সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ইজ়রায়েলের হাতে নিহত হয়েছেন ইরান মদতপুষ্ট লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজ়বুল্লার প্রাক্তন প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরাল্লা। সেই ঘটনার প্রায় এক মাস হতে চলল। তবে সম্প্রতি ইহুদি সেনা নাসরাল্লাকে নিয়ে যে ঘোষণা করেছে, তাতে হতভম্ব সারা বিশ্ব।
ইজ়রায়েলের দাবি, নাসরাল্লার ‘যকের ধনের’ খোঁজ পেয়েছে তারা। যা নাকি এত দিন লুকোনো ছিল হিজ়বুল্লার প্রাক্তন প্রধানের একটি গোপন বাঙ্কারে। নাসরাল্লার মৃত্যুর পর নাকি সেই বিশাল ধনরাশির কথা জানতে পেরেছে তারা।
ইহুদি সেনা জানিয়েছে, বেরুটের একটি হাসপাতালের নীচে ছিল ওই গোপন বাঙ্কারটি। নিয়ন্ত্রণ করতেন স্বয়ং নাসরাল্লা এবং তাঁর কয়েক জন বিশ্বস্ত অনুগামী।
কত টাকার সম্পদ লুকোনো ছিল ওই বাঙ্কারে? ইজ়রায়েল জানিয়েছে, সোনা এবং টাকা মিলিয়ে ওই বাঙ্কারে রয়েছে প্রায় ৫০ কোটি ডলারের সম্পত্তি। ভারতীয় মুদ্রায় যা চার হাজার টাকারও বেশি।
ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা ‘আইডিএফ’-এর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বাঙ্কারটির একটি গ্রাফিক ছবি এবং একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এনেছেন ইতিমধ্যেই। পাশাপাশি জানিয়ে দিয়েছেন, ওই হাসপাতাল বা তার নীচে থাকা বাঙ্কারে হামলা চালানোর কোনও পরিকল্পনা নেই আইডিএফের।
ড্যানিয়েল বলেছেন, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে বাঙ্কারটি হাসপাতালের নীচে তৈরি করা হয়েছিল এবং এতে ৫০ কোটি ডলারের (প্রায় ৪,২০২ কোটি টাকা) বেশি নগদ ও সোনা রয়েছে। সেই অর্থ লেবাননের উন্নতির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি হিজ়বুল্লার উন্নতির জন্য ব্যবহার হচ্ছিল।’’
একই সঙ্গে আইডিএফ মুখপাত্রের আর্জি, লেবাননের কর্তারা যেন হিজ়বুল্লার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন এবং হাসপাতালের নীচে থাকা গোপন বাঙ্কার পরিদর্শন করেন।
তাঁর কথায়, ‘‘আমি লেবাননের সরকার, কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে সন্ত্রাসবাদে মদত জোগানোর জন্য এবং ইজ়রায়েলে আক্রমণ করার জন্য হিজ়বুল্লাকে ওই অর্থ ব্যবহার করতে দেবেন না।’’
ড্যানিয়েল জানিয়েছেন, হাসপাতাল ছাড়াও বাঙ্কারটি মাটির নীচ দিয়ে আরও দু’টি ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত যেগুলি প্রবেশ এবং বাহির পথ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আইডিএফের মতে, দীর্ঘ দিন লুকিয়ে থাকার জন্য বাঙ্কারটিতে সমস্ত সুযোগসুবিধা রয়েছে।
আইডিএফের অভিযোগ, হিজ়বুল্লা এবং প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে জঙ্গি এবং অস্ত্রশস্ত্র লুকনোর জন্য হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্য সংবেদনশীল জায়গাগুলি ব্যবহার করছে।
ড্যানিয়েল আরও ব্যাখ্যা করেছেন, কী ভাবে হিজ়বুল্লার কার্যক্রমে আর্থিক মদত জোগাচ্ছে ইরান।
ড্যানিয়েলের দাবি, হিজ়বুল্লার আয়ের প্রধান উৎস দু’টি— লেবাননের জনগণ এবং ইরানের সরকার। একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, লেবাননের এই সশস্ত্র গোষ্ঠী সিরিয়ার মাধ্যমে নগদ এবং ইরানের মাধ্যমে সোনা পাচার করেও নিজেদের অভিযানে টাকা জোগাচ্ছে।
ড্যানিয়েল আরও অভিযোগ করেছেন, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং তুরস্কের হিজ়বুল্লা পরিচালিত কারখানাগুলি থেকে যে আয় হয় তা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সন্ত্রাসমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়।
আইডিএফের মুখপাত্র যোগ করেছেন, ইজ়রায়েলের লড়াই লেবাননের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইরানের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ইজ়রায়েলে হামলা চালানোর সময় লেবাননের জনগণকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে হিজ়বুল্লা।
উল্লেখ্য, ইরান মদতপুষ্ট লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজ়বুল্লার কোমর ভাঙতে উঠেপড়ে লেগেছে ইজ়রায়েল। তাতে সাফল্যও পেয়েছে ইহুদি সেনা। নাসরাল্লাকে ইতিমধ্যেই খতম করেছে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনা।
২৮ সেপ্টেম্বর ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাদভ শোশানি এই সাফল্যের কথা জানিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘হাসান নাসরাল্লা নিহত’’।
২৭ সেপ্টেম্বর থেকেই ৬৪ বছরের হিজ়বুল্লা প্রধানের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দিতে সমাজমাধ্যমে আলাদা করে একটি পোস্ট দিয়েছিল ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ।
এর পর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা নেতা হাশেম সফিদ্দিনকেও নিকেশ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইজ়রায়েলি সেনা। হিজ়বুল্লা প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরাল্লার মৃত্যুর পর তিনিই ইরানের সমর্থনপুষ্ট সশস্ত্র এই গোষ্ঠীকে নেতৃত্ব দেবেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
মঙ্গলবার ইজ়রায়েলের সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে, সপ্তাহতিনেক আগে লেবাননের রাজধানী বেরুটের দক্ষিণ দিকের শহরতলিতে হিজ়বুল্লার গোয়েন্দা ঘাঁটিতে যে রকেট হামলা চালানো হয়েছিল, তাতেই মৃত্যু হয় সফিদ্দিনের।
সফিদ্দিনের মৃত্যুর খবর এই প্রথম নিশ্চিত করল ইজ়রায়েল। যদিও হিজ়বুল্লার তরফে এই খবর নিশ্চিত করে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
সব ছবি: সংগৃহীত।