উত্তরাধিকার সূত্রে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। গোয়ালিয়রের রাজ পরিবারের সন্তান। বাবা দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। নিজে বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। যদিও এ সব পরিচয়ে আটকে থাকতে চাননি তিনি। তাই নতুন করে নিজের পরিচয় তৈরি করেছেন। কৃষিক্ষেত্রে যাত্রা শুরু করেছেন মহানার্যমান শিণ্ডে।
গোয়ালিয়রে ৪০০ ঘর বিশিষ্ট একটি প্রাসাদে থাকেন মহানার্যমান। বাবা দুঁদে রাজনীতিক জ্যোতিরাদিত্য শিণ্ডে। অনেকেই মনে করেছিলেন, হয়তো রাজনীতিতেই যাবেন তিনি। কিন্তু ২৭ বছরের যুবক আপাতত সে পথে পা বাড়াননি। বরং সচরাচর কেউ হাঁটেন না, এমন পথেই পা বাড়িয়েছেন। বন্ধু সূর্যাংশ রানার সঙ্গে খুলেছেন ‘মাই মাণ্ডি’।
বাবার মতোই মহানার্যমানের পড়াশোনা দুন স্কুলে। আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করেছেন তিনি।
লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে বিশেষ একটি কোর্সও করেছেন মহানার্যমান। তাঁর ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, ‘পশ্চিম এশিয়া এবং বিশ্ব রাজনীতি’ নিয়ে একটি কোর্স করেছেন তিনি।
নিউ ইয়র্কে ‘ম্যাক্রো অ্যাডভাইজ়রি পার্টনার’ সংস্থায় ইন্টার্নশিপ করেছেন তিনি। সান ফ্রান্সিসকোর ‘সফটব্যাঙ্ক’ গোষ্ঠীর সংস্থাতেও অস্থায়ী পদে কাজ করেছিলেন তিনি। লন্ডনের ফাইন আর্ট সংস্থা ‘ক্রিস্টি’, ভুটানের ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস কমিশন’-এও ইন্টার্নশিপ করেছেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়। দেশের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলির অধীনে কিছু দিন ইন্টার্নশিপ করেছিলেন মহানার্যমান। বাবা জ্যোতিরাদিত্যের নির্বাচনী প্রচারও সামলেছিলেন তিনি।
সঙ্গীত এবং ক্রিকেটেও দারুণ অনুরক্ত মহানার্যমান। সেই অনুরাগ থেকেই আমেরিকায় ক্যাম্পবেল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল শুরু করেন তিনি। ওই উৎসবে প্রবেশমূল্য ৭৫ হাজার টাকা। গানবাজনার সঙ্গে খাবার, পানীয়, সবেরই ব্যবস্থা থাকে ওই উৎসবে।
২০২২ সালে গোয়ালিয়র ডিভিশনের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন মহানার্যমান।
বরাবর কৃষিকাজের প্রতি টান ছিল মহানার্যমানের। সে কারণে কৃষিকাজ নিয়েই কিছু করার কথা ভাবেন তিনি। ২০২২ সালে শুরু করেন ‘মাই মাণ্ডি’।
‘মাই মাণ্ডি’ তাজা সব্জি, ফল ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে। সরাসরি কৃষকের থেকে কেনা হয় এই ফল, সব্জি। অনলাইন মাধ্যমেও অর্ডার করা যায়। খুব তাড়াতাড়ি সাফল্যের মুখ দেখেছে মহানার্যমানের সংস্থা।
মহানার্যমানের সংস্থা একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ ফল, সব্জি কিনে নেয় কৃষকদের থেকে। তার পর সেগুলি সংরক্ষণ করে। সেই ফল, সব্জি ঘুরে ঘুরে বিক্রি করা হয়।
আপাতত গোয়ালিয়র, নাগপুর, জয়পুর, আগরায় এই পরিষেবা চালু রয়েছে। মহানার্যমানের আশা, চলতি বছরের শেষে তাঁর সংস্থার মাসিক রাজস্বের পরিমাণ বেড়ে হবে ৪.২ কোটি টাকা।
ব্যবসায় সফল হতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে দ্বিধা করেন না মহানার্যমান। তখন দেখে বোঝা যাবে না, তিনি রাজপরিবারের ছেলে। থাকেন প্রাসাদে।
গোয়ালিয়রে জয়বিলাস মহলে থাকেন মহানার্যমান। শিণ্ডে পরিবারের বাসস্থান এটাই। এই প্রাসাদে ঘরের সংখ্যা ৪০০।
১ লক্ষ ২৪ হাজার ৭৭১ বর্গফুট জমির উপর রয়েছে এই তিন তলা প্রাসাদ। লাগোয়া এক বর্গমাইল এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে বাগান।
এই প্রাসাদের বর্তমান দাম প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা। এর দরবার হলে যে গালিচা রয়েছে, তা পৃথিবীর বৃহত্তম।
১৮৭৪ সালে এই প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন জয়াজিরাও শিণ্ডে। তিনি গোয়ালিয়রের শাসক ছিলেন। সেই সময় প্রাসাদ তৈরিতে খরচ হয়েছিল ১.১ কোটি টাকা।
প্রাসাদের নকশা করেছিলেন মাইকেল ফিলোস। এখন প্রাসাদের একাংশে জাদুঘর রয়েছে। জ্যোতিরাদিত্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মনোনয়ন পেশ করার সময় যে হলফনামা পেশ করেন, তাতে দেখা যায় তাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ৩৭৯ কোটি।