বেশ অল্প বয়সেই মডেলিংয়ের দুনিয়ায় নাম করেছিলেন। একের পর এক বিখ্যাত পত্রিকার হয়ে ফটোশুট করেছিলেন। এমনকি ‘প্লেবয়’ পত্রিকাতেও কাজ করেছিলেন তিনি। সেই ক্রিস্টিনা কার্লিন-ক্রাফটের পরিণতি কিন্তু ছিল ভয়ঙ্কর।
ফিলাডেলফিয়ায় নিজের বাড়িতেই গলা টিপে খুন করা হয়েছিল ক্রিস্টিনাকে। রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিলেন ক্রিস্টিনা। এক অপরিচিতকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই খুন হন প্রাক্তন প্লেবয়-মডেল। সেই রহস্য সমাধান করতে বেশ বেগ পেতে হয় আমেরিকার পুলিশকে।
২০০৯ সালের ৪ মে ‘প্লেবয়’ পত্রিকায় দেখা গিয়েছিল সুন্দরী ক্রিস্টিনাকে। বহু মানুষের মন ছুঁয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ২২ অগস্ট নিজের বাড়িতে খুন হন ৩৬ বছরের মডেল।
ক্রিস্টিনার রক্তাক্ত দেহ দেখে এক পুলিশকর্মী বলেছিলেন, ‘‘এত ভয়ঙ্কর পরিণতি আগে কখনও দেখিনি।’’ তাঁর মৃত্যুরহস্য নিয়ে ডিসকভারি চ্যানেলে তথ্যচিত্রও দেখানো হয়েছিল।
‘প্লেবয়’-এর সাইবার ক্লাব শাখায় নগ্ন ছবি বার হয়েছিল ক্রিস্টিনার। ছবি দেখার জন্য সাবস্ক্রাইব করতে হয়। ওই সাইবার ক্লাবে জনপ্রিয় হয়েছিলেন ক্রিস্টিনা। তবে কিছু দিন পরই তাঁর চাকরি যায়। কেন, সেই নিয়েও ধন্দ তৈরি হয়েছিল।
‘প্লেবয়’ পত্রিকার প্রধান হিউ হেফনারের প্রাক্তন বান্ধবী হোলি ম্যাডিসন এর সম্ভাব্য কারণ জানিয়েছিলেন একটি সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সেই বছর হয়তো শ্যামবর্ণের সুন্দরীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। তাই ক্রিস্টিনা আর সুযোগ পাননি।’’
ক্রিস্টিনার বাদ পড়ার আরও একটি কারণ জানিয়েছিলেন হোলি। তাঁর কথায়, ‘‘প্লেবয়ের হয়ে শুটের সময় ক্রিস্টিনার বয়স ছিল ২৬। সেখানে অন্য মডেলদের বয়স অনেক কম ছিল। তাই হয়তো আর সুযোগ পাননি তিনি।’’
ক্রিস্টিনার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল আলেকজান্ডার সিকোটেলির। বান্ধবীর মৃত্যুর খবরে হতবাক হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পুলিশ ফোন করে খবরটি দিয়েছিল। আলেকজান্ডার সব শুনে আর কথা বলতে পারেননি।
খুন হওয়ার চার দিন আগে ক্রিস্টিনার বাড়িতে চুরি হয়েছিল। তিনি সেই নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারেন, ফিলাডেলফিয়ার একটি পানশালায় ক্রিস্টিনাকে মাদক খাইয়েছিলেন এক ব্যক্তি। নাম আন্দ্রে মিল্টন। এর পর ক্রিস্টিনার ফ্ল্যাটে ঢুকে মিল্টন দামি জিনিসপত্র চুরি করেন বলে অভিযোগ।
ক্রিস্টিনার খুনের পরে সেই মিল্টনের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তড়িঘড়ি মিল্টন জানিয়ে দেন, তিনি চুরি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু চার দিন পর খুন করতে যাননি।
এর পরেই পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তের খোঁজ শুরু করে। অভিযুক্তের একটি সম্ভাব্য স্কেচ তৈরি করে প্রকাশ করে পুলিশ। রাস্তায় সেই পোস্টার টাঙানো হয়। খবরের চ্যানেলেও দেখানো হয়।
এক ট্যাক্সিচালক অভিযুক্তকে চিনতে পেরেছিলেন। পুলিশকে গিয়ে জানিয়েছিলেন, ক্রিস্টিনাকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। ট্যাক্সিচালককে বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করার জন্য ১০০ ডলার অতিরিক্তও দিয়েছিলেন।
এর পরেই পুলিশ ওই ব্যক্তির খোঁজ শুরু করে। যদিও কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না অভিযুক্তকে। এর মধ্যে ক্রিস্টিনার এক তুতো বোন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, খুনের রাতে তাঁকে ফোন করেছিলেন মডেল। পাশ থেকে কেউ এক জন বলছিলেন, ‘‘পুলিশকে ফোন কোরো না।’’
২০১৮ সালের ২৬ অগস্ট এক ব্যক্তি থানায় এসে জানান, ক্রিস্টিনার খুনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিনি চেনেন। নাম জোনাথন হ্যারিস। বহু বছর ধরে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত তিনি। চুরি-ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এর পর জোনাথনের বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। তিনি জানান, অভিযুক্ত পিটসবুর্গের বাসে উঠেছেন। পিটসবুর্গে জোনাথনকে ধরার জন্য অপেক্ষা করছিল পুলিশের একটি দল। সেখানে তিনি বাস থেকে নামতেই ধরে ফেলে পুলিশ।
পুলিশকে জেরায় জোনাথন বলেন, ক্রিস্টিনার খুনের রাতে তিনি মদ, গাঁজা, কোকেন সেবন করেছিলেন। ক্রিস্টিনা তাঁর থেকে কোকেন নিয়েছিলেন। কিন্তু দাম দেননি। রেগে গিয়ে তাঁকে খুন করেন তিনি।
কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগে মাদক নেননি ক্রিস্টিনা। পুলিশের চাপে খুনের কথা স্বীকার করেন জোনাথন।
জোনাথন জানান, ক্রিস্টিনা তাঁর থেকে মাদক নেননি। মাদকের বশেই সম্ভবত খুন করেছিলেন। ক্রিস্টিনাকে খুনের পর পোশাকে রক্ত লেগে গিয়েছিল জোনাথনের। মডেলের বাড়ি থেকে তাঁর জামা পরেই বেরিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের মে মাসে খুনের দায়ে জোনাথনের যাবজ্জীবন হয়েছিল।