দীপাবলি উপলক্ষে চারিদিকে আলোর রোশনাই গোটা দেশে। মিষ্টি থেকে মুখরোচক খাবার— দীপাবলির সময় আতিথেয়তায়ও কমতি থাকে না। কিন্তু ভারতেরই একটি গ্রাম তখন থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। দীপাবলি যেন গ্রামবাসীদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। পালন করলেই নাকি মৃত্যু নিশ্চিত!
হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর জেলা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সাম্মো গ্রাম। পাহাড়ের কোলে এই গ্রামটি বেশ নিরিবিলি। পর্যটকদের ভিড়ও খুব একটা নেই। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া এই গ্রামটিকে জড়িয়ে রয়েছে এক তরুণীর ‘অভিশাপ’।
পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গ্রামবাসীদের দাবি, বহু বহু বছর ধরে সাম্মো গ্রামে দীপাবলি উদ্যাপন করা হয় না। গ্রামের কোনও বাসিন্দা যদি ভুল করেও ঘরে অতিরিক্ত আলো জ্বালিয়ে ফেলেন অথবা দীপাবলি উপলক্ষে কোনও বিশেষ খাবার রান্না করেন, তবে তাঁর সংসারে নেমে আসে ভয়ানক বিপদ। মৃত্যুরও মুখোমুখি হন সেই পরিবারের সদস্যেরা।
গ্রামবাসীরা জানান, গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক প্রাচীন অভিশাপ। এক তরুণীর মৃত্যুই নাকি গ্রামের আলো কেড়ে নিয়েছে। আলোর উৎসবে তাই অন্ধকারে ডুবে থাকে গোটা গ্রাম।
লোকমুখে শোনা যায়, কয়েকশো বছর আগে সাম্মো গ্রামের এক বিবাহিত তরুণী দীপাবলি উদ্যাপন করতে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন। যাওয়ার পথেই দুঃসংবাদ পান তিনি।
দীপাবলির দিন তরুণীর কাছে পৌঁছয় তাঁর জীবনসঙ্গীর মৃত্যুসংবাদ। তরুণীর স্বামী ছিলেন সৈনিক। স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি ওই তরুণী।
গ্রামবাসীদের দাবি, সেই সময় অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন তরুণী। স্বামীর মৃত্যুর পর একা কী ভাবে জীবনযাপন করবেন তা ঠাহর করতে পারছিলেন না তিনি। তাই সহমরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।
সহমরণের সময় গ্রামবাসীদের উদ্দেশে অভিশাপ দিয়েছিলেন তরুণী। গ্রামের কোনও বাসিন্দা দীপাবলি উদ্যাপন করলেই নাকি ভয়াবহ বিপদ আছড়ে পড়বে তাঁর সংসারে। শুধু তাই নয়, তরুণীর সেই অভিশাপে নাকি নেমে আসে মৃত্যুও।
পিটিআই সূত্রে খবর, অভিশাপের ভয়ে বহু বহু বছর ধরে গ্রামের কেউ দীপাবলি পালন করেন না। আলো দিয়ে কেউ ঘরবাড়ি সাজান না। এমনকি উৎসব উপলক্ষে বিশেষ কোনও খাবারও রান্না হয় না। ৭০ বছর বয়সি এক বৃদ্ধের দাবি, জন্মের পর থেকে এই গ্রামে কোনও বছর দীপাবলি উদ্যাপন করতে দেখেননি তিনি।
সাম্মো গ্রামে জন্ম হলেও সেখানকার এক বাসিন্দা গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে থাকতেন। পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। দীপাবলি উপলক্ষে তাঁর বাড়িতে এক বার বিশেষ খাবারদাবার রান্না করা হয়েছিল। কিন্তু বিপদের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি তাঁরাও। গ্রামবাসীদের দাবি, তাঁদের বাড়িতে সে দিন আগুন লেগে যায়।
তরুণ প্রজন্মের কেউ কেউ গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অভিশাপকে তোয়াক্কা না করে দীপাবলি উদ্যাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য নাকি পিছু নিয়েছিল তাঁদেরও।
গ্রামের মহিলাদের দাবি, দীপাবলির সময় গ্রামের বাসিন্দারা সকলে ঘরবন্দি থাকেন। উৎসবের ছিটেফোঁটাও লক্ষ করা যায় না সাম্মো গ্রামে। আলো-বাজি থেকে সকলেই শতহস্ত দূরে থাকেন।
দীপাবলির সময় সাম্মো গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দরজার সামনে প্রদীপ জ্বালানো হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রদীপ জ্বালিয়ে তরুণীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তাঁরা। না হলেই নাকি সেই তরুণীর ‘আত্মা’ রুষ্ট হয়।
গ্রামবাসীদের ভয় দূর করতে সাম্মো গ্রামের কয়েক জন বাসিন্দা দীপাবলি উদ্যাপন করে শতাব্দীপ্রাচীন অভিশাপকে কুসংস্কার বলে দাগাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আখেরে কোনও লাভ হয়নি। বরং তাঁদের জীবনে নাকি ক্ষতিই হয়েছে।
পিটিআই সূত্রে জানা যায়, সাম্মো গ্রামের বাসিন্দারা এই ‘অভিশাপ’ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে নানা ধরনের যজ্ঞ করেছেন। গ্রাম থেকে দূরেও চলে গিয়েছেন অনেকে। কিন্তু এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাননি কেউই। গ্রামটি প্রতি বছর দীপাবলির সময় ডুবে থাকে অন্ধকারে।
সব ছবি: সংগৃহীত।