নাসা। মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য এই সংস্থাটি তৈরি হয়েছিল ১৯৫৮ সালে। মহাশূন্যের অনন্ত রহস্যের খোঁজ দিতে ও মহাকাশ গবেষণার নতুন নতুন দিক উন্মোচনের জন্য আমেরিকার মাটিতে গড়ে উঠেছিল নাসা।
প্রথমে চাঁদ, তার পরে একে একে গ্রহ-নক্ষত্র ও মহাশূন্যের নানা অচেনা দিক তুলে ধরেছে নাসা। কিন্তু খুব কম লোকেই জানেন, মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণা চালাতে গিয়ে নাসা পৃথিবীর বাসিন্দাদের জন্য কয়েকটি দরকারি বস্তু খুঁজে দিয়েছে যেগুলি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আমূল বদলে দিয়েছে।
প্রথমেই যেটির কথা বলতে হয় তা হল ফোনের ক্যামেরা। যে বস্তুটি ছাড়া বর্তমান স্মার্টফোন একেবারেই অচল তা হল এই ক্যামেরা। ফোনে যে ক্যামেরায় সেল্ফি তোলা হয়, তা কিন্তু নাসা মহাকাশযাত্রার কথা মাথায় রেখে তৈরি করেছিল, এমনটাই বলা হয়ে থাকে।
নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে গবেষণা হয় ক্যামেরার ইমেজ সেন্সর উন্নত করে কী ভাবে মহাকাশযানে ক্ষুদ্র ক্যামেরা ব্যবহার করা যেতে পারে। যাতে ছবির মান ভাল থাকে অথচ তার আকার ছোট হয়।
দৌড়নো বা হাঁটার সময় আমরা যে জুতো ব্যবহার করি তা-ও কিন্তু নাসার গবেষণার ফল। আশির দশকের শেষের দিকে, জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাপোলো এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার আল গ্রসের সঙ্গে যৌথভাবে এমন জুতো তৈরি করে যা স্পেস সুটের সঙ্গে সাজুয্য রেখে চলতে পারে। সেই থেকেই আজকের উন্নত অ্যাথলেটিক জুতোর ধারণা আসে।
বেবি ফুড বা বেবি ফর্মুলা। এটিও নাসার গবেষণার ফসল বলে মনে করা হয়। বাচ্চাদের খাবারে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান মেশানো হয় যা আগে নাসায় মহাকাশ ভ্রমণে খাবার তৈরির জন্য গবেষণা করা হয়েছিল।
এখন অনেকেই বিশেষ ভাবে জীবাণুমুক্ত জল করে পান করে থাকি। আধুনিক ওয়াটার পিউরিফায়ারেরে ধারণা এসেছে নাসার গবেষণাগার থেকেই।
সত্তরের দশকে নাসা দীর্ঘ মহাকাশ ভ্রমণে পানীয় জল কী ভাবে বিশুদ্ধ করা যায় তা বার করতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য একটি পদ্ধতি খুঁজে বার করে। যা আজ বড় বড় শহরে প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষের জন্য পানীয় জল পরিষ্কার করতে এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
অ্যাপোলো মিশনের সময়কালে পরীক্ষার জন্য চাঁদ থেকে নমুনা বার করার জন্য নাসার উপযুক্ত প্রযুক্তির প্রয়োজন ছিল। ব্ল্যাক অ্যান্ড ডেকার নামের একটি সংস্থা চাঁদের মাটি তুলে আনার জন্য হালকা ও মোটরযুক্ত যন্ত্র আবিষ্কার করে। সেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তী সময়ে হাতে বহনযোগ্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার তৈরি হয়।
গান শুনতে বা কথা বলতে অয়্যারলেস হেডসেটের জুড়ি মেলা ভার। আধুনিক ইয়ার পড বা হেডসেটের প্রচলন হয় নাসার বিজ্ঞানীদের জন্যই। নাসা এগুলি তৈরি করেছিল, যাতে মহাকাশচারীরা তার ছাড়াই হেডসেটে কথা বলতে পারেন।
রাস্তা হারিয়ে গেলে বা ঠিকানা খুঁজে পেতে গুগ্ল ম্যাপ ছাড়া গতি নেই। মাত্র ৩০ বছর আগে নাসার বিজ্ঞানীদের হাত ধরে আধুনিক জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের কাজ শুরু হয়।
জিপিএস তথ্য ঠিক করতে সক্ষম সফট্অয়্যার তৈরি করেছিলেন তাঁরা। মূলত আমেরিকার বায়ুসেনার ব্যবহার করার জন্য এটি তৈরি করা হলেও পরবর্তী কালে বিমানচালকদের ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।
দাবি করা হয় প্রথম কম্পিউটার মাউস তৈরি করা হয়েছিল ষাটের দশকে। নাসার বব টেলরের সঙ্গে স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক ডগলাস এঙ্গেলবার্ট এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেন, যাতে আরও ভাল ভাবে কম্পিউটারে তথ্য আদানপ্রদান করা যায়। তাঁরা এই যন্ত্রটির পেটেন্টও নেন।
সব ছবি: সংগৃহীত।