বড়পর্দায় তাঁকে ডাকাবুকো চরিত্রে ব়ড়একটা দেখা যায়নি। বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাশের বা়ড়ির দুষ্টুমিষ্টি মেয়ের মতো উচ্ছল, আদুরে। দু’গালে বড়সড় টোল। হাসি ছড়ালে ডাগর চোখেও ঝলকানি খেলে যায়। বলিউডি পর্দায় প্রীতির ‘ইমেজ’ যেন খানিকটাএমনই। তবে এমন নিরীহ ‘ইমেজে’র প্রীতিই এক আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। সেই ডন নাকি ছোটা শাকিল!
ছবি: সংগৃহীত।
৩১ জানুয়ারি ৪৭-এ পা রেখেছেন প্রীতি। সংবাদমাধ্যমে তা নিয়ে কম হইচই হয়নি। যদিও আজকাল আর ফিল্মি পর্দায় দেখা যায় না প্রীতিকে। বরং পঞ্জাব কিংসের অন্যতম মালিক আইপিএলের মাঠেই বেশি দাপাদাপি করেন। ম্যাচ চলাকালীন কখনও চাপা টেনশনে, কখনও বা উত্তেজনায় ফেটে পড়েন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
প্রীতি যে ছোটা শাকিলের মতো ডনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন, তা নাকি অনেকেই আঁচ করতে পারেননি। তবে জীবনের প্রথম বলিউড ফিল্মেই যিনি কুমারী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে ‘ঝুঁকি’ নিয়েছেন, তাঁকে আরপাঁচটা বলিউড নায়িকার সঙ্গে একসারিতে অনেকেই রাখতে চান না।
ছবি: সংগৃহীত।
সালটা ছিল ২০০১। ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ ফিল্মের শ্যুটিং চলছে। সলমন খানের সঙ্গে জুটিতে রয়েছেন প্রীতি। পরিচালক জুটি আব্বাস-মস্তানের সেই ফিল্মের কাজ চলাকালীনই প্রীতির কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে হুমকি ফোন আসে বলে অভিযোগ।
ছবি: সংগৃহীত।
অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে তাঁর কাছ থেকে ৫০ লক্ষের বেশি টাকা চাওয়া হত বলে দাবি প্রীতি। মুম্বইয়ের আদালতে দাঁড়িয়ে এ দাবি করেছিলেন তিনি। ছোটা শাকিলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ছিল তাঁর। আদালতে ছোটা শাকিল-সহ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যও দেন প্রীতি।
ছবি: সংগৃহীত।
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী প্রীতি এক সময় স্নাতকোত্তর পর্বে ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এ হেন প্রীতি তোলাবাজির হুমকি পাওয়ার পর চুপচাপ বসে থাকেননি।
ছবি: সংগৃহীত।
তোলাবাজির বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে খোলাখুলি কথাও বলেন প্রীতি। তবে তা ঘটনার ১৭ বছর পর। কী হয়েছিল, কোন পরিস্থিতিতে আদালতের দ্বারস্থ হন, তা-ও খোলসা করেছেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
২০১৮ সালে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সম্মেলন চলাকালীন প্রীতির দাবি ছিল, আদালতে ছোটা শাকিলের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন তিনি।
ছবি: সংগৃহীত।
ছোটা শাকিলের ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলেন তাঁর ফিল্মের লোকজনও। বলিউডি পাড়ায় এ জল্পনাও ছড়িয়েছিল যে ‘চোরি চোরি... ’ ফিল্মের প্রযোজক নাজিম রিজভি এবং লগ্নিকারী ভরত শাহের মাথায় নাকি গ্যাংস্টার ছোটা শাকিলের হাত ছিল।
ছবি: সংগৃহীত।
ছোটা শাকিলের বিরুদ্ধে প্রীতি আদালতে ছুটলেও তেমনটা করেননি অমিতাভ বচ্চন, সলমন খান, রাকেশ রোশন এবং মহেশ মঞ্জরেকর। কানাঘুষোয় শোনা যায়, তাঁরা ছোটা শাকিলের হুমকি-ফোন পেয়েছিলেন। তবে আদালতে বিবৃতি দেওয়ার ঠিক আগেই পিছু হঠেন তাঁরা।
ছবি: সংগৃহীত।
তারকাদের নিঃশ্চুপ থাকা নিয়েও তোপ দেগেছিলেন প্রীতি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সকলেই যদি পিছিয়ে আসবেন জানা থাকলে আমিও বোধ হয় মুখ খুলতাম না।’’ প্রীতি আরও বলেন, ‘‘হুমকি পাওয়ার পর জীবনে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলাম। আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। কারণ আদালতে সাক্ষী দেওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই তা টিভির মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল।’’
প্রীতির সাহস দেখে বাহবা দিয়েছিলেন অনেকেই। ঘটনার ১৭ বছর পর প্রীতি বলেছিলেন, ‘‘ওরা আমাকে ভয় দেখালেও ঠিকঠাক ছিলাম। কিন্তু এক সময় আমাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেছিল। চাপের মুখে মাথা ঠান্ডা রাখতে অসুবিধা হয় না। তবে লোকে আমাকে গালিগালাজ করবে আর আমি চুপ করে বসে থাকব, সেটা অসহ্য! সৌভাগ্যের কথা যে আমার নামডাক রয়েছে। না হলে যে কী সমস্যাই হত!’’
ছবি: সংগৃহীত।
তারকা হলেও তো প্রীতির মতো এত সাহস দেখাতে পারেননি অমিতাভ-সলমনেরা। সে জবাবও দিয়েছেন প্রীতি। তিনি বলেন, ‘‘সে সময় তো আমার কোনও পিছুটান ছিল না। সংসার শুরু করিনি। বাচ্চাকাচ্চাও নেই। ফলে সাহস জুটেই গিয়েছিল!’’
ছবি: সংগৃহীত।