বিরাট কোহলি এবং গৌতম গম্ভীরের মাঝে তিক্ততা থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন সম্পর্ক আরও খারাপ হচ্ছে। সম্প্রতি, বোর্ডকে লেখা কোহলির চিঠিতেও তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।
গম্ভীরকাণ্ডের পর বোর্ডকে চিঠি দিয়েছেন স্বয়ং বিরাট। সে দিনের ঘটনাপ্রবাহে তাঁকে যে শাস্তি পেতে হয়েছে, তা নিয়ে চিঠিতে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
লখনউয়ে সে দিনে ম্যাচের পর শাস্তি হিসাবে কোহলি এবং গম্ভীর, দু’জনেরই ১০০ শতাংশ ম্যাচ ফি কেটে নেওয়া হয়েছিল। বিরাটের দাবি, তিনি যা করেছেন, তার জন্য এত বড় শাস্তি দেওয়া উচিত হয়নি।
গম্ভীরের সঙ্গে মাঠের ঝামেলা যে এখনও হজম হয়নি, তা কার্যত বুঝিয়েই দিয়েছেন কোহলি। তিনি বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, সে দিন মাঠে তিনি এমন কিছু বলেননি, যার জন্য তাঁর এত বড় শাস্তি হতে পারে।
মাঠে কাকে ঠিক কী বলেছিলেন কোহলি? সত্যিই কি তিনি ‘নির্দোষ’? গম্ভীরের রাগ কি যুক্তিসঙ্গত? সব প্রশ্নের উত্তরই লুকিয়ে ১ মে, লখনউয়ের মাঠে।
বিরাট-গম্ভীরের সে দিনের কথোপকথন অনেকেই জানেন। কিন্তু সে দিন বিরাটের যে গালাগাল ঘিরে বিতর্কের জন্ম, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। অভিযোগ, মাঠে লখনউয়ের খেলোয়াড়ের উদ্দেশে গালি দিয়েছিলেন কোহলি।
বিতর্কের সূত্রপাত কোহলির সঙ্গে লখনউয়ের বিদেশি খেলোয়াড় কাইল মেয়ার্সয়ের ঝামেলাকে কেন্দ্র করে। তাঁর সঙ্গেই খেলার শেষে কথা বলছিলেন কোহলি। সেখানে গম্ভীর এসে কাইলকে সরিয়ে নিয়ে যান।
কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি, উত্তেজিত বিরাট ইংরাজিতে দুই শব্দে গালি দিয়েছিলেন। তার পর লখনউয়ের খেলোয়াড়ের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আমি ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চাই।’’
বিরাটের এই কথা শুনেই রেগে যান গম্ভীর। তিনি কাইলকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরেও আবার ফিরে আসেন। দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সেই কথোপকথন ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
গোটা ঘটনা জানার পর অনেকেই বলছেন, বিরাট বা গম্ভীর, কেউই ‘নির্দোষ’ নন। তাঁরা নিজেদের আচরণের যোগ্য শাস্তিই পেয়েছেন। সে দিনের ঝামেলার পর থেকে চুপ করে নেই কোহলি বা গম্ভীর কেউই।
লখনউয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচটি জেতার পর ‘খোঁচা’ দিয়ে টুইট করেছিলেন বিরাট। লিখেছিলেন, ‘‘দুর্দান্ত জয়। লখনউতেও আমাদের সমর্থকেরা রয়েছেন দেখে ভাল লাগছে। সকল সমর্থককে ধন্যবাদ।’’ অনেকেই মনে করেন, ঝামেলার আবহে এই পোস্টে অন্য ইঙ্গিত রয়েছে।
আবার গম্ভীরও টুইট করেন। তিনি একটি টুইটে লেখেন, ‘‘চাপের দোহাই দিয়ে দিল্লির ক্রিকেট ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া একটা লোক টাকার বিনিময়ে ক্রিকেটের প্রতি চিন্তা দেখাচ্ছে। এটা কলিযুগ। এখানে পালিয়ে যাওয়া লোকেরাও নিজেদের বড়াই করে।’’
কার উদ্দেশে এমন পোস্ট, নাম করেননি গম্ভীর। তবে দর্শক এবং সমর্থকদের মতে, বিরাটকেই পরোক্ষে কথা শুনিয়েছেন লখনউয়ের মেন্টর।
বিরাট-গৌতমের সম্পর্ক এত ‘গম্ভীর’ ছিল না। এক সময় দিল্লির দুই ক্রিকেটারের মধ্যে ছিল সিনিয়র এবং জুনিয়রসুলভ বন্ধুত্ব। এমনকি, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে জিতে গম্ভীর নিজের ম্যাচের সেরার পুরস্কার বিরাটকে দিয়ে দিয়েছিলেন।
তিক্ততার জন্ম আইপিএলের মাঠেই। কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের একটি ম্যাচে ২০১৩ সালে বিরাট এবং গম্ভীরকে প্রথম ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
১০ বছর অতিক্রান্ত। সেই ঝামেলার রেশ এখনও কাটেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দু’জনের সম্পর্ক তিক্ত থেকে হয়েছে তিক্ততর। যখনই তাঁরা মুখোমুখি হয়েছেন, কোনও না কোনও ঝামেলার সাক্ষী থেকেছেন দর্শক।
ছবি: সংগৃহীত।