বিতর্কের মুখে পড়েছেন আধ্যাত্মিক বক্তা তথা গায়িকা জয়া কিশোরী। যিনি সাধারণ জীবনযাপন, আধ্যাত্মিকতা এবং অ-বস্তুবাদ নিয়ে মানুষকে পথ দেখান, তিনি কী করে দু’লাখি বিদেশি ব্যাগ ব্যবহার করেন? আপাতত এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে মানুষের মুখে মুখে।
বিতর্কের সূত্রপাত সোমবার। বিমানবন্দরে বিখ্যাত ফরাসি প্রসাধনী সংস্থা ‘ডায়োর’-এর ব্যাগ হাতে ক্যামেরাবন্দি হন জয়া।
অনেক খোঁজখবর করে নেটাগরিকেরা দেখেন, অনুপ্রেরণামূলক আধ্যাত্মিক বক্তার হাতে যে ব্যাগটি দেখা যাচ্ছে, সেটির দাম দু’লক্ষ টাকারও বেশি।
তার পরেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। সমাজমাধ্যমে ট্রোল করা শুরু হয়েছে তাঁকে নিয়ে। নেটাগরিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, মানুষকে সাধারণ জীবনদর্শন এবং অনাড়ম্বর জীবনযাপন নিয়ে পরামর্শ দেওয়া মানুষ নিজে কী করে এত দামি ব্যাগ ব্যবহার করছেন।
১৯৯৬ সালের ১৩ জুলাই এক রাজস্থানি পরিবারে জয়ার জন্ম। তাঁর বাবা শিবশঙ্কর শর্মা এবং মা গীতা দেবী।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ বছর বয়সি অনুপ্রেরণামূলক বক্তা জয়া কলকাতার মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি বাণিজ্যে স্নাতক হন।
কম বয়স থেকেই আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় জয়ার। আধ্যাত্মিক বক্তা এবং গায়িকা হিসাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।
জনপ্রিয়তা অর্জন করে তাঁর প্রবচনের অনুষ্ঠানও। খুব শীঘ্রই ‘আধুনিক বিশ্বের মীরা’ এবং ‘কিশোরীজি’ নামে পরিচিত হয়ে যান জয়া।
শ্রীকৃষ্ণের ভক্তিকথা এবং জয়ার গান শোনার জন্য তাঁর প্রবচনে বহু মানুষের সমাগম হয়। ইউটিউবেও তাঁর ভিডিয়ো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
২০২১ সালের ২৪ জুলাইয়ে ‘জয়া কিশোরী মোটিভেশন’ নামে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল শুরু করেন জয়া। সেই চ্যানেলের অনুরাগীদের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ। ইনস্টাগ্রামে অনুরাগী এক কোটিরও বেশি।
তবে সম্প্রতি দামি ব্যাগ নিয়ে ক্যামেরাবন্দি হওয়ার পরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাঁকে নিয়ে।
যদিও এ সব সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছেন জয়া। জানিয়েছেন, তিনি কাউকে কিছু ত্যাগ করতে বলেননি।
জয়া বলেছেন, ‘‘আমি নিজে কিছু ত্যাগ করিনি, তা হলে আমি কী ভাবে কাউকে তা করতে বলব? আমি প্রথম দিন থেকেই স্পষ্ট করেছি যে, আমি কোনও সাধু বা সাধ্বী নই।’’
সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে ওই আধ্যাত্মিক বক্তা বলেছেন, ‘‘আমি এক জন সাধারণ মেয়ে। সাধারণ ঘরে থাকি, পরিবারের সঙ্গে থাকি। আমি যুবসমাজকে কঠোর পরিশ্রম করার কথা বলি। অর্থ উপার্জন করে নিজের এবং পরিবারকে ভাল জীবন দেওয়ার কথা বলি। স্বপ্নপূরণের পরামর্শ দিই।’’
জয়া আরও দাবি করেছেন, তাঁর ‘ডিয়োর’ ব্যাগটি মূল্যবান হলেও তাতে কোনও চামড়া ব্যবহার করা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাগটি কাস্টমাইজ়ড। এতে কোনও চামড়া নেই এবং কাস্টমাইজ় করা মানে আপনি নিজের পছন্দমতো তা তৈরি করাতে পারেন। তাই আমার নামও ব্যাগে লেখা আছে। আমি কখনও চামড়ার ব্যাগ ব্যবহার করিনি, করবও না।’’
জয়া আরও বলেছেন, ‘‘আমার প্রবচনের অনুষ্ঠানে যাঁরা এসেছেন তাঁরা ভাল করেই জানেন যে, আমি কখনওই বলি না যে সব কিছুই ‘মোহমায়া’। এ-ও বলি না যে অর্থ উপার্জন করবেন না বা সব কিছু ত্যাগ করুন।’’
সব ছবি: সংগৃহীত।