দিল্লি হয়ে রাজস্থান বেড়াতে যাওয়ার দূরত্ব কমছে। রাজধানী থেকে বাণিজ্য রাজধানী মুম্বইয়ে যাওয়ার দূরত্বও কমে অর্ধেক হচ্ছে। ফলে পর্যটকদের পাশাপাশি এর সুফল পাবেন সাধারণ মানুষও। খুব শিগগিরই সড়কপথে ১২ ঘণ্টায় দিল্লি থেকে মুম্বই পৌঁছনো যাবে। চালু হবে দিল্লি-মুম্বই মহাসড়ক।
মহাসড়কের দিল্লি থেকে রাজস্থানের দৌসা-লালসোট পর্যন্ত অংশটি রবিবার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর ফলে দিল্লি থেকে জয়পুর এ বার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বদলে সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছনো যাবে।
চলতি বছর রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে প্রধানমন্ত্রীর মহাসড়কের এই অংশ উদ্বোধন তাৎপর্যপূর্ণ। বিজেপি নিজেও রাজস্থানের ভোটকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে। তারা এ বার কংগ্রেসের হাত থেকে রাজস্থান ছিনিয়ে নিতে চাইছে। সে কারণেই বার বার রাজস্থান সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার ভোটকে পাখির চোখ করে উদ্বোধন করলেন মহাসড়কের দিল্লি থেকে রাজস্থানের দৌসা-লালসোট পর্যন্ত অংশটি।
দিল্লি থেকে রাজস্থানের দৌসা-লালসোট পর্যন্ত মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২৪৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে চার লেন বিশিষ্ট আড়াই কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল মাত্র ২৪ ঘণ্টায়। এটাও একটা রেকর্ড। ৫০ কিলোমিটার সিঙ্গেল লেন তৈরি করা হয়েছিল মাত্র ১০০ ঘণ্টায়।
আট লেন বিশিষ্ট এই মহাসড়ক ভারতের দীর্ঘতম হতে চলেছে। কাজ শেষের পর এই মহাসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ১,৩৮৬ কিলোমিটার। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই প্রকল্প বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দিল্লি থেকে মুম্বই এখন সড়কপথে দূরত্ব ১,৪২৪ কিলোমিটার। মহাসড়ক তৈরি হলে দূরত্ব কমবে ১২ শতাংশ। তখন দিল্লি থেকে মুম্বই সড়কপথে দূরত্ব হবে ১,২৪২ কিলোমিটার।
মহাসড়ক তৈরি হলে দিল্লি থেকে মুম্বই যেতে সময় বাঁচবে ৫০ শতাংশ। এখন লাগে ২৪ ঘণ্টা। মহাসড়ক তৈরি হলে সময় লাগবে ১২ ঘণ্টা।
ছ’টি রাজ্যের উপর দিয়ে যাবে দিল্লি মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে। দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, মহারাষ্ট্র। কোটা, ইন্দোর, জয়পুর, ভোপাল, বডোদরা, সুরতের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিকে জুড়বে।
দেশের দীর্ঘতম মহাসড়কের জন্য লাভবান হবে ১৩টি বন্দর, আটটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর, ৮টি মাল্টি নোডাল লজিস্টিক্স পার্ক। এ ছাড়াও জেওয়ার বিমানবন্দর, নভি মুম্বই বিমানবন্দর এবং জেএনপিটি বন্দরের সঙ্গেও যোগাযোগের সুবিধা হবে।
এই মহাসড়ক তৈরি হলে গোটা পশ্চিম ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। পণ্য পরিবহণ অনেক সহজ হয়ে যাবে।
দিল্লি-মুম্বই মহাসড়কে পশুদের পারাপারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোথাও আন্ডারপাস, কোথাও ওভারপাস। ভারত-সহ গোটা এশিয়াতে একমাত্র এই মহাসড়কেই এই সুবিধা রয়েছে। এটি রণথম্বোর বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ ছুঁয়ে যাবে। সেখানকার পশুদের যাতে সমস্যা না হয়, সে কারণে এই ব্যবস্থা।
কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকরী জানিয়েছেন, দিল্লি-মুম্বই মহাসড়ক প্রকল্পে কাজ করছেন ৪,০০০ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। এটি নির্মাণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ২৫ লক্ষ টন পিচ (বিটুমেন)।
প্রধানমন্ত্রী দফতর জানিয়েছে, এর মধ্যে দিল্লি-দৌসার মধ্যে ২৪৬ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে প্রায় ১২ হাজার ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ফলে কিলোমিটার প্রতি খরচ পড়েছে ৪৯ কোটিরও বেশি, চালু বাজারদরের প্রায় দ্বিগুণ।