বলিপাড়ার ‘ভাইজান’। সলমন খানের কেরিয়ারে সফল ছবির সংখ্যা কম নয়। দেশ জুড়ে তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তের সংখ্যা বহু। তবে অভিনেতার জীবনে বিতর্কেরও অভাব নেই।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছেন সলমন। কখনও সিনেমার তাগিদে, কখনও আবার ‘স্টাইল’ বজায় রাখতে। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে একটা জিনিস কখনও তাঁর কাছছাড়া হয়নি। আর তা হল সলমনের ডান হাতে থাকা আকাশি রঙের পাথর দিয়ে সজ্জিত ব্রেসলেটটি।
সলমনের মতোই জনপ্রিয় তাঁর ব্রেসলেট। মাঝে চকচকে আকাশি পাথর থাকা সেই রুপোর ব্রেসলেট যেন অভিনেতার শরীরেরই অংশ। ওই ব্রেসলেট ছাড়া তাঁকে কল্পনাও করা যায় না।
ফিল্মের পর্দায়, টেলিভিশনে সঞ্চালনার কাজে অথবা ঘরোয়া আড্ডায়— সলমনের ডান হাতে সব সময়ই দেখা যায় একটি ব্রেসলেট। একমাত্র ফিল্মের চরিত্রের প্রয়োজনে কখনও সেই ব্রেসলেটটি হাতছাড়া করতে বাধ্য হন সলমন। না হলে দিনরাত নাকি তিনি সেটি পরেই থাকেন!
এমনকি, তিনি কোন পার্টিতে কী পোশাকে এলেন, হেয়ারস্টাইল বদলালেন কি না, তা নিয়ে ‘পেজ থ্রি’-র পাতা জমজমাট থাকে। তবে সল্লু মিয়াঁর ডান হাতের ব্রেসলেট নিয়ে দীর্ঘ দিন বিশেষ কিছু জানা যায়নি।
তবে তাঁর বহু ভক্তেরই মনে প্রশ্ন, কেন ওই ব্রেসলেট সব সময় পরে থাকেন সলমন? কয়েক বছর আগে একটি অনুষ্ঠানে সেই প্রশ্নের উত্তর নিজেই দিয়েছিলেন অভিনেতা।
সলমন জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা সেলিম খানের কাছেও একই ব্রেসলেট ছিল। সেলিম সব সময় সেটি পরে থাকতেন। পরে অভিনেতা সেই ব্রেসলেট বাবার থেকে নিয়ে পরতে শুরু করেন। তবে ব্রেসলেটটি তিনি তখন পরে থাকতেন কেতার জন্য।
সলমন বলেছিলেন, ‘‘আমার বাবা সব সময় এটা পরতেন। আমি যখন বড় হচ্ছিলাম তখন আমিও এটা পরতে শুরু করি। আমার হাতে ব্রেসলিটটি মানাত খুব। যেমন বাচ্চারা খেলনা নিয়ে খেলে আমিও ব্রেসলেট নিয়ে খেলতাম।’’
অভিনেতা আরও জানিয়েছিলেন, এর পর যখন তিনি বলিউডে পা দেন, তখন তাঁর বাবা সেলিম একই রকম একটি ব্রেসলেট তাঁকেও এনে দেন।
সলমনের কথায়, ‘‘বলিউডে কাজ শুরু করার পর বাবা আমাকে একেবারে নিজের ব্রেসলেটের মতো দেখতে একটি ব্রেসলেট উপহার দেন। সেই থেকে এটা আমার সঙ্গেই রয়েছে।’’
বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে সলমন আরও বলেছিলেন, ‘‘আমার ব্রেসলেটের মধ্যে এই যে পাথরটা দেখছেন, একে ফিরোজা বলে। এ ধরনের জীবন্ত পাথর দু’টি রয়েছে। একটা হল গ্রিক আর একটা ফিরোজা।’’
নিজের ডান হাতের ব্রেসলেটটিকে সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করেন সলমন। তিনি জানিয়েছিলেন, সমস্ত নেতিবাচক মনোভাব বুঝে নেয় ফিরোজা। পাশাপাশি দাবি করেছিলেন, প্রত্যেক বার অশুভ কিছুর মুখোমুখি হলে তা নাকি ফিরোজা বুঝতে পেরে যায়।
সলমন জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েক বার তাঁর ব্রেসলেটের পাথরে চিড় ধরে গিয়েছে। তা যে অশুভ ঘটনার ইঙ্গিত, তা-ও মনে করেন সলমন। মোট সাত বার ওই পাথর বদলাতে হয়েছে সলমনকে।
সেই সঙ্গে সল্লু বলেছিলেন, ‘‘নেতিবাচক কোনও কিছু আমার দিকে ধেয়ে এলে এই পাথর তা আটকে দেয়। পাথরের শিরায় সেই অশুভ শক্তিকে শুষে নেয় ফিরোজা। সে কারণেই তাতে চিড় ধরে যায়।’’
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (অজিত পওয়ার গোষ্ঠী)-র নেতা বাবা সিদ্দিকি হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে এসেছে গ্যাংস্টার লরেন্স বিশ্নোইয়ের নাম। খুনের দায় স্বীকার করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছে কুখ্যাত এই দুষ্কৃতীর দল। আর তার পর থেকে চর্চায় রয়েছেন বলি অভিনেতা সলমন খানও।
অতীতে একাধিক বার সলমনের উপর হামলার ছক কষার অভিযোগ উঠেছে বিশ্নোই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে।
কিন্তু কেন বার বার সলমন খানকে খুনের হুমকি দিচ্ছে বিশ্নোই গ্যাং? এর নেপথ্যে রয়েছে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা। ১৯৯৮ সালে রাজস্থানের জোধপুরে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিং করতে যান সলমন খান। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনায় বিশ্নোই সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত লাগে। কৃষ্ণসার হরিণকে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করেন তাঁরা। ২০১৮ সালে গ্রেফতারির পর আদালতে দাঁড়িয়ে লরেন্স বিশ্নোই হুমকির সুরে বলেছিলেন, ‘‘জোধপুরে আমরা সলমন খানকে হত্যা করব। আমরা ব্যবস্থা নিলেই সবাই জানতে পারবে। আমি এখনও পর্যন্ত কিছুই করিনি। ওরা বিনা কারণে আমার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ এনেছে।’’
২০১৮ সালে সম্পথ নেহরা নামের এক সুপারি কিলারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তি সলমনকে খুনের জন্য তাঁর বাড়ি রেকি করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। বিশ্নোইয়ের নির্দেশেই নেহরা ওখানে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তদন্তকারীরা।
২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিল সলমনের বান্দ্রার বাড়ির সামনে বাইকে করে এসে গুলি চালায় দুই দুষ্কৃতী। তবে তাতে অবশ্য অভিনেতার কোনও ক্ষতি হয়নি। ওই ঘটনার সঙ্গেও বিশ্নোই গ্যাং জড়িত ছিল বলে সন্দেহ পুলিশের।
সব ছবি: সংগৃহীত।
বাবা সিদ্দিকিকে খুনের দায় স্বীকারের পরে নতুন করে অভিনেতাকে খুনের হুমকি দিয়েছে বিশ্নোই গ্যাং। সমাজমাধ্যমে করা একটি পোস্টে তারা বলেছে, ‘‘আমাদের কারও সঙ্গে কোনও শত্রুতা নেই। দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাং ও সলমন খানকে সাহায্য করলে কোনও ছাড় পাওয়া যাবে না। যাঁরা সাহায্য করছেন তাঁরা সমস্ত হিসাব ঠিক রাখুন।’’
সেই আবহে ইতিমধ্যেই সলমনের বাড়ির সামনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে অনেকগুলি সিসি ক্যামেরা। পুলিশ আধিকারিকেরা কড়া নজর রাখছেন অভিনেতার বাড়ির চারপাশে। অভিনেতার নিরাপত্তাও অনেক বাড়ানো হয়েছে। ওয়াই প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে তাঁকে। অভিনেতার বাড়ির বাইরে ভিড় জমানো এবং নিজস্বী তোলার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।