২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস। সেই প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবর ছড়াতে শুরু করল। ঘটনাস্থল চিন। তিন বছর পার। আবার সেই ডিসেম্বর মাস। বছর শেষের মুখে নতুন অবতারে আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। ভাইরাসের থাবা আবার সেই চিনে।
ছবি রয়টার্স।
এই তিন বছর ধরে ভারত-সহ বিশ্বের নানা দেশে আছড়ে পড়েছে সংক্রমণের ঢেউ। কিন্তু নতুন করে ড্রাগনের দেশে যে ভাবে করোনা বিস্ফোরণ ঘটছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সকলে।
ফাইল চিত্র।
চিনে সংক্রমণ বৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছে করোনাভাইরাসের প্রজাতি ওমিক্রনের উপরূপ বিএফ.৭। ভাইরাসের এই নয়া উপরূপের ছোবলে চিনের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। হাসপাতালগুলিতে তিলধারণের জায়গা নেই।
ফাইল চিত্র।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চিনে সংক্রমণ শিখরে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সে দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। পড়শি দেশে যে ভাবে করোনার ভয়াবহ ছবি প্রকাশ্যে আসছে, তাতে তৎপর হয়েছে ভারতও।
ফাইল চিত্র।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকেই ভারতে করোনা সংক্রমণ থিতু হয়েছে। বিগত মাসগুলিতে ক্রমশ কমেছে সংক্রমণ। কমেছে মৃত্যুর হারও। যার জেরে স্বস্তি পেয়েছেন দেশবাসী। কিন্তু বছর শেষের আগে আবার চিন্তা বাড়ছে।
ফাইল চিত্র।
চিনের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভারতে যাতে নতুন করে কোভিডের সংক্রমণ না বাড়ে, সে জন্য উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। চিনের পরিস্থিতির উপর সর্বদা নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে দেশবাসীকে মাস্ক পরার জন্য আর্জি রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে করোনা পরীক্ষায় জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আক্রান্তদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করার কথাও বলেছেন।
ফাইল চিত্র।
চিনে যখন করোনার নতুন ঢেউ আছড়ে পড়েছে, তখন ভারতেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে করোনার এই নয়া উপরূপ। এ দেশেও এই নয়া উপরূপে সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মোট ৪ জন করোনার নয়া উপরূপে সংক্রমিত হয়েছেন।
ফাইল চিত্র।
ওই ৪ জনের মধ্যে ২ জন করে ওড়িশা ও গুজরাতের বাসিন্দা। তবে বর্তমানে তাঁরা সকলেই সুস্থ রয়েছেন। যে হেতু ভারতে ইতিমধ্যেই করোনার নতুন উপরূপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, তাই সতর্ক রয়েছে রাজ্যগুলি।
ফাইল চিত্র।
বছর শেষের মুখে করোনার নতুন উপরূপের কারণে কি ভারতেও সংক্রমণ বাড়তে পারে? দেশে কি আছড়ে পড়তে পারে সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ? এ নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফাইল চিত্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার নয়া উপরূপ নিয়ে ভারতে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। কারণ এটা অতটাও মারাত্মক চেহারা নেবে না। তবে মাস্ক পরা ও ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
ফাইল চিত্র।
এক ইংরাজি দৈনিককে চিকিৎসক অনুরাগ আগরওয়াল জানিয়েছেন যে, ভারতে একটা বড় জনগোষ্ঠী অতীতে করোনার ওমিক্রন ও ডেল্টা প্রজাতিতে সংক্রমিত হয়েছে। ফলে প্রতিরোধ ক্ষমতা ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি টিকাকরণ করা হয়েছে।
ফাইল চিত্র।
কিন্তু নতুন উপরূপের দাপটে যে ভাবে সংক্রমণের স্ফীতি ঘটছে, তাতে চিনের মতো কোভিড পরিস্থিতি কি ভারতেও হতে পারে? এ ব্যাপারে অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন আইসিএমআরে ‘এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজ’-এর প্রাক্তন প্রধান সমীরণ পাণ্ডা।
ফাইল চিত্র।
তাঁর মতে, নতুন উপরূপ দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা মারাত্মক নয়। সমীরণ বলেছেন, ‘‘ভারতেও ৩-৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। তবে তাঁরা সকলেই সুস্থ হয়েছেন।’’ তবে করোনার নতুন উপরূপ নিয়ে যাতে গুজব না ছড়ানো হয়, সে দিকে সরকারের নজর রাখা দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলেছেন।
ফাইল চিত্র।
ভারতে কি তবে চিনের মতো কোভিড পরিস্থিতি হবে না? এই প্রশ্নের জবাবে পাণ্ডা বলেছেন যে, ভারতে ব্যাপক ভাবে টিকাকরণ হয়েছে। যার জেরে একটা বড় জনগোষ্ঠীর মধ্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাই সংক্রমণের ভয়াবহতার ঝুঁকি কম। ফলে চিনের মতো পরিস্থিতি হবে না ভারতে।
ফাইল চিত্র।
তবে চিনে যে ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে,সেই পরিস্থিতির দিকে সর্বদা নজর রাখা দরকার। পাশাপাশি ভারতে করোনায় যাঁরা নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদেরও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাঁরা টিকার বুস্টার ডোজ নেননি, তাঁদের তা নেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
ফাইল চিত্র।
এমসের প্রাক্তন ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া জানিয়েছেন যে, নতুন উপরূপের কারণে সংক্রমণ হয়তো ছড়াবে কিন্তু ভয়াবহতা থাকবে না। মৃত্যুর হার কম হবে। অর্থাৎ, খারাপ পরিস্থিতি হবে না বলেই আশা। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে, ভারতীয়দের একটা বড় অংশের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে।
ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয় জানিয়েছেন যে, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। তবে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে।
ফাইল চিত্র।
করোনার নতুন উপরূপের কারণে সংক্রমণ ঠেকাতে টিকাকরণে জোর দিয়েছে সরকার। শুক্রবার ভারত বায়োটেকের নাকে নেওয়ার প্রতিষেধককে (ন্যাজাল ভ্যাকসিন) ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকেই টিকাকরণ কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে এই টিকা।
ফাইল চিত্র।
টিকার চতুর্থ ডোজ নেওয়া কি প্রয়োজন? এই প্রসঙ্গে গুলেরিয়া জানিয়েছেন যে, এ ব্যাপারে আরও খতিয়ে দেখা জরুরি। যাঁরা ইতিমধ্যেই বুস্টার ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন করে এখনই টিকা নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তবে বর্তমানে কাছে যে প্রতিষেধকগুলি রয়েছে, সেগুলি নিয়ে আরও গবেষণা চালাতে হবে। নতুন করে আর কোনও টিকার প্রয়োজন রয়েছে কি না, সে নিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে।
ফাইল চিত্র।
করোনার নতুন উপরূপে ভারতে আতঙ্কের কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে নতুন করে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়, সে কারণে মাস্ক পরা বা ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। সকলে যদি সচেতন থাকেন, তা হলেই হয়তো ভাইরাস নামক শত্রুকে পরাস্ত করা সম্ভব।
সতর্কতামূলক পদক্ষেপ শনিবার থেকেই টের পাওয়া গিয়েছে। চিনে করোনা বিস্ফোরণের আবহে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা শুরু হল দিল্লি বিমানবন্দরে। শনিবার থেকে এই ছবি দেখা গিয়েছে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিদেশফেরত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দেশের আরও কয়েকটি বিমানবন্দরেও।