আমি ছাড়া আমার মোবাইল কেউ খুলতে পারবে না, এটাই তো চান গ্রাহকরা। মোবাইলকে সুরক্ষিত করতে কেউ ব্যবহার করেন পাসওয়ার্ড। কেউ দেন আঙুলের ছাপ। এ বার প্রশ্ন, কোনটা বেশি সুরক্ষিত করবে আপনার মোবাইলকে? পাসওয়ার্ড নাকি আঙুলের ছাপ! যদি দ্বিতীয়টা ভাবেন, তা হলে ভুল করবেন। এই দ্বিতীয়টি নকল করে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে পর্যন্ত ঘোল খাইয়ে দিয়েছিলেন এক হ্যাকার।
বেশির ভাগ লোকজনই মনে করেন পাসওয়ার্ডের থেকে আঙুলের ছাপ অনেক বেশি সুরক্ষিত রাখে ফোনকে। পাসওয়ার্ড চুরি করা গেলেও আঙুলের ছাপ নকল সম্ভব নয়।
মোবাইল খোলার পাসওয়ার্ড কেউ জেনে ফেললে, সঙ্গে সঙ্গে তা বদলে ফেলা যায়। মিটে গেল সমস্যা। কিন্তু আঙুলের ছাপ নকল করা হলে কী করবেন? কী করবেন, বুঝতে পারেননি জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী উরসুলা ভন ডের লেয়েনও।
কারচুপির কাজটা করেছিলেন জ্যান ক্রিসলার। হ্যাকারদের দুনিয়া তাঁকে চেনেন স্টারবাগ নামে। ‘ভেরিফিঙ্গার’ নামে একটি বাণিজ্যিক সফটওয়্যারের মাধ্যমে মন্ত্রীর আঙুলের ছাপ চুরি করেছিলেন স্টারবাগ।
খুব কাছ থেকে নেওয়া উরসুলার কয়েকটি ছবিকে হাতিয়ার করেই কারচুপি করেছিলেন স্টারবাগ থুড়ি জ্যান। একটি ছবি আবার প্রকাশ করেছিলেন উরসুলারই প্রতিরক্ষা দফতরা। বাকি ছবিগুলি মন্ত্রীর তিন মিটার দূরে দাঁড়িয়ে তুলে এনেছিলেন জ্যান।
পরে নিজেই ঠাট্টা করে বলেছিলেন, ‘‘আমি যা করেছি, তাতে এর পর থেকে জনসমক্ষে এলে মন্ত্রীরা দস্তানা পরে নেবেন।’’
কেন এ সব করেছিলেন জ্যান? হ্যাকারদের একটি সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, কারও মোবাইল হাতে নিলে বড় জোর ক্যামেরা অন করা যায়। অন্য কোনও তথ্য মেলে না। কিন্তু আঙুলের ছাপ নকল করে এক বার মোবাইল খুলে ফেলতে পারলে অনলাইন ব্যাঙ্কিং থেকে এটিএম কার্ডের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেওয়া যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত উরসুলার মোবাইল হাতে পাননি বলে এ সব কিছুই করতে পারেননি জ্যান।
হ্যাকারদের সম্মেলনে অন্য এক হ্যাকার আবার মোবাইলের পাসওয়ার্ড চুরি করার কৌশলও বাতলে দেন। খোলার সময় মোবাইলে যখন কেউ পাসওয়ার্ড টাইপ করেন, তখন তাঁর চোখের মণিতে প্রতিফলিত হয় স্ক্রিনটি। সেই চোখের মণির ছবি তুলেই মোবাইলের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়েছিলেন ওই হ্যাকার।
বাকি হ্যাকারদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন জ্যান। জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর আঙুলের ছাপ চুরি করার আগেও বহু বড়সড় হ্যাকিং কাণ্ডে অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে অ্যাপল ফোনের ৫এস মডেল বাজারে আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার টাচ আইডি সেন্সরের কৌশল ধরে ফেলেন জ্যান।
কাঠ আর আঠা দিয়ে নকল একটি আঙুল তৈরি করেছিলেন জ্যান। সেই নকল আঙুল দিয়ে অনায়াসে খুলে ফেলেছিলেন অন্যের আইফোন ৫এস, যে সব ফোন কিনা তাঁদের মালিকের আঙুলের ছাপ ছাড়া খোলা যায় না।
তবে এ বার আর নকল আঙুল তৈরি করতে হচ্ছে না জ্যানকে। আঙুলের ছাপের হাই রেজোলিউশন প্রিন্ট দিয়ে অন্যের মোবাইল খুলতে পারছেন বলে দাবি করেছেন এই হ্যাকার। যদিও তা করার জন্য মোবাইল ফোনটি হাতে পেতে হবে।
এ ধরনের প্রতারণার হাত থেকে কী ভাবে বাঁচবেন গ্রাহক? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল আনলক করার জন্য শুধু আঙুলের ছাপ ব্যবহার করলে চলবে না। পাসওয়ার্ডও দিতে হবে। আনলকের জন্য দু’টি ব্যবস্থা থাকলে মোবাইল অনেক বেশি সুরক্ষিত থাকবে।
বিশেষজ্ঞ জে স্ট্যানলি ওয়াশিংটন পোস্টে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘বায়োমেট্রিক কিন্তু গোপন কিছু নয়। ইউনিক। সবার ক্ষেত্রে আলাদা। দু’টো বিষয়কে গুলিয়ে ফেললে চলবে না।’’
হ্যাকার স্টারবাগ নিজে বলেন, ‘‘আমি মনে করি আঙুলের ছাপের থেকে পাসওয়ার্ড অনেক বেশি নিরাপদ। কারণ পাসওয়ার্ড শুধু আমার মাথায় থাকে। সতর্ক ভাবে টাইপ করলে কোনও দিন কেউ জানতে পারবেন না।’’