পড়শি দেশের ড্রোন আকাশসীমায় ঢুকলেই হবে বিপর্যয়। এ ভাবেই দক্ষিণ কোরিয়াকে হুঁশিয়ারি দিলেন কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং। দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রোন উত্তর কোরিয়ার আকাশে প্রবেশ করলে তার ফল হবে ভয়ঙ্কর। এই মর্মেই কিম ইয়ো সতর্ক করেছেন সিওলকে।
আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া যে ভাবে জোট বাঁধছে, তা অদূর ভবিষ্যতে গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বেসর্বা কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইয়ো জানান, আত্মরক্ষার জন্য তাঁর দেশ সব সময়ই প্রস্তুত। দক্ষিণ কোরিয়া পিয়ংইয়ংয়ে ড্রোন পাঠানোর অভিযোগ সম্পর্কে মুখ না খোলায় আরও চটেছেন কিম জং উনের বোন।
উত্তর কোরিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রোনগুলি উত্তর কোরিয়া বিরোধী প্রচার চালাতে পাঠানো হয়েছিল।
মন্ত্রক জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী সীমান্তে মোতায়েন রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীকে ধ্বংস করতে সক্ষম তারা। পড়শি দেশের আক্রমণের জবাব দিতে তারা প্রস্তুত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রোন উত্তর কোরিয়ার ভূখণ্ডে আবার ধরা পড়লে সতর্কতা ছাড়াই সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
মাস কয়েক আগেই ৩০০টি আবর্জনাভর্তি বেলুন দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছিল কিম জং উনের দেশের বিরুদ্ধে। তার ঠিক আগেই কিম ইয়ো জং সিওলকে উত্তেজনাপূর্ণ প্রচারের বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
সংবাদমাধ্যমকে ইয়ো জং জানান, শত্রুরা পারমাণবিক যুদ্ধের জন্য যত প্রস্তুত হবে, কোরিয়ার আশপাশে যত বেশি পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করবে, উত্তর কোরিয়া আত্মরক্ষার প্রস্তুতিও তত জোরদার হবে।
উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ৩৩ বছরের কিম ইয়ো। পলিটব্যুরোর সদস্যপদ পাওয়ার পর থেকে তাঁকে এক রকম দাদা কিমের ছায়াসঙ্গীই বলা যায়। ভাই-বোনদের মধ্যে তাঁকেই জং উনের ঘনিষ্ঠতম বলে মনে করা হয়।
কিম ইয়ো জং সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় ক্ষমতাধর মহিলা। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের একজন ইয়ো জং। কিম সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্রও মনে করা হয় তাঁকে।
কিম ইয়ো প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতি আকর্ষণ করেন ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে। সে বছর তিনি উত্তর কোরিয়ার শীতকালীন অলিম্পিক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। কিম ইয়ো হচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন কিম পরিবারের প্রথম সদস্য, যিনি দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন।
পশ্চিমি দুনিয়া, বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে কিম জংয়ের সঙ্গে আকচাআকচি দীর্ঘ দিনের। উত্তর কোরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আমেরিকা যাঁদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেই তালিকায় কিম ইয়োর নামও আছে।
আমেরিকার চোখরাঙানিকে খুব একটা পাত্তা না দিয়ে মাঝেমধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্রের নানা পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার বহর দেখে আর নিরাপত্তাজনিত চাপ মোকাবিলা করতে আমেরিকার দ্বারস্থ হয় দক্ষিণ কোরিয়া।
গত ২৫ এপ্রিল এক সরকারি সফরে আমেরিকা যান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইয়োল। ওয়াশিংটনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিও স্বাক্ষর করেন তাঁরা।
সেই ঘটনার রেশ টেনেই কিম ইয়ো প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দেন, এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার নামে যদি কোনও একাধিক দেশ কোনও পদক্ষেপ করে, তবে বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় গুরুতর বিপদ দেখা দিতে পারে।
বেশ কয়েকটি সূত্রের দাবি, উত্তর কোরিয়ার কাছে ৫০টি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ৭০-৯০টি পরমাণু অস্ত্র বানানোর রসদও রয়েছে তাদের হাতে। পরমাণু অস্ত্রের পাশাপাশি ডুবোজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়েও কাজ করছে তারা।
কিম জংয়ের সঙ্গে রাশিয়ার সখ্য কারও অজানা নয়। অন্যতম পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসাবে উত্তর কোরিয়াকে নানা পারমাণবিক সহায়তা করে আসছে মস্কো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কিম জং তাঁর দেশের নাগরিকদের পাঠিয়ে মস্কোকে সাহায্য করছেন, এমন দাবিও উঠেছে সম্প্রতি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির দাবি, মস্কো এবং পিয়ংইয়ংয়ের জোট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতা এখন আর অস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ বার সরাসরি সামরিক বাহিনীর মধ্যে উত্তর কোরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র সংবাদ সংস্থা সিএনএনকে জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কয়েক জন বাসিন্দা রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছেন। এঁদের বেশির ভাগই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সহায়তা করার জন্য এবং তথ্য বিনিময়ের জন্য কাজ করছেন। যদিও এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে ক্রেমলিন।
সব ছবি: সংগৃহীত।