Black Eyed Children

চোখে মণি নেই, কী চায় বোঝা যায় না তা-ও! ‘ব্ল্যাক আইড চিলড্রেন’ কি ক্ষতিকর অতিপ্রাকৃত সত্তা?

ওদের চোখে কোনও মণি নেই। সাধারণত ভৌতিক সিনেমায় যেমন সম্পূর্ণ সাদা চোখের ভূতগ্রস্তদের দেখা যায়, ওরা তেমনও নয়। ওদের চোখের পুরোটাই কালো। আঁখিপল্লবের নীচে যেন ঘুটঘটে অন্ধকার থমকে রয়েছে। ওরা ‘ব্ল্যাক আইড চিলড্রেন’।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৭
০১ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

‘ডোন্ট লেট দেম ইন’— সাদা বাংলায় দাঁড়ায়, ‘ওদের কিছুতেই ভিতরে ঢুকতে দেবেন না’। এই ‘ওরা’টি কারা? বাংলা বা ভারত হলে সোজা বলে দেওয়া যেত ‘নিশি’। এমন এক ভয়ের বস্তু, যার কোনও নির্দিষ্ট অবয়ব নেই। কিন্তু এখানে ‘ওদের’ অবয়ব রয়েছে। কিশোর বয়স্ক ছেলে বা মেয়ের অবয়ব। আর পাঁচ জন কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে ওদের তেমন কোনও ফারাক নেই। কেবল চোখ দু’টি ছাড়া। ওদের চোখে কোনও মণি নেই। সাধারণত ভৌতিক সিনেমায় যেমন সম্পূর্ণ সাদা চোখের ভূতগ্রস্তদের দেখা যায়, ওরা তেমনও নয়। ওদের চোখের পুরোটাই কালো। আঁখিপল্লবের নীচে যেন ঘুটঘটে অন্ধকার থমকে রয়েছে। ওরা ‘ব্ল্যাক আইড চিলড্রেন’। আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে ওদের নিয়ে পল্লবিত রয়েছে নানা ভয়ের কাহিনি।

০২ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

আমেরিকার অন্যান্য অপ্রাকৃত কিংবদন্তির মতো প্রাচীন নয় এই কালো চোখের কিশোরদের কাহিনি। আশির দশক থেকেই এদের ‘অস্তিত্ব’ নিয়ে চর্চা আরম্ভ হয়। এদের চাক্ষুষ করার অভিজ্ঞতা প্রথম লেখেন টেক্সাসের সাংবাদিক ব্রায়ান বেথেল।

০৩ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

১৯৯৬ সাল। টেক্সাসের অ্যাবিলেনের এক স্থানীয় সংবাদপত্রের সাংবাদিক ব্রায়ান বেথেল তাঁর নাইট শিফ্‌ট শেষ করে বেরিয়েছেন। এক শপিং মলের বাইরে পার্কিং লটে তাঁর গাড়ি রাখা ছিল। ব্রায়ান তাঁর গাড়ির ভিতরে গিয়ে বসেন এবং কেবল বিলের টাকা দেওয়ার জন্য একটি চেক লিখতে শুরু করেন। এমন সময় তিনি খানিক অস্বস্তি বোধ করেন। তাঁর মনে হতে থাকে, কেউ বা কারা যেন তাঁর উপর নজর রাখছে।

Advertisement
০৪ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

মাথা তুলে ব্রায়ান দেখেন, একদল কিশোর-কিশোরী তাঁর গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা ব্রায়ানকে জানায়, তারা বাড়িতে মায়ের কাছে যেতে চায়। ওই মলের প্রেক্ষাগৃহে চলা একটি সিনেমার টিকিট কেনার জন্য টাকা আনতে চায়। ব্রায়ানের কেমন যেন সন্দেহ হয়। তিনি খেয়াল করে দেখেন, যে শোয়ের কথা তারা বলছে, তা ৪৫ মিনিট আগে শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সেই কিশোরদের কণ্ঠস্বর আদতে বয়স্ক মানুষের মতো।

০৫ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

পার্কিং লটের নিভু নিভু আলোয় ব্রায়ান এ বার লক্ষ করেন, সেই কিশোরদের চোখের জায়গাগুলো স্বাভাবিক নয়। তাদের চোখে কোনও মণি নেই, এমনকি সাদা অংশও নেই। তাদের চোখের ভিতরটা পুরোপুরি কালো। যেন ঘন অন্ধকার জমাট বেঁধে রয়েছে সেখানে। ব্রায়ান গাড়ি ব্যাক করিয়ে দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে যান। যাওয়ার সময় পিছন ফিরে দেখেন, সেই কিশোরের দলটি নেই। তারা যেন বাতাসে মিশে গিয়েছে।

Advertisement
০৬ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

তাঁর এই অভিজ্ঞতার কথা ব্রায়ান স্থানীয় একটি সংবাদপত্রে লেখেন। সেই থেকে শুধু আমেরিকা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ‘কালো চোখের কিশোর’দের কাহিনি পল্লবিত হতে শুরু করে। এই সব কাহিনি পর্যালোচনা করে অতিপ্রাকৃত বিষয়ের চর্চাকারীরা সিদ্ধান্তে আসেন, এই আঁধার আঁখির কিশোরেরা মানুষ তো নয়ই, এমনকি তারা প্রেতও নয়। তারা খোদ মৃত্যুরই প্রতিরূপ। এমন কথাও বলা হতে থাকে যে, তাদের যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের বেশির ভাগের মধ্যেই আত্মধ্বংসী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তবে এর সপক্ষে কোনও প্রমাণ তাঁরা দিতে পারেননি।

০৭ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

আমেরিকার নর্থ-ওয়েস্ট মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতার অধ্যাপক জ্যাসন ওফুট এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ‘অন্ধকার চোখের কিশোর’দের বিষয়ে তথ্যসন্ধান করে চলেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে সব মানুষ এই কিশোরদের দেখা পেয়েছেন তাঁদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। দ্রষ্টাদের অধিকাংশই তাঁকে জানিয়েছেন, সেই কিশোরদের চোখ নাকি ইঁদুরের চোখের মতো। নিখাদ কালো ছাড়া তাতে অন্য কোনও রংই নেই।

Advertisement
০৮ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

ওফুটের সংগৃহীত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এই কিশোরদের দেখলে মনে হয়, তারা স্কুলপড়ুয়া। তাদের মধ্যে কিন্ডারগার্টেন থেকে হাইস্কুল-পড়ুয়াদের দেখা মিলেছে। তাদের পরনে যে সব পোশাক থাকে, তা পুরনো ফ্যাশনের। কোথাও কোথাও আবার নতুন পোশাক পরিহিত, কোনও খেলার দলের লোগো লাগানো পোশাকেও তাদের দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়। আর সব ক্ষেত্রেই তাদের কণ্ঠস্বর বয়স্কদের মতো। এবং তারা একনাগাড়ে ওঠানামাহীন একঘেয়ে সুরে একই কথা বার বার বলে যায়।

০৯ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

ওফুট জানাচ্ছেন, অনেক সময় কারও বাড়ির দরজায় বেল বাজিয়ে বা কড়া নেড়ে তারা ভিতরে ঢুকে ফোন করতে চায় অথবা বাথরুম ব্যবহার করতে চায়। কোথাও আবার জনহীন হাইওয়েতে চলন্ত গাড়ি থামিয়ে তারা লিফ্‌ট দাবি করে।

১০ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

মন্টক্লেয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্রিজিড বার্কও এই বিষয়ে লেখালিখি করেছেন। তাঁর প্রতিবেদন জানাচ্ছে যে, তাদের দাবি যদি কেউ মেটাতে অস্বীকার করেন, তবে তারা অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার যাঁরা তাদের বাড়িতে বা গাড়িতে ঢোকার অনুমতি দেন, তাঁরা নাকি ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন, এমন উদাহরণও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অনুমতিদাতা হয়তো মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েন অথবা তাঁদের কোনও প্রিয়জন মারা যান।

১১ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

আঁধার চোখের এই আগন্তুকদের কাহিনির সঙ্গে বাংলার প্রাচীন অতিপ্রাকৃত ‘নিশি’র আচরণগত সাদৃশ্য লক্ষণীয়। বাংলার কাহিনি অনুযায়ী নিশি নাকি শেষরাতে কাউকে নাম ধরে ডাকে। তিন বার সেই ডাকে সাড়া না দিলে সে চলে যায়। কিন্তু কেউ যদি ভুলেও তার প্রথম দুই ডাকের মধ্যে সাড়া দিয়ে বসেন, তবে তাঁর সর্বনাশ অনিবার্য। ওফুট জানাচ্ছেন, কালো চোখের কিশোরদের বিষয়ে ভয় ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণই হল, তারা ঠিক কী চায়, তা কেউই জানেন না। সেই অজ্ঞাত বিষয় থেকেই ভয়ের গল্প ডানা মেলে।

১২ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

বার্ক তাঁর লেখায় জানিয়েছেন যে, তাঁরই এক বান্ধবী রাত ৩টের সময় কালো চোখের এক শিশুকে প্রত্যক্ষ করেন। সে তাঁর বাড়ির কলিং বেল বাজিয়েছিল। তখনও তিনি বার্কের এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানের বিন্দুবিসর্গও জানতেন না।

১৩ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

পশ্চিমি বিশ্বের অন্য যে সব জায়গায় আঁধার চোখের আগন্তুকদের কথা রয়েছে, সর্বত্র তাদের ভয়ঙ্কর বলে বর্ণনা করা হয়নি। আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের মধ্যেও এমন কাহিনি প্রচলিত ছিল। বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়ার লেক টাহো এবং নেভাদার পিরামিড হ্রদের আশপাশের অঞ্চলে ‘ওয়াটার বেবিজ়’ হিসাবে পরিচিত এক রকমের অতিপ্রাকৃত জীবের গল্প প্রচলিত রয়েছে, যেখানে রাতবিরেতে তাদের কান্নার শব্দ নাকি অনেকেই শুনতে পান।

১৪ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

ওফুট নিজে এই আঁধার আঁখির আগন্তুকদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। তিনি মনে করেন, এরা আসলে দুর্বল কিছু অতিপ্রাকৃত সত্তা যারা মানুষের কাছে সাহায্য চায়। ওফুটের ভাবনায় তারা ‘প্রেত’ বা মৃত ব্যক্তির আত্মা নয়। তারা মানুষের ক্ষতি করতেও চায় না।

১৫ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

২০১৪ সালে ব্রিটেনের ‘ডেলি স্টার’ সংবাদপত্রে স্ট্যাফোর্ডশায়ারের এক তথাকথিত ভূতুড়ে পানশালায় কালো চোখের কিশোরদের দেখা গিয়েছে বলে দাবি করা হয়। ‘গোস্টহান্টার’ বা ‘ভূতসন্ধানী’রা তাদের ভিন্‌গ্রহী, প্রেত, এমনকি ভ্যাম্পায়ার বলেও চিহ্নিত করেন।

১৬ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

ব্রায়ানের কাহিনি প্রকাশিত হওয়ার পর কয়েক দশক কেটে গিয়েছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে ‘ব্ল্যাক আইড চিলড্রেন’-এর কাহিনিও আজ বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের নিয়ে এক দিকে যেমন ভূতের গল্প রচিত হয়েছে, তেমনই বেশ কিছু সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। তৈরি হয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিও।

১৭ ১৭
The mystery and the legend of Black Eyed Children

আমেরিকার বিজ্ঞান বিষয়ক কলাম লেখিকা শ্যারন এ হিল এই সমস্ত দাবিকেই কিংবদন্তি বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, এই সব কাহিনির কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। তবে, ভূতপ্রেমীরা বিজ্ঞানবাদীদের কথায় কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। আজও ক্রমাগত ‘ব্ল্যাক আইড কিড’দের নিয়ে কাহিনি পল্লবিত হয়ে চলেছে। তৈরি হচ্ছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট এবং স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিও। এই সব কাহিনি এবং ছবিতে আঁধার আঁখির খুদে আগন্তুকেরা কখনও ভয়ঙ্কর, কখনও বা মায়াজড়ানো। অনেক আখ্যান বা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তারা মানুষের সাহচর্য চায়, উষ্ণতা চায়। এগুলি আবার তাদের কখনওই ভয়ঙ্কর বলে প্রতিভাত করে না।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি