গত দু’মাস বাংলাদেশের রাজপথ ছাত্রদের দখলে। রাস্তায় রাস্তায় মিছিল, আন্দোলন। পদ্মাপারের দেশ থেকে সমস্বরে ভেসে আসছিল ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’। তবে সোমবার দুপুরের পর থেকেই চিত্র বদলে যায় বাংলাদেশের। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের অব্যবহিত পরেই হাসিনার সরকারি বাসভবনে শুরু হয় লুটতরাজ। রাজহাঁস থেকে ছাগল, লুটের তালিকায় কিছুই বাদ রাখেননি তাঁরা।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ সূত্রে জানা যায়, হাসিনার দেশত্যাগের পর ঘণ্টাখানেকও পার হয়নি। তার মধ্যেই বহু সাধারণ মানুষ গণভবনের ভিতরে ঢুকে পড়েন। চলে অবিরাম লুটপাট, খাওয়াদাওয়া এবং নিজস্বীর ছড়াছড়ি।
ঘাড়ে, কাঁধে এমনকি পিঠে চাপিয়েও ‘আন্দোলনকারীরা’ গণভবনের ভিতর থেকে নানা সামগ্রী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। সমাজমাধ্যমে এমনই নানা ছবি এবং ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে (যদিও এই ছবি এবং ভিডিয়োগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন)।
গণভবনে ভিতরে গিয়ে সোজা হাসিনার বেডরুমে ঢুকে পড়েছিলেন কেউ কেউ। হাসিনার বিছানা দখল করে সেখানে শুয়ে ছবি তুলতেও বাদ রাখেননি। স্নিকার্স পরে বিছানায় ‘রাজা’র মতো শুয়ে পো়জ় দিতে দেখা যায় এক তরুণকে।
গণভবনের রান্নাঘরে ঢুকে সেখানে খাওয়াদাওয়াও করেছেন অনেকে। গণভবনের ভিতর ঢুকে ধূমপান করেছেন কেউ কেউ। আলমারি থেকে অন্তর্বাস পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন।
টানা বৃষ্টির ফলে কোনও কোনও রাস্তায় জল জমে গিয়েছিল। সেই জল ভেঙে এগিয়ে গিয়েছেন অনেকে। কারও কাঁধে ছিল কম্পিউটারের মনিটর। কারও মাথার উপর সিপিইউ।
গণভবনের বাইরের সবুজ মাঠে সোফা টেনে নিয়ে এসে বিশ্রাম করেছেন কয়েক জন। কেউ সোফার উপর বসে নিশ্চিন্তে মোবাইল ঘেঁটেছেন। কেউ বা ছবি তুলেছেন নানা রকম অঙ্গভঙ্গি করে।
হাতে, মাথায় করে বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়ে রাস্তা দিয়ে লাইন করে হাঁটতে দেখা গিয়েছে অনেককে। কেউ কেউ আবার ট্রলি ভর্তি করে গণভবন থেকে জিনিসপত্র নিয়ে ফিরেছেন।
রাস্তার মাঝে ছিল লাল রঙের একটি সোফা। এক জনই বসতে পারেন সেখানে। সেই সোফার উপর বসে ছবি তোলার সুযোগ ছাড়ছিলেন না প্রায় কেউই।
চেয়ার থেকে শুরু করে কাঠের আসবাব— এত জিনিসের ভার বহন করা এক জনের পক্ষে কষ্টসাধ্য বইকি! তাই দু’-তিন জন মিলে হাত লাগিয়ে গণভবন থেকে আসবাবগুলি ধরাধরি করে নিয়ে গিয়েছেন।
গণভবনের বাইরে দেখা গিয়েছে মহিলাদেরও। হাসিনার আলমারি থেকে পছন্দ করে এক তরুণী তুলে নিয়েছেন তাঁতের একটি শাড়ি। হ্যাঙারসমেত শাড়িটি নিয়ে পোজ়ও দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
গণভবনের ভিতর থেকে একটি রাজহাঁস পাকড়াও করেছেন এক তরুণ।
ছাগল হলেই বা কী! গণভবনের ছাগল তো। কোলে সেই ছাগলটি তুলে জয়ের ভঙ্গিতে হাত তুলে ছবি তোলার জন্য পোজ় দিতে দেখা গিয়েছে এক ব্যক্তিকে।
গণভবনের ভিতরে রাখা ছিল একটি প্লেস্টেশন। গেমপ্রেমী এক তরুণের নজরে পড়ে সেটি। কাঁধে বাক্সসমেত সেই প্লেস্টেশনটি তুলে গণভবন থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
কারও হাতে গল্পের বই, কেউ আবার দেওয়ালে টাঙানো তৈলচিত্রও খুলে নিয়েছেন গণভবনের অন্দরমহল থেকে।
ভোজনপর্ব সারবেন বলে গণভবনের রান্নাঘর থেকে দু’টি থালাও নিয়ে গিয়েছেন এক তরুণ।
ছবি: রয়টার্স, এএফপি থেকে নেওয়া।