সিনেমা নয়। এ ছেলে বাস্তবের মুকুল। তিন বছর বয়সেই গড়গড়িয়ে বলে যায় পূর্বজন্মের কথা। কী পরিণতি হয়েছিল, তাও সে বলে দেয় এ জন্মের বাবা-মাকে। এমনকি তাঁর পরিণতির জন্য কারা দায়ী, তা-ও জানিয়েছিল সে। সেই নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছিল।
ঘটনা সিরিয়ার গোলান হাইট অঞ্চলের। তিন বছর বয়সে সেখানকার একটি বাচ্চা দাবি করে, আগের জন্মে তাঁকে কুঠার দিয়ে খুন করা হয়েছিল। কে করেছিল, তা-ও নাকি জানে সে।
বাচ্চাটি ড্রুজ় সম্প্রদায়ের। পশ্চিম এশিয়ায় ওই সম্প্রদায়ের বাস। আরবিতে কথা বলে তারা। ইজরায়েলে মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশ হলেন আদি জনজাতি ড্রুজ়। অষ্টাদশ শতকে ড্রুজ়েরা সিরিয়ায় এসেছিলেন মূলত লেবানন থেকে।
ড্রুজ় সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, শিশুদের জন্মদাগ আসলে পূর্বজন্মের ইতিহাস বহন করে। আগের জন্মে তার কী ভাবে মৃত্যু হয়েছিল, তা বলে দেয়।
‘সোনার কেল্লা’ ছবিতে মুকুল তার মৃত্যু নিয়ে যদিও বিশেষ কিছু জানাতে পারেনি। শুধুই বলতে পেরেছিল, ‘‘আমি তো বড় হইনি’’। তিন বছরের এই শিশুটি যদিও পরিবারকে জানিয়েছিল সব।
সিরিয়ার শিশুটি জানিয়েছিল, তার কপালে কুঠার দিয়ে মেরে খুন করা হয়েছিল। শিশুটির কপালে ছিল একটা লাল দাগ।
শিশুটির কথা শুনে তাকে সেই গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা-মা। সে ঠিক কথা বলছে কি না, খতিয়ে দেখতে চাইছিলেন তাঁরা। সেই গ্রামে পৌঁছতেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। দেখেন, তিন বছরের খুদে যেন পুরো গ্রামটাই চেনে।
সেই গ্রামে গিয়ে নিজের পূর্বজন্মের নামও মনে পড়ে যায় ওই শিশুর। এর পরেই গ্রামে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন তার বাবা-মা। জানতে পারেন, শিশুটির বলা গতজন্মের নামের এক ব্যক্তি ওই গ্রামেই থাকতেন।
গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে শিশুটির বাবা-মা জানতে পারেন, চার বছর আগে আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান সেই ব্যক্তি। অনেক খোঁজ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
সিরিয়ার গ্রামে দাঁড়িয়ে শিশুটি জানায় তার পূর্বজন্মের খুনির কথা। এর পর সেই ব্যক্তির কাছে গিয়ে সে জিজ্ঞেস করে, ‘‘তুমি তো সেই এলি না?’’ তিনি জবাবে সম্মতি জানান। এর পরেই শিশুটি বলে, ‘‘মনে আছে, আমাদের ঝগড়া হয়েছিল, তুমি আমাকে কুঠার দিয়ে মেরে খুন করেছিলে?’’
অভিযুক্ত যদিও প্রথমে কিছুই স্বীকার করেননি। ঘটনাচক্রে, ওই অভিযুক্ত আসলে শিশুটির পূর্বজন্মের প্রতিবেশী ছিলেন। দু’জনের মধ্যে বিবাদের জেরেই খুনটি হয়েছিল বলে দাবি করেছিল শিশুটি।
এর পর শিশুটি বাবা-মাকে একটি জায়গায় নিয়ে যায়। দাবি করে, সেখানে তার দেহ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।
মাটি খুঁড়ে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। সেই কঙ্কালের কপালে ছিল আঘাতের চিহ্ন। অদ্ভুত ভাবে, শিশুটিরও কপালের ওই অংশেই ছিল সেই লাল দাগ।
যে কুঠার দিয়ে শিশুটিকে আগের জন্মে খুন করা হয়েছিল, সেটিও উদ্ধার করে পুলিশ।
অগত্যা নিজের দোষের কথা স্বীকার করেন ওই খুনি। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। শিশুটির এই ঘটনা নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন জার্মান থেরাপিস্ট ট্রুটজ় হার্ডো। বইয়ের নাম ‘চিলড্রেন হু হ্যাভ লিভড বিফোর: রিইনকার্নেশন টুডে’।
তবে পূর্বজন্ম বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। এর স্বপক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও মেলেনি।