কিশোরী বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন। অভিনয়ে নামার পর এমন সময়ের মধ্যে দিয়েও দিন কাটিয়েছেন যখন স্টুডিয়োর সামনে টাকার জন্য হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। বর্তমানে মুম্বইয়ে তিনটি বেডরুমবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে তাঁর। সংগ্রহে রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা টেলি অভিনেত্রী নিয়া শর্মার কেরিয়ারের পথ অবশ্য খুব একটা সহজ ছিল না।
১৯৯০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জন্ম নিয়ার। জন্মের সময় তাঁর নাম নেহা ছিল। বহুল প্রচলিত হওয়ার কারণে নাম পরিবর্তন করে নিয়া রাখেন তিনি। বাবা-মা এবং দাদার সঙ্গে দিল্লিতেই থাকতেন নিয়া। সেখানেই স্কুলের গণ্ডি পার করেন তিনি।
১৪ বছর বয়সে বাবাকে হারান নিয়া। একা হাতে দুই ছেলেমেয়েকে বড় করে তোলেন তাঁর মা। খুব কম বয়স থেকেই কাজ করতে শুরু করেন নিয়ার দাদা বিনয় শর্মা। বর্তমানে দিল্লির একটি বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করেন বিনয়।
অভিনয়ে নামার আগে সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল নিয়ার। দিল্লির একটি কলেজ থেকে গণজ্ঞাপন নিয়ে পড়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। কলেজের পড়াশোনা শেষ করার পর অভিনয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন নিয়া।
২০১০ সালে সম্প্রচারিত ‘কালী— এক অগ্নিপরীক্ষা’ ধারাবাহিকে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান নিয়া। তার পর ‘বেহনে’ নামে একটি হিন্দি ধারাবাহিকেও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
নিয়ার কেরিয়ার বাঁক নেয় ২০১১ সালে। ‘এক হাজারো মে মেরি বেহনা হ্যায়’ ধারাবাহিকে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মনে জায়গা করে নেন তিনি। ছোট পর্দার অভিনেত্রী হিসাবে সম্ভবত তিনিই প্রথম যিনি ক্যামেরার সামনে সম্পূর্ণ মাথা মুড়িয়ে ধরা দিয়েছিলেন।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘এক হাজারো মে মেরি বেহনা হ্যায়’ ধারাবাহিকে শুটিংয়ের জন্য তাঁকে এমন মেকআপ করতে হত যে তার ফলে নিয়ার ত্বকের ক্ষতি হয়েছিল। ব্রণ হওয়া থেকে শুরু করে সারা মুখে কালো কালো ছাপ পড়ে গিয়েছিল। ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য টানা চার মাস ‘স্কিন কেয়ার ট্রিটমেন্ট’ করিয়েছিলেন নিয়া।
খুব কম সময়ের মধ্যে ছোট পর্দার অভিনেত্রী হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন নিয়া। ‘জামাই রাজা’, ‘মেরি দুর্গা’, ‘নাগিন ৪’-এর মতো হিন্দি ধারাবাহিক কেরিয়ারের ঝুলিতে যুক্ত হতে থাকে নিয়ার।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নিয়া জানিয়েছিলেন, বাবাকে হারানোর সময় দশম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। সেই সময় খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছিলেন তিনি। এমনকি কেরিয়ারের গোড়ার দিকেও তাঁকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে।
নিয়া জানিয়েছিলেন, তাঁর জীবনে এমনও দিন গিয়েছে যখন স্টুডিয়োর সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে টাকা চাইতে হত। এই প্রসঙ্গে নিয়া বলেছিলেন, ‘‘কাজের সময় তোমায় দিয়ে পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া হবে কিন্তু টাকা দেওয়ার বেলায় লবডঙ্কা। আমি এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। তবে আমি অনবরত লড়াই করে গিয়েছি।’’
নিয়ার মন্তব্য, ‘‘তখন আমি অবুঝের মতো আচরণ করেছি কি না জানতাম না। দিনের পর দিন স্টুডিয়োর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমি। টাকার জন্য হাত পাততাম। খালি বলতাম, ‘‘আগে টাকা দাও, তার পর কাজ করব।’’ আসলে আমি বুঝে গিয়েছিলাম এমন আচরণ না করলে অন্য কোনও উপায়ে টাকা পাওয়া যাবে না।’’
নিয়া আরও বলেন, ‘‘এ তো আমার টাকা, শ্রমের টাকা। তার জন্যও আমায় অনুরোধ করতে হত। হাত পেতে, রীতিমতো কান্নাকাটি করে পারিশ্রমিক আদায় করতে হত।’’
হিন্দি ধারাবাহিকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি বহু ধারাবাহিকে অতিথিশিল্পী হিসাবেও দেখা গিয়েছে নিয়াকে। বিভিন্ন নামী সংস্থার বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেছেন তিনি।
ছোট পর্দার পাশাপাশি ডিজিট্যাল মাধ্যমেও অভিনয় শুরু করেন নিয়া। ২০১৭ সালে ‘টুইস্টেড’ নামে একটি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেন তিনি। তা ছাড়া ‘জামাই ২.০’ নামের একটি সিরিজ়েও দেখা যায় নিয়াকে।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘টুইস্টেড’ সিরিজ়ে সহ-অভিনেতা রাহুল সুধীরের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন নিয়া। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রাহুলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন অভিনেত্রী।
নিয়া বলেছিলেন, ‘‘রাহুলের মতো মজাদার এবং দায়িত্ববান ছেলে আমার জীবনে খুবই কম দেখেছি। ওর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব খুবই গভীর। আমাদের বন্ধুত্বকে যদি কেউ অন্য চোখে দেখেন তা হলে আমার কিছু বলার নেই।’’
শুধু রাহুল নন, ছো়ট পর্দার একাধিক অভিনেতার সঙ্গে নাম জড়িয়েছে নিয়ার। ‘কালী— এক অগ্নিপরীক্ষা’ ধারাবাহিকে নিয়ার সহ-অভিনেতা ছিলেন বরুণ জৈন। টেলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, বরুণের সঙ্গে নাকি সম্পর্কে ছিলেন নিয়া।
নিয়া এবং বরুণ কোনও দিনই তাঁদের সম্পর্কে শিলমোহর দেননি। তবে কানাঘুষো শোনা যায়, দুই টেলি তারকার সম্পর্কের আয়ু ছিল কয়েক মাস। নিয়া তাঁর কেরিয়ারে সাফল্যের স্বাদ পাওয়ার পর নাকি বরুণের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন।
ছোট পর্দার অভিনেতা কুশল টন্ডনের সঙ্গেও নাম জড়ায় নিয়ার। ‘এক হাজারো মে মেরি বেহনা হ্যায়’ ধারাবাহিকের শুটিংয়ের সূত্রে নিয়ার সঙ্গে কুশলের আলাপ হয়। সহ-অভিনেতার সঙ্গে ভাব জমে ওঠে নিয়ার। তার পর থেকেই কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে কুশলের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন নিয়া।
কুশলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক পুরনো সাক্ষাৎকারে নিয়া বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও দিনও কুশলকে ডেট করিনি। আমাদের দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে নানা রকম কথা কানে এসেছে। এ সব মিথ্যা রটনা নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। আমরা সকলে একসঙ্গে অভিনয় করি। সেটের সকলেই সত্যটা জানে।’’
২০১৭ সালে ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরো কি খিলাড়ি’ রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন নিয়া। এই শোয়ের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বলিপাড়ার প্রথম সারির ছবিনির্মাতা রোহিত শেট্টি। এই পর্বে ‘ফাইনালিস্ট’-এর তালিকায় নিজের নাম লিখিয়েও জিততে পারেননি নিয়া।
২০২০ সালে ‘খতরো কি খিলাড়ি: মেড ইন ইন্ডিয়া’ রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় নিয়াকে। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন তিনি।
নেহা কক্কর, টোনি কক্কর, রাহুল বৈদ্য, নিকিতা গান্ধী এবং জাভেদ আলির মতো সঙ্গীতশিল্পীদের মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে নিয়াকে। সম্প্রতি হানি সিংহের একটি মিউজ়িক ভিডিয়োতেও অভিনয় করেছেন তিনি।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, মুম্বইয়ে তিনটি বেডরুম বিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন নিয়া। ভলভো এক্সসি মডেলের একটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে অভিনেত্রীর সংগ্রহে। এই গাড়িটির আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকা।
নিয়ার সংগ্রহে রয়েছে অডি ব্র্যান্ডের আরও দু’টি গাড়ি। অডি কিউ৭ মডেলের গাড়ি কিনেছেন নিয়া। এই গাড়িটির বাজারমূল্য প্রায় ৯২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও অডি ব্র্যান্ডের এ৪ মডেলের গাড়ি রয়েছে অভিনেত্রীর। এই গাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ৫১ লক্ষ টাকা।
সকল ছবি সংগৃহীত।