কলকাতা
শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২২ ১৪:৩২
বাইরের কোনও দুষ্কৃতী নয়, নিজের ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে ভিন্ দেশে পালান খোদ ব্যাঙ্কের ডেপুটি চেয়ারপার্সন। সাড়ে চার বছরেরও বেশি আগে রাশিয়ার এক মহিলার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইনেসা ব্র্যান্ডেনবার্গ নামে অভিযুক্ত ওই মহিলার সন্ধান পাওয়া যায় স্পেনে। সেখানেই নাকি এত দিন গা-ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি ইন্টারপোলের সাহায্যে সে দেশ থেকে তাঁকে রাশিয়ায় প্রত্যর্পণ করা হয়েছে। এ বার ব্যাঙ্কের বিপুল অর্থ লুটের অভিযোগে আদালতে দাঁড়াতে হবে ইনেসাকে।
রাশিয়ার বাসিন্দা ইনেসা ছিলেন তাইয়ুমেন শহরের সাইবেরিয়ান ব্যাঙ্ক অব রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শীর্ষ পদাধিকারী। বস্তুত, ঘটনার সময় ওই ব্যাঙ্কের ডেপুটি চেয়ারপার্সন হিসাবে কাজ করছিলেন তিনি। ছিলেন ব্যাঙ্কের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্যও।
ইনেসার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নিজের দায়িত্বে থাকা ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে ৬৮ কোটিরও বেশি টাকা সরিয়ে ফেলেন তিনি। এর পর একটি বিমানে চেপে তাইয়ুমেন থেকে মস্কোয় পালিয়ে যান। সেখানে থেকে জার্মানির বার্লিনে যান। এর পরের গন্তব্য ছিল স্পেন।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইনেসা বেপাত্তা হওয়ার পর তাঁর ভল্টে ব্যাঙ্ক নোটের বদলে মিলেছিল মণিহারি জিনিসপত্র। ভল্টে সে সব জিনিস দেখে ব্যাঙ্কের এক করণিক পুলিশে খবর দেন। এর পরই অভিযোগ ওঠে, নিজের ব্যাঙ্ক থেকে অর্থ গায়েব করেছেন খোদ চেয়ারপার্সন ইনেসা!
তদন্তে নেমে রাশিয়ার পুলিশের চক্ষু চড়কগাছে! রুশ গোয়েন্দাদের দাবি, ব্যাঙ্কের অর্থ লুটের জন্য নিখুঁত ছক কষেছিলেন ইনেসা। তবে এ কাণ্ডের মূল চক্রী ছিলেন ব্যাঙ্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তথা বোর্ডের চেয়ারম্যান গ্রিগোরি রোমানুতা।
গোয়েন্দাদের আরও দাবি, কর্মক্ষেত্রের সম্পর্কের বাইরেও রোমানুতার ‘অন্য সম্পর্ক’ ছিল ইনেসার। রোমানুতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি।
সেই ‘বিশেষ বন্ধুত্বের’ খাতিরেই নাকি ইনেসাকে ডেপুটি চেয়ারপার্সন পদে বসিয়েছিলেন রোমানুতা। ব্যাঙ্কের অন্যতম শীর্ষপদে থাকার জন্য ইনেসার হাতের নাগালে থাকত কোটি কোটি টাকা। বস্তুত, ব্যাঙ্কের ভল্টের চাবিও থাকত তাঁর কাছে। এমনই জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তকারীরা আরও জানিয়েছেন যে সহজেই ভল্টের টাকার নাগাল পাওয়া নিয়ে ইনেসার যুক্তি ছিল, সুদের হার কমে গেলে জমানো টাকা তোলার জন্য ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের ভিড় লেগে যেতে পারে। সে কারণেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রেখে দিতেন ভল্টে। যাতে সহজেই তা হাতের নাগালে থাকে।
তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ইনেসার হয়ে ওই বিপুল অর্থ সরিয়ে ফেলেন তিন জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সের্গে কুজনেৎসভ নামে ইনেসার এক সঙ্গী। তবে গোটা কাণ্ডে রোমানুতা ছিলেন নেপথ্যে।
কুজনেৎসভই ন’টি ব্যাগে করে রাশি রাশি অর্থ ব্যাঙ্ক থেকে সরিয়ে নিয়ে যান বলে তদন্তকারীদের দাবি। ইতিমধ্যেই কুজনেৎসভ-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করে জেলে পুরেছে পুলিশ। তবে এত দিন ধরে অধরা ছিলেন ইনেসা।
সম্প্রতি একটি বিবৃতি জারি করে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রক জানিয়েছে, অবশেষে ধরা পড়েছেন ইনেসা। তাঁকে ইন্টারপোলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাশিয়ার নাগরিক ইনেসাকে স্পেন থেকে প্রত্যর্পণ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে রুশ সরকার জানিয়েছে, ব্যাঙ্ক থেকে সঙ্গীদের মাধ্যমে টাকা সরানোর পর তা আর এক সঙ্গীকে দিয়ে অনেকগুলি স্পোর্টস ব্যাগে ভরে নেন ইনেসা। এর পর তা নিয়ে চম্পট দেন।
রুশ সরকারের আরও দাবি, বিপুল অর্থ নিয়ে গায়েব হওয়ার পথে একটি ভাড়া করা জেট বিমানে চড়েছিলেন ইনেসা। এর পর তা নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেন তিনি।
সাড়ে চার বছরের বেশি আগে এক শুক্রবার সন্ধ্যায় রাশিয়ার ওই ব্যাঙ্কে থেকে ৫৬ কোটি রুবলস গায়েব হয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় মুদ্রায় যার বর্তমান মূল্য ৬৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা। সপ্তাহান্ত পেরোতেই ব্যাঙ্কের অর্থ গায়েবের কথা জানাজানি হয়েছিল। তবে তত ক্ষণে ইনেসা পগারপার! তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা রুজু করে রুশ সরকার। অবশেষে ইনেসাকে হাতের নাগালে পেল রাশিয়া! তবে ইনেসাকে পেলেও মূল চক্রী রোমানুতা সম্বন্ধে কোনও তথ্যই প্রকাশ্যে আনেনি রাশিয়ার পুলিশ।
