Iran-Israel conflict

এখন সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়, ‘ভয়ঙ্কর শত্রু’কে ঠেকাতে এক সময় হাতও মিলিয়েছিল ইরান-ইজ়রায়েল

এখন যে ইরান এবং ইজ়রায়েলের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক, এক সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে। উভয়েরই পরিচিত এক শত্রুকে নাস্তানাবুদ করতে হাত মিলিয়েছিল তারা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০১
০১ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

পশ্চিম এশিয়া জুড়ে ঘনিয়েছে যুদ্ধের মেঘ। হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ইরানের মদতপুষ্ট লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী হিজ়বুল্লার সঙ্গে ইজ়রায়েলের সংঘাতের মধ্যেই ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলে। ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইজ়রায়েল থেকে আমেরিকা। ইজ়রায়েলের বার্তা, ‘ইরান সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে’।

০২ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

ইরানের ১৮০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার জবাবে ইজ়রায়েল জানিয়েছে, তারা চুপ করে বসে দেখবে না। ইরান যা করেছে, তার যথাযোগ্য ‘জবাব’ তারা দেবেই।

০৩ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

গত বছর অক্টোবর থেকে সংঘাতে জড়িয়েছে প্যালেস্টাইনি গোষ্ঠী হামাস এবং ইজ়রায়েল। সেই সময় হামাসের সমর্থনে নেমে ইজ়রায়েলে ঘন ঘন হামলা চালাতে থাকে হিজ়বুল্লা। সম্প্রতি হিজ়বুল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে ইজ়রায়েল। লেবাননে হিজ়বুল্লার একের পর এক ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। হিজ়বুল্লার একাধিক কম্যান্ডার নিহত। লেবাননে প্রায় ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হিজ়বুল্লার সমর্থনে মঙ্গলবার দিনভর ইজ়রায়েলের বিভিন্ন প্রান্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।

Advertisement
০৪ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

কিন্তু এখন যে ইরান এবং ইজ়রায়েলের আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক, এক সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে। উভয়েরই পরিচিত এক শত্রুকে নাস্তানাবুদ করতে হাত মিলিয়েছিল তারা। এবং অবিশ্বাস্য শোনালেও আমেরিকাও নাকি বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিল।

০৫ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

১৯৬০-এর দশকে ইজ়রায়েল এবং ইরান উভয়েরই শত্রু হয়ে উঠেছিল ইরাক। ইজ়রায়েল যখন আরব শাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল, ঠিক তখনই শাহের অধীনে থাকা ইরান, ইরাককে তার নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য সরাসরি হুমকি হিসাবে দেখেছিল।

Advertisement
০৬ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

আর সেই কারণে হাত মেলায় ইজ়রায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং ইরানের বিশেষ পুলিশ বাহিনী সাভাক। উভয় সংস্থা ইরাকের বিরুদ্ধে কুর্দ বিদ্রোহীদের শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল৷

০৭ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

ইরাককে ঠেকাতে ইরান এবং ইজ়রায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল তুরস্ক। ট্রাইডেন্ট নামে একটি ত্রিপাক্ষীয় গোয়েন্দা জোটও গঠন করে ফেলেছিল তিনটি দেশ।

Advertisement
০৮ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

১৯৫৮ সালের শুরুতে ট্রাইডেন্টের মাধ্যমে সম্পর্ক পরিপক্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইজ়রায়েল এবং ইরান আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দুই দেশ সামরিক এবং গোয়েন্দা সম্পর্ক তৈরি করে যা শাহের রাজত্বকাল পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল।

০৯ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

শুধুমাত্র ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ নয়, ইজ়রায়েলের উপর আমেরিকার প্রভাবের কথা মাথায় রেখেও ইজ়রায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল ইরানের শেষ শাহ তথা শেষ সম্রাট মহম্মদ রেজা পহেলভি। সেই সময় শাহের শাসনকে স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল আমেরিকা। তাই ইজ়রায়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক বাড়ানোর একটি সম্ভাব্য উপায় হিসাবে দেখেছিলেন পহেলভি।

১০ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

ইজ়রায়েল এবং ইরানের সম্পর্ক তখন এমনই পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তেহরানে একটি স্থায়ী ইজ়রায়েলি প্রতিনিধিদলের দফতর খোলা হয়, যা একটি দূতাবাস হিসাবেও কাজ করেছিল।

১১ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

যাই হোক, ইজ়রায়েল-ইরান সম্পর্কে জটিলতাও কম ছিল না। সমগ্র আরব জুড়ে ইজ়রায়েল-বিরোধী মনোভাব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন শাহ। তাই খুব সাবধানী হয়ে পুরো বিষয়টি পরিচালনা করেছিলেন তিনি। ১৯৬৭ সালে ছ’দিন ধরে চলা তৃতীয় আরব-ইজ়রায়েল যুদ্ধের পর ইজ়রায়েলের সমালোচকও হয়ে উঠেছিলেন শাহ।

১২ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

ইজ়রায়েল-ইরানের বন্ধুত্ব অস্ত্র চুক্তির বাইরেও প্রসারিত হয়েছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি ছিল অপারেশন ফ্লাওয়ার। কোটি কোটি ডলারের একটি গোপন উদ্যোগ যা শাহের শাসনকালেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই প্রকল্পে ইরানের কাছে বিক্রির জন্য সারফেস-টু- সারফেস ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছিল ইজ়রায়েল। পরিবর্তে ১৯৭৮ সালে ২৬ কোটি ডলারের তেল ইজ়রায়েলে পাঠিয়েছিল ইরান।

১৩ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামিক বিপ্লব সে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে। রাতারাতি ইজ়রায়েল-বিরোধী মনোভাব তৈরি হয় ইরানে। তবে ইরানের শীর্ষনেতা আয়াতুল্লাহ খোমেইনি ক্ষমতায় আসার পরেও নতুন শাসকেরা ইজ়রায়েলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধের কারণেই তখন ইরাকের তৎকালীন শাসক সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইজ়রায়েলকে পাশে চেয়েছিল ইরান।

১৪ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

ইজ়রায়েলও ইরানকে সাহায্য করার সুযোগ ছাড়তে চায়নি। বিশেষ করে, আঞ্চলিক আধিপত্য এবং পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য বাগদাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ভাল ভাবে দেখেনি ইজ়রায়েল।

১৫ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

সে সময় ইরানকে অস্ত্রও সরবরাহ করেছিল ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলি সামরিক সহায়তার বিনিময়ে খোমেইনির প্রশাসন অনেক ইরানি ইহুদিকে ইজ়রায়েল বা আমেরিকায় অভিবাসনের অনুমতি দেয়।

১৬ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

আশির দশকের মাঝামাঝি, ইরানের সামরিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা একটি জটিল পর্যায়ে পৌঁছেছিল। ইরান-ইরাক যুদ্ধের ফলে দেশের অনেক সম্পদ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। অর্থনীতিও প্রায় ধ্বংসের মুখে ছিল। তবে অস্ত্র চুক্তির জন্য লাভ হয়েছিল ইজ়রায়েলের।

১৭ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান-ইরাক সংঘাতের মধ্যেই ১৯৮০ সালে গোপনে ইরানকে আমেরিকার তৈরি এফ-৪ যুদ্ধবিমানের জন্য ২৫০টি অতিরিক্ত টায়ার সরবরাহ করেছিল ইজ়রায়েল।

১৮ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

তবে ইরানের হাতে আমেরিকার ৫২ জন কূটনীতিক বন্দি থাকায় ইজ়রায়েলকে আমেরিকা নির্দেশ দেয় যে, বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত যেন অস্ত্র সরবরাহ না করা হয়। ইজ়রায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিন আমেরিকার চাপে সম্মত হন এবং ইরানের সামরিক লেনদেন বন্ধ করে দেন। ছেদ পরে ইরান-ইজ়রায়েল বন্ধুত্বে।

১৯ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

এ নিয়ে ইজ়রায়েলের মধ্যে কম উদ্বেগ তৈরি হয়নি। সেই সময় আনুমানিক ৬০ হাজার ইহুদি ইরানে বাস করতেন। ইজ়রায়েলের আশঙ্কা ছিল তারা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করায় যেন ওই ইহুদিদের উপর না অত্যাচার শুরু করে ইরান।

২০ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

উল্লেখ্য, নব্বইয়ের দশকে ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে সহযোগিতা পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়। যে ভূ-রাজনৈতিক কারণগুলির জন্য তারা একত্রিত হয়েছিল, সেই সব সমস্যা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এর পরেই দৃঢ় ভাবে ইজ়রায়েল-বিরোধী পন্থা অবলম্বন করে ইরান। হিজ়বুল্লা এবং হামাসের মতো সংগঠনগুলিকেও সমর্থন করতে শুরু করে।

২১ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

২০০৬ সালে হিজ়বুল্লা এবং ২০০৮ সালে হামাসের সঙ্গে ইজ়রায়েলের যুদ্ধে ইরান সমর্থন জুগিয়েছিল সশস্ত্র সংগঠনগুলিকেই। সম্মিলিত ভাবে ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ গড়ে তোলে ইরান। এর পর ইরান-ইজ়রায়েল সম্পর্কের চিড় পরিণত হয় ফাটলে।

২২ ২২
Iran and Israel once joined hands to fight common enemy in Middle East

পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বর্তমানে সেই দুই দেশের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। তার মধ্যেই আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। পশ্চিম এশিয়ার আকাশে শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যে কোনও সময় যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কূটনীতিবিদদের একাংশ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি