জ়াইরা ওয়াসিমদের পথে হাঁটলেন আরও এক অভিনেত্রী। এ বার রুপোলি পর্দা থেকে বিদায় নিলেন তেলুগু এবং ভোজপুরি সিনেমার জনপ্রিয় মুখ সহর অফশা। জানালেন, ইসলামের টানে গ্ল্যামার-জগৎ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন।
২২ সেপ্টেম্বর ইনস্টাগ্রামে নিজের অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন সহর। তাতে নিজের এই সিদ্ধান্তের কারণ জানিয়েছেন তিনি। সহর লিখেছেন, ‘‘আল্লার শরণাপন্ন হতে এবং তাঁর ক্ষমাপ্রাপ্তির জন্য শোবিজ়ের জীবন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
সহরই অবশ্য প্রথম অভিনেত্রী নন যিনি ‘ধর্মীয় কারণে’ গ্ল্যামার-দুনিয়া থেকে সরে গিয়েছেন। এর আগে ‘দঙ্গল’-কন্যা জ়াইরা ওয়াসিম অথবা ‘জয় হো’-র অভিনেত্রী সানা খানও একই পথে হেঁটেছেন।
২০১৬ সালের আমির খানের ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘দঙ্গল’-এ অভিষেকেই হইটই ফেলে দিয়েছিলেন জ়াইরা ওয়াসিম। ওই ছবির দৌলতে পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার-সহ বহু অ্যাওয়ার্ড। তার পরের তিন বছরে মোটে দু’টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ‘সিক্রেট সুপারস্টার’ এবং ‘দ্য স্কাই ইজ় পিঙ্ক’।
সহরের এই সিদ্ধান্তের বেশ কয়েক বছর আগে ২০১৯ সালে সোনালি বসুর ‘দ্য স্কাই ইজ় পিঙ্ক’ করার পর আচমকাই বলিউডি পর্দা থেকে গায়েব হয়ে যান জ়াইরা। সে বছরই জানিয়ে দেন, বলিউডে অভিনয়ের সময় তাঁর মানসিক শান্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সব ছেড়েছুড়ে তাই ইসলাম ধর্মের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।
অভিনয় ছাড়ার আগে এবং পরে অবশ্য কাশ্মীরিদের হয়ে বার বার সরব হয়েছেন জ়াইরা। দাবি করেছেন, উপত্যকার বাসিন্দাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। এমনকি, কর্নাটকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব-বিতর্ক নিয়েও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুখ খুলেছিলেন। সমাজমাধ্যমে দাবি করেছিলেন, ‘‘ইসলামে হিজাব ঐচ্ছিক নয়, তা বাধ্যতামূলক।’’ তা নিয়েও একপ্রস্ত বিতর্ক হয়েছিল।
২১ বছরের জ়াইরার মতোই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সানা খান। হিন্দি সিনেমা হোক বা টেলিভিশন, দুই ক্ষেত্রেই সমান স্বচ্ছন্দে কাজ করেছেন ৩৪ বছরের এই অভিনেত্রী। তবে ২০২০ সালে সে সব থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
হিন্দি, তামিল, তেলুগু মিলিয়ে মোট ৫টি ভাষার সিনেমার সঙ্গে টেলিভিশনের পর্দা এবং বিজ্ঞাপনে কাজ করার পর আচমকাই সানা জানিয়ে দেন, এ সবে ইতি টানছেন।
গ্ল্যামার-দুনিয়া ছাড়ার কারণ কী? সলমন খান, তব্বু, সুনীল শেঠির সঙ্গে ‘জয় হো’-তে মুখে দেখানো সানা লিখেছিলেন, ‘‘মানবতার সেবা করতে এবং সৃষ্টিকর্তার আদেশ পালনের জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’’
এ দেশের জ়াইরা বা সহরের মতো অভিনেত্রীরাই শুধু নন, পড়শি দেশ পাকিস্তানেও বহু তারকা এমন করেছেন। চলতি মাসেই পাকিস্তানের গায়ক আব্দুল্লা কুরেশিও একই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুরাগীদের চমকে দিয়েছিলেন।
সহরের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার বহু আগে ২০২১ সালে রিয়্যালিটি শো ‘রোডিজ় রেভোলিউশন’-খ্যাত মডেল-অভিনেতা সাকিব খানও ধর্মীয় কারণে গ্ল্যামার-জগৎ থেকে বিদায় নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
জ়াইরাদের মতোই বড় পর্দা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভক্তদের উদ্দেশে সহর লিখেছেন, ‘‘শোবিজ় থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এতে আর কোনও ভাবেই জড়িত থাকব না। ভবিষ্যৎ জীবন ইসলামের শিক্ষা এবং আল্লার আশীর্বাদে কাটাতে চাই।’’
বিনোদন দুনিয়ায় যাত্রাপথের কথাও মনে পড়েছে সহরের। লিখেছেন, ‘‘এই ইন্ডাস্ট্রিতে আচমকাই এসে পড়েছিলাম। এবং এখানে উচ্চতায় উঠতে শুরু করেছিলাম। তবে এখন মনে হয়, এই জীবন আমার জন্য নয়।’’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সহরকে সমর্থন জানিয়েছেন সানা।
সহর লিখেছেন, ‘‘অনুরাগীদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ যে, তাঁরা আমার উপর তাঁদের আশীর্বাদ দিয়েছেন। আমাকে খ্যাতি, সম্মান এবং সৌভাগ্যে ভরিয়ে দিয়েছেন আপনারা। এমনটা যে হবে তা ছোটবেলায় ভাবিনি।’’
গত কয়েক বছর ধরে রুপোলি পর্দায় জমিয়ে কাজ করেছেন সহর। বলিউডে তাঁকে দেখা না গেলেও তেলুগু এবং ভোজপুরি সিনেমার দর্শকদের মজিয়ে রেছেছিলেন বেঙ্গালুরুর এই বাসিন্দা।
২০১৮ সালে তেলুগু ছবি ‘কর্তা কর্ম ক্রিয়া’-য় অভিষেক করেছিলেন সহর। তার পর অবশ্য ভোজপুরি ইন্ডাস্ট্রির দিকে পা বাড়ান। ভোজপুরি সিনেমার খ্যাতনামী অভিনেতা পবন সিংহ থেকে খেসারিলাল যাদব— সকলেই সঙ্গেই সমান স্বচ্ছন্দ ছিলেন।
২০২০ সালে সহরের ভোজপুরি ছবি ‘মেহন্দি লাগা কে রাখনা ৩’ তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। খেসারির সঙ্গে তাঁর রসায়ন নজর কেড়েছিল দর্শকদের। সে বছরই অ্যাকশন-ড্রামা ‘ঘাতক’-এ পবনের পাশে ছিলেন সহর।
সিনেমার পর্দার মতো সমাজমাধ্যমেও কম জনপ্রিয় নন তিনি। ইউটিউবে ‘ব্যায়সে তো তেরি ইয়াদ’ গানের ভিডিয়োতেও মাতিয়েছিলেন সহর। তবে আপাতত সে সব ছেড়ে অন্য পথে পা বাড়িয়েছেন তিনি।