন্যে।

ব্ল্যাক হোলের ভুরিভোজের সময় এই রেডিয়ো তরঙ্গই বেরিয়ে আসতে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালের এপ্রিলে। ছবি- গবেষণাপত্রের সৌজন্যে।

ব্রহ্মাণ্ডের কোন মুলুক থেকে এল অত্যন্ত শক্তিশালী এই ভুতুড়ে কণা? প্রায় আলোর গতিতে ছুটে এসে অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরে মুখ লুকনো যে ভুতুড়ে কণার প্রথম হদিশ মিলেছিল তিন বছর আগে। ২০১৯-এ।

না, কোনও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বা মহাদৈত্যাকার মহারাক্ষস কৃষ্ণগহ্বরের গোগ্রাসে ভুরিভোজের সময় সেখান থেকে ছিটকে আসেনি এই ভুতুড়ে কণা। এত দিন সেটাই ভেবেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা জানাল, অত্যন্ত শক্তিশালী এই ভুতুড়ে কণা কোনও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ভুরিভোজের উচ্ছিষ্ট হতে পারে না। তার অনেক বেশি শক্তিশালী কোনও উৎস রয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ।

ফলে, কোথা থেকে এসে বছরতিনেক আগে অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরে মুখ লুকিয়েছিল অত শক্তিশালী ভুতুড়ে কণাটি তা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হল।

এই কণা 'ভুতুড়ে' কেন?

এই ভুতুড়ে কণা আদতে পরমাণুর চেয়েও অনেকগুণ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রায় ভরশূন্য একটি কণা। যার নাম- ‘নিউট্রিনো’। এদের ভর এতটাই কম যে একসময় মনে করা হত, কোনও ভরই নেই এদের। এরা ছোটে প্রায় আলোর গতিতেই। দুর্বল বল (উইক ফোর্স, পরমাণুর নিউক্লিয়াস যে বলে বেঁধে রাখে তাকে পরিক্রমণরত ইলেকট্রনগুলিকে) আর অভিকর্ষ বলই শুধু এদের চলার পথে আগল তুলে দাঁড়াতে পারে। এদের চলার পথ বাঁকিয়েচুরিয়ে দিতে পারে। ব্রহ্মাণ্ডের আর কোনও কণা, পদার্থ, বস্তু বা তরঙ্গকেই এরা তোয়াক্কা করে না। প্রতি মুহূর্তে আমাদের ত্বক ফুঁড়ে ঢুকে লক্ষ কোটি ভুতুড়ে কণা বেরিয়ে যাচ্ছে শরীর থেকে। আমরা বুঝতেই পারি না। এরা আসে ব্রহ্মাণ্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। মহাদৈত্যাকার কৃষ্ণগহ্বরের ভুরিভোজের উচ্ছিষ্ট থেকে। বা অন্যান্য অজানা উৎস থেকে। এরা পৃথিবীকেও ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। এহেন চরি্ত্রের কারণেই এদের 'ভুতুড়ে কণা' বলা হয়।

এই ভুতুড়ে কণার হদিশ মেলে কী ভাবে?

বরাতজোরে দু’-একটি ভুতুড়ে কণা কোনও কারণে পৃথিবীকে ফুঁড়ে বেরতে না পারলে আমরা তাদের হদিশ পাই। যেমন পাওয়া গিয়েছিল ২০১৯-এর ১ অক্টোবর। অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরে মুখ লুকিয়েছিল এই ভুতুড়ে কণাটি। যা ধরা পড়ে অ্যান্টার্কটিকায় বসানো আইসকিউব নিউট্রিনো ডিটেক্টরে। পরে যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘IC191001A’

এই ভুতুড়ে কণা কতটা শক্তিশালী?

বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে দেখেছেন, এই ভুতুড়ে কণাটির শক্তি ২০০ টেরাইলেকট্রনভোল্ট (শক্তির একক)। শক্তির দাঁড়িপাল্লায় যা যথেষ্টই।

কেন ভাবা হয়েছিল এই কণা ব্ল্যাক হোলের ভুরিভোজের উচ্ছিষ্ট?

কোনও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের গোগ্রাসে ভুরিভোজের সময় ছিটকে আসা কণা আর গ্যাস এক্স রশ্মি ও রেডিয়ো রশ্মি বা তরঙ্গের জন্ম দেয়। তেমনই একটি রেডিয়ো তরঙ্গ ধরা পড়েছিল ২০১৯-এর ৯ এপ্রিল। যার নাম- ‘AT2019dsg’। হিসাব কষে সেই সময় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানান, এই রেডিয়ো তরঙ্গটি আসছে ৭৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি ছায়াপথ (‘গ্যালাক্সি’) থেকে। সেই ছায়াপথের প্রায় কেন্দ্রে রয়েছে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (সব ছায়াপথেই থাকে একটি করে)। ভরের নিরিখে সেই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটি আমাদের সূর্যের ভরের ৩ কোটি গুণ। সেই সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটি গোগ্রাসে একটি তারাকে খাওয়ার সময়েই ভুরিভোজের উচ্ছিষ্ট থেকে বেরিয়ে আসা কণা ও গ্যাসই ওই রেডিয়ো তরঙ্গের জন্ম দিয়েছে। সেখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে এই অত্যন্ত শক্তিশালী ভুতুড়ে কণা। যা এসে মুখ লুকিয়েছিল অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরে। রেডিয়ো তরঙ্গের হদিশ মেলার ৬ মাস পর যার সন্ধান মেলে অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদরের অন্দরে। তাই বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, রেডিয়ো তরঙ্গ আর এই শক্তিশালী ভুতুড়ে কণার মধ্যে বোধ হয় কোনও সম্পর্ক রয়েছে। তাদের উৎস একই।

কী ভাবে ভুল ভাঙল?

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর অধ্যাপক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভেট্টে সেন্ডেস বলেছেন, ‘‘রেডিয়ো তরঙ্গ যতটা শক্তিশালী হলে অত শক্তিশালী কণার জন্ম দিতে পারত, এখন দেখা যাচ্ছে সেই তরঙ্গ ততটা শক্তিশালী ছিল না। তরঙ্গের হদিশ মেলার ৬ মাস পর অত শক্তিশালী ভুতুড়ে কণার সন্ধান মেলে অ্যান্টার্কটিকার আইসকিউব নিউট্রিনো ডিটেক্টরে। রেডিয়ো তরঙ্গ যেহেতু দুর্বল ছিল তাই ৬ মাস পর সেই একই উৎস থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী কোনও নিউট্রিনো বেরিয়ে আসতে পারে না। তাই নিশ্চয়ই এর অন্য কোনও উৎস রয়েছে। যা এখন খুঁজে বার করতে হবে।’’

ফলে, খুব শক্তিশালী ভুতুড়ে কণাটির উৎস নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হল।

Advertisement
আরও পড়ুন