জনপ্রিয় টেলিভিশন অভিনেত্রী বৈশালী ঠক্করের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে রবিবার। নিজের বাড়িতেই ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে তাঁর দেহ। জানা গিয়েছে, তাঁর বাগ্দান হয়েছিল। তার পর বিয়ে ভেঙে যায়। তার পরই কি অবসাদ গ্রাস করে বৈশালীকে? না কি, মৃত্যুর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও কারণ?
বৈশালীর মৃত্যুর খবরে হিন্দি টেলিভিশন দুনিয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একাধিক জনপ্রিয় ধারাবাহিকে কাজ করেছিলেন তিনি। দর্শকদের কাছে ছিলেন পরিচিত মুখ। তাঁর এমন আচমকা মৃত্যু যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না অনেকে।
বৈশালীর বয়স হয়েছিল ৩০ বছর। ছোট পর্দায় তাঁর কাজ প্রশংসিতও হয়েছে বার বার। যদি এটা আত্মহত্যা হয়, তবে কেন এই বয়সে এমন পথ বেছে নিলেন অভিনেত্রী, স্পষ্ট নয়।
বৈশালীর আত্মহত্যা করা থাকলে তার কারণ হিসাবে নানা বিষয় উঠে আসছে। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েনেই কি চরম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন অভিনেত্রী? দ্বিধাবিভক্ত বৈশালীর পরিবার, ঘনিষ্ঠমহলও।
জানা যায়, গত বছর বৈশালীর বিয়ে ঠিক হয়েও ভেঙে যায়। তাঁর বাগ্দানও হয়ে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে বিয়ে বাতিল হওয়ার খবর সমাজমাধ্যমে জানান অভিনেত্রী। বাগ্দানের যে ভিডিয়ো তিনি পোস্ট করেছিলেন, তা-ও মুছে দেন।
কেনিয়ার এক চিকিৎসকের সঙ্গে বৈশালীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তাঁর নাম অভিনন্দন সিংহ। গত বছর এপ্রিল মাসে তাঁদের বাগ্দান হয়। সেই খবর ঘটা করে সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন অভিনেত্রী।
বৈশালীর হবু স্বামী অভিনন্দন ছিলেন দাঁতের চিকিৎসক। এপ্রিলে বাগ্দানের পর জুন মাসে তাঁদের বিয়ের দিন স্থির হয়েছিল। কিন্তু বাগ্দানের এক মাসের মধ্যেই সমাজমাধ্যমে বৈশালী বিয়ে ভাঙার খবর জানিয়ে দেন। কেন তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে গেল, জানা যায়নি।
সমাজমাধ্যমে তার পরেও যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন বৈশালী। নানা সময়ে নানা ছবি, ভিডিয়ো পোস্ট করতেন। তাঁর অনুরাগীদের সংখ্যাও কম ছিল না।
যে বাড়ি থেকে রবিবার বৈশালীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, ইনদওরের সেই বাড়িতে গত বছর থেকেই থাকতে শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী।
তাঁর মৃতদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইনদওরের তেজাজি নগর থানায় এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল বৈশালীর। সুশান্তের মৃত্যু আসলে ‘খুন’ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সুশান্তের গলার দাগ, মৃতদেহের ছবি দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, অনেকে মিলে পরিকল্পনা করে তাঁকে খুন করা হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বৈশালী। প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন হয়তো তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তবে সবটাই তদন্তসাপেক্ষ।
সমাজমাধ্যমে বৈশালীর পোস্ট দেখে কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেখানেই। কারণ, কিছু দিন আগে তিনি একটি সিলিং ফ্যানের ছবি পোস্ট করেছিলেন। তাতেই কি এই সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত লুকিয়ে ছিল? উঠছে প্রশ্ন।
২০১৫ সালে ‘ইয়ে রিশতা কেয়া কহলাতা হে’ ধারাবাহিকের হাত ধরে টেলি দুনিয়ায় পা রাখেন বৈশালী। সেখানে তাঁর চরিত্রের নাম ছিল ‘সঞ্জনা’। ২০১৬ পর্যন্ত সেখানে অভিনয় করেন তিনি।
‘সসুরাল সিমর কা’ ধারাবাহিকে বৈশালীর অভিনয় যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছিল। এ ছাড়াও ‘ইয়ে হ্যায় আশিকি’, ‘বিষ ইয়া অমৃত’ ধারাবাহিকে তাঁকে চুটিয়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে।
বৈশালীকে শেষ বার দেখা যায় ‘রক্ষাবন্ধন’ নামক টিভি শো-তে। ‘দঙ্গল টিভি’-তে সেই অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হয়েছিল।
বৈশালী আদৌ আত্মহত্যা করেছেন কি না, বা করে থাকলে কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সুইসাইড নোটে নায়িকা কী লিখেছেন, তা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। প্রিয় অভিনেত্রীর মৃত্যুতে শোকাহত অনুরাগীরা। টেলিভিশনের কলাকুশলীরাও শোক প্রকাশ করেছেন।