হুমকি এল, “কোথায় রাখবি আমায়?” পাল্টা হুমকি এল, “হাতের ব্লেডটা তোকে রাখতে বলেছি।” শনিবার রাতে হাওড়া-মালদহ ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসে দুই যাত্রীর মধ্যে এই ভাবেই শুরু হয়েছিল কথোপকথন।
কিছু ক্ষণের জন্য পরিস্থিতি শান্ত। তার পর প্রথম যাত্রী সটান দ্বিতীয় যাত্রীর আসনে পা তুলে দিলেন। দ্বিতীয় যাত্রী উত্তেজিত হয়ে উঠে এলে প্রথম যাত্রী তাঁকে ‘চুপ করে’ বসার নির্দেশ দিলেন।
আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল পরিস্থিতি। এ বার প্রথম যাত্রী দ্বিতীয় যাত্রীর গায়ে হাত তুললেন। হাতাহাতি বেধে গেল দু’জনের মধ্যে। হাতাহাতির সময় দ্বিতীয় যাত্রী ট্রেনের দরজা দিয়ে ঠেলে ফেলে দিলেন প্রথম যাত্রীকে।
এর পরের দৃশ্যও কম চিত্তাকর্ষক নয়। প্রথম যাত্রীকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার পর নির্বিকার মুখে বসে পড়তে দেখা গেল দ্বিতীয় যাত্রীকে। কপালে হাত ঠেকিয়ে এক বার প্রণামও করে নিতে দেখা গেল। ভাবখানা এমন যেন, আপদ বিদায় হল!
এই সব কিছুই প্রকাশ্যে এসেছে একটি ভিডিয়োর সৌজন্যে। ভিডিয়োটি করেছেন ট্রেনেরই অন্য এক যাত্রী।
মূক ও বধির সেই সহযাত্রী মুরারই থানায় গিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে গোটা ঘটনাটি বর্ণনা করেন পুলিশের কাছে। পুলিশ সেই ভিত্তিতেই ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়া ওই যাত্রীর সন্ধান শুরু করে।
রেলপুলিশ তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় তারাপীঠ রোড ও রামপুরহাট স্টেশনের মাঝে রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার করে। তার পর তাঁকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা যায় পড়ে যাওয়া যাত্রীর নাম সজল শেখ। বীরভূমের রামপুরহাট থানার সুঁদিপুরে তাঁর বাড়ি। অবশ্য যে যাত্রী তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়েছেন, তাঁর নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা জানান, সজলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় গুরুতর আঘাত লেগেছে।
রবিবার সকালে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে শনিবারের সব ঘটনা অকপটে জানান সজল। স্বীকার করেন যে ট্রেনে তিনি ‘ড্রিঙ্ক’ (মদ্যপান) করে উঠেছিলেন।
আহত সজলের কথায়, ‘‘কাল (শনিবার) আমি সাঁইথিয়া থেকে আসছিলাম। মল্লারপুরে নেমে হালকা ড্রিঙ্ক (মদ্যপান) করেছিলাম। ড্রিঙ্ক করে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ধরে বাড়ি আসছিলাম।”
কিন্তু হঠাৎ ব্লেড বের করে সহযাত্রীকে হুমকি দিতে গেলেন কেন সজল? উত্তরে তিনি বললেন, “ট্রেনের তিন-চার জন যাত্রী নিজেদের মধ্যে গালাগালি করছিল। পাশে কয়েকটি পরিবারের লোকজন বসে ছিলেন। আমি বারণ করেছিলাম ওদের (গালাগালি দিতে)। সেটাই দোষের হয়ে গেল।”
সজল বলে চলেন, “আমার কলার ধরেছিল। আমি পকেট থেকে ব্লেড বার করেছিলাম ওদের মারার জন্য। তার পর যে কখন আমায় গাড়ি (পড়ুন ট্রেন) থেকে ফেলে দিয়েছে, সেটা আমার মনে নেই।’’
সজল জানালেন কী ভাবে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হল, তা আর এখন তাঁর মনে নেই। শুধু মনে আছে যে, তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় রেললাইনে পড়ে আছেন। মাথা থেকে পা পর্যন্ত যন্ত্রণা করছে।
তাঁকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া যাত্রীকে দেখলে চিনতে পারবেন বলেও দাবি করলেন সজল। যদিও ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ায় অভিযুক্তকে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
ভিডিয়োটির সূত্র ধরে ওই যাত্রীর সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।