তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। যৌনচক্র চালিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্ল্যাকমেল এবং লাখ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন ওড়িশার ‘সিরিয়াল ব্ল্যাকমেলার’ অর্চনা নাগ। তাঁকে নিয়ে তোলপাড় ওড়িশার রাজ্য রাজনীতি। তাঁর সম্পর্কে উঠে আসছে একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য।
ওড়িশার এক সংবাদমাধ্যম ‘প্রমেয়ানিউজ ডট কম’-এ দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে উটিতে এক বিধায়কের সঙ্গে গিয়েছিলেন অর্চনা। যা নিয়ে ওড়িশার রাজনীতির অন্দরে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, অর্চনার মোবাইল ফোন এবং তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া হার্ড ডিস্ক পরীক্ষা করে ওই বিধায়কের সঙ্গে বেশি কিছু ছবি এবং হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন পাওয়া গিয়েছে।
সূত্রের খবর, ওই বিধায়ক বিশাখাপত্তনম হয়ে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। সেখানে বিমানবন্দরে অর্চনার সঙ্গে নিজস্বী তোলেন। তার পর তাঁরা একসঙ্গে মাইসুরুতে যান। এবং উটিতে রাত কাটান।
পুলিশ সূত্রে খবর, অর্চনা ওই বিধায়ককে তাঁর গাড়ি পুড়িয়ে ফেলতে বলেছিলেন। অর্চনা মানসিক বিকারগ্রস্ত, এমনটাও বলেছিলেন বিধায়ক।
পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, এর আগেও ওই বিধায়কের একটি গাড়ি ভুবনেশ্বরে এবং আর একটি গাড়ি তাঁর বিধানসভা এলাকায় পুড়িয়ে দিয়েছিলেন অর্চনা।
অর্চনাই ওই বিধায়ককে ভ্রমণে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এমনকি সঙ্গ দিতেও তিনি রাজি, বিধায়ককে অর্চনা এমন প্রস্তাবও দিয়েছিলেন পুলিশের একটি সূত্রের দাবি।
উটিতে যে হোটেলে বিধায়ক এবং অর্চনা উঠেছিলেন, সেই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজও অর্চনার কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
ওড়িশার একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, নয়াগড়ের একটি সরকারি অতিথিনিবাসে ওই বিধায়কের সঙ্গে অর্চনা এবং আরও দুই মহিলা চার দিন কাটিয়েছিলেন।
ওই সংবাদমাধ্যমে আরও দাবি করা হয়েছে, অর্চনাকে একটি বিলাসবহুল গাড়িও উপহার দিয়েছিলেন ওই বিধায়ক।
গত ৬ অক্টোবর অর্চনাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার পর থেকে তাঁর ঠিকানা ভুবনেশ্বরের ঝড়পাড়ার বিশেষ জেল।
ওড়িশার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, অর্চনার যৌনচক্রের ফাঁদে পড়েছেন ওড়িশার ২৫ জন রাজনীতিক। তাঁদের মধ্যে ১৮ জন বিধায়ক এবং দুই মন্ত্রীও রয়েছেন। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠেছেন অর্চনা। কালাহান্ডিতে স্কুলজীবন শেষের পর ভুবনেশ্বরে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে চলে আসেন। এখান থেকেই তাঁর জীবন ভিন্ন খাতে বইতে শুরু করে। কালাহান্ডির একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠা আসা অর্চনা সহজে টাকা উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে শুরু করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ধনী এবং প্রভাবশালীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন অর্চনা। তার পর তাঁদের কখনও নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দিতেন। শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তিদের চাহিদা মতো মহিলাও সরবরাহ করতেন।
শুধু মহিলা সরবরাহ করাই নয়, নিজেও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মোবাইলে ঘনিষ্ঠ কথাবার্তা, বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সেই ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিয়ো করতেন তাঁর স্বামী জগবন্ধু। তার পর সেই ছবি এবং ভিডিয়ো দেখিয়ে প্রভাবশালীদের ব্ল্যাকমেল করে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন।
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ওড়িশার ৫০ জন খ্যাতনামী ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন অর্চনা। তাঁদের মধুচক্রের শিকার বানিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতানোর পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
সময় যত গড়িয়েছে, অর্চনার জীবনযাপনের ধারাও বদলেছে। বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছেন। ভুবনেশ্বরে ৩ কোটি টাকার প্রাসাদোপম বাংলো, নাখারার কাছে একটি সুবিশাল ফার্মহাউস রয়েছে তাঁর।
আপাতত জেলেই দিন গুজরান হচ্ছে। সেখানে টিভি এবং সংবাদপত্রে নিজের সম্পর্কের খবরে নজর রাখছেন বলে জেল সূত্রে খবর।